অদ্ভুত উনি - bhuapurnews24

অদ্ভুত উনি গল্পের লিঙ্ক || Mim Islam

অদ্ভুত উনি

অদ্ভুত উনি পর্ব ১
Mim Islam

আমি দিয়ানাকে ভালোবাসি।
বাসর রাতে সদ্য বিয়ে করা স্বামীর মুখ হতে এমন বানী শুনে থমকে গেলাম আমি।মানি কি বলছে সে?আমার বড় বোন দিয়ানা আপুকে?আমি কল্পনাতেও ভাবিনি আমার বাসর রাতে এমন কিছুর সমুক্ষিন হতে হবে।
বিছানার মাঝে বসে ছিলাম এতক্ষন তার অপেক্ষায় এক ঝটকায় ঘোমটা তুলে ফেললাম।এত পরিমানের অবাক হচ্ছি আমি রাগ কিভাবে হবো বুঝে উঠতে পারছিনা।রিহান শেরওয়ানির বোতাম খুলতে খুলতে বলল,

-আমার থেকে কখনো কোন স্ত্রীর মর্যাদা তুমি পাবে না।
সব যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।আমি সব গুলিয়ে ফেলছি এইসব কি বলে যাচ্ছে রিহান?সবে মাত্র কবুল পরে আমাদের বিয়ে হলো সেকি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে নাকি?লেহেঙ্গা উচু করে বিছানা থেকে নেমে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

-মানি কি বলছেন আপনি?
আমাকে এড়িয়ে সামনে যেতে যেতে বলল,
-যা শুনতে পাচ্ছো তাই বলছি আর আমি কোন রহস্য রাখতে চাইনা তাই সবটা ক্লিয়ার করে দিলাম।

বলেই ড্যাংড্যাং করে ওয়াশ্রুমে চলে গেল।আমি শুধু তার কর্মকাণ্ড গুলো দেখলাম রাগে পুরো মাথা ধরে গেছে আমার।বিয়ে কি কোন ছেলেখেলা নাকি?বিয়ে করলো একজনকে ভালোবাসবে তারই বোনকে?বোনকেই যেহেতু ভালোবাসতো আমার সাথে কেন বিয়ে করেছে?আর সবটা ক্লিয়ার না করেই চলে গেল।আমার এত পরিমানে রাগ লাগছে বলার বাহিরে।আর দিয়ানা কেমন বোন?

একটা বার বলতো এইটা ওর আশিক না সে কেন বলবে আশিককে সামনে থেকে দেখার সুযুগ যে পাচ্ছে।মন চাইছে দুজনের একসাথেই মাথা ফাটিয়ে ফেলতে।
আমার ভাবনার ঠিক মাঝে দরজা খুলার শব্দ ভেসে উঠলো ঘুরে সেদিকে তাকালাম।একদম টি-শার্ট আর টাউজারে এসে হাজির জনাব।আমাকে এতবড় সংবাদ শুনিয়ে সে আরামে ফ্রেশ হলো আমার আরাম কেড়ে নিয়ে?আমিও রাগের মাথায় তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

-আপনি কেন এমনটা করলেন?
রিহান পুনরায় আমাকে এড়িয়ে চলে গেল।এইবার মিজাজ সপ্তম আসমানে পৌছে গেল একেতো এতবড় কান্ড রটিয়েছে তার উপর আবার এড়িয়ে চলা?সব কিছুর ঠিকঠাক জবাব ও করছে না।আবারো জিজ্ঞেস করলাম।

-আপুকেই যেহেতু ভালোবাসতেন আমাকে কেন মাঝ দিয়ে বিয়ে করলেন?
-সেটা তোমাকে বলা জরুরি মনে করিনা।

বলে বিছানায় ঘুমুতে গেলে এক চিৎকার করে উঠলাম।রিহান সাথে সাথে আতকে পিছে ফিরে তাকালো এই মুহুর্তে হয়তো আমার চিৎকার সে মোটেও আশা করেনি।চোখ দুটো ছোট ছোট করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আমি ভাবলাম চিৎকারের কারন জিজ্ঞেস করবে কিন্তু নাহ সে পুনরায় তার কাজ করাই শুরু করলো।আমি কিছু বলতে যাবো আমার বলার আগেই হাত উচু করে নিজেই বলা শুরু করলো,

-এখন যদি সিরিয়ালের মতো করে বলো আমরা একিই বিছানায় ঘুমাবো না তাহলে তুমি সোফায় ঘুমাতে পারো।
আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি তার বলা কথায় বডি স্টাইলে এত কামলি কিভাবে এতকিছু বলে দিতে পারে একটা মানুষ?আমার ধারনার সম্পুর্ন বাহিরে উনি।আমি ঠাই সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম একটুও নড়লাম না দেখি কিভাবে ঘুমায়।কাত হতে হতে আমাকে এইখানেই দেখে বলল,

-আর যদি বিছানায় ঘুমুতে চাও ঘুমাও আই ডোন্ট মাইন্ড।
বলেই ঘুম।বড়ই অদ্ভুত তো উনি কি বলছে কি করছে আদো কি সে জানে?আজ আমাদের ফাস্ট নাইট একটা মেয়ের ফাস্ট নাইট নিয়ে কত কল্পনা-জল্পনা থাকে কিন্তু এই অদ্ভুত উনি সব মাটি করে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
তার পাশ দিয়েই এক সাইডে ঘুমিয়ে পরলাম।

কানের কাছে কিচিরমিচির আওয়াজে এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠলাম।এমনভাবে উঠায় শ্বাস উঠানামা করতে লাগলো বুক প্রচন্ড প্রকারের কাপতে শুরু করলো।কটমট চোখে পাশ ফিরে তাকালাম রিহান ফোন রেখে ওয়াশ্রুমে যেতে যেতে বলল,

-নতুন বউ তুমি তাড়াতাড়ি উঠতে হয় আর একটু পরেই হাজির হবে তারা।
ফোনের এলার্ম লাগিয়েই ঘুমিয়েছিলাম তার দরকার ছিল না এইসব করার।সকাল সকাল তার কান্ডে আরো একদফা বিরক্তি ঝেকে বসলো।রিহান ফ্রেশ হয়ে এসে আমার কাছে দাড়ালো।আমি প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

-বিছানা ছেড়ে উঠতে জাগিয়েছি বসে থাকতে না।
-ওয়াশ্রুমে তো আপনি ছিলেন আমি কোথায় যাবো?

তার মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে বললাম।রিহান আমার কথায় আর কিছু না বলে চুপচাপ সরে দাড়ালো।আমি ভেংচি কেটে সামনে এগুলাম তাকে তো আমার সব কিছুই জিজ্ঞেস করতে হবে সবটা ক্লিয়ার করতে হবে না হয় আমার মাথা বন্ধই হয়ে থাকবে আর সে এমন অদ্ভুত কেন?

রহস্য রাখতে চায়না কিন্তু সবটা বলতেও চায়না।চাইছেটা কি সে?তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব ভাবতে ভাবতে হাটছিলাম ঠুস করে হোচট খেয়ে গেলাম শীতের দিনে হোচট খাওয়া মানি জীবন অর্ধেক শেষ।মুখ হতে মৃদু শব্দ বের হলো পায়ে হাত দিয়ে বসে পরলাম নিচে।খুব জোড়ে লেগেছে আমি মরেই যাচ্ছি প্রায়।

মেহার চিৎকার শুনে রিহান চট জলদি পিছে ফিরে তাকালো।মেহাকে নিচে পরা দেখে দ্রুত তার কাছে এগিয়ে গেল তার কাছে বসে দেখতে লাগলো কি হয়েছে!মেহাতো পায়ের মধ্যে হাত দিয়ে ঝুকে বসেই আছে রিহান দেখতে চাইলেও দেখতে দিচ্ছে না।

হুট করেই রিহান মেহাকে কোলে তুলে নিল বসা থেকে মেহা অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো।পায়ের ব্যাথা যেন ভুলে রিহানের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো।রিহান বিছানায় সুন্দরভাবে বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসলো।পায়ের কাছে হাত বারাতেই মেহা দূরে সরিয়ে নিল পা।

-পায়ে হাত দিবেন না।
রিহান হাত সরিয়ে নিল।উঠে ড্রয়ার থেকে ব্যাথার স্প্রে নিয়ে বসলো।
-এতও লাগেনি স্প্রে করতে হবেনা,
-সারাদিন ব্যাথা করবে,
-আমার টেনশন না করলেও চলবে,

বলেই উঠে দাড়ালাম।ভালোবাসে আমারই বড় বোনকে আর নাটক সাজাচ্ছে আমার সাথে পেয়েছেটাকি সে!!
ওয়াশ্রুমের দিকে গিয়েও পা আটকে গেল গেটের সামনে থেকে ফিরে তাকালাম।ভ্রু কুচকে রিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-আচ্ছা আপনি কাল যা বলেছিলেন তা কি আদো সত্য ছিল?
আমার যেন বিশ্বাস করা দায় হয়ে পরেছে সেকি আসলেই ভালোবাসে নাকি কাল ঠাট্টা করেছিল?আমার কথার উওরে রিহান আমার দিকে নজর ফিরালো।কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কড়া নাড়ালো।রিহান আমার দুজনেরই নজর সেদিকে গেল রিহান আমার দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে দরজা খুলতে গেল।

রিহানের আম্মা এসেছেন লেহেঙ্গা দিতে আমাকে কালকের ড্রেসে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালেন।তার এই তাকানো আমি ঠিক বুঝলাম না নিজের দিকে একবার তাকালাম।রিহানের আম্মা আমার কাছে এসে বলল,
-সেকি তুমি এখনো ড্রেস চেঞ্জ করোনি?
কি উত্তর করবো ভেবে পাচ্ছিনা।মাথা নিচু করে হাত ডলতে লাগলাম কিছু বলতে যাবো তার আগেই রিহান বলে উঠলো,

-পায়ে ব্যাথা পেয়েছে এখন যাবে।
-সেকি কিভাবে?কখন?দেখি?
রিহানের আম্মা উত্তেজিত হয়ে পরলো ব্যাথার কথা শুনে।আমার কাছে এসে পা ধরতেই আমি দু-কদম পিছিয়ে গেলাম।

-নাহ নাহ আন্টি বেশি লাগেনি,
রিহানের আম্মা চিন্তিত স্বরে বললেন,
-ঠিকঠাক চলাফেরা করতে পারো না?একটু দেখেশুনে চলাফেরা করবে এখন থেকে।
আমি মাথা ঝাকালাম।এমন শ্বাশুড়ি পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার যা সবার কপালে জুটে না।শ্বাশুড়ির মতো যদি এত কেয়ার করা জামাই ও পেতাম?আমার জীবনটাই অন্য হতো কিন্তু না বোনের আশিককে নিয়ে ঝুলতে হচ্ছে।

রিহান মেহা স্টেজে বসে আছে।মেহার পরিবার সবেমাত্র হাজির হলো দিয়ানা বোনের কাছে এসে দাড়ালো কোলে তার দু বছরের ছেলে ইফতি।মেহা ইফতিকে কোলে বসালো তার সাথে কথা বলতে লাগলো আড়চোখে রিহানের দিকে তাকালো সামনে দাড়ানো দিয়ানাকে দেখে তার কি রিয়েকশন হতে পারে?

রিহান দিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে তার পাশে দিয়ানার বসার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যক্রমে বসে আছে অন্য কেউ।দিয়ানা যেন চাইছেই না রিহানের দিকে তাকাতে সে চেষ্টা করেছিল বিয়ে আটকানোর কিন্তু পেরে উঠেনি।রিহানের নজর যেন দিয়ানাকে আনইজি ফিল করাচ্ছে মেহার কোল থেকে ইফতিকে নিয়ে সে নিচে নামলো।

রিহান এখনো দিয়ানার দিকে তাকিয়ে রইলো।সাথে বসা মেহা নিজের স্বামীকে নিজেরই বোনের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনেক খারাপ লাগলো আর মনে মনে অনেক রাগান্বিত হলো।মন চাইছে এই বিয়ে সাদির ঢং ছুড়ে ফেলে দিতে।

অদ্ভুত উনি পর্ব ২