ছন্দময় সংসার - bhuapurnews24.com

ছন্দময় সংসার পর্ব ৩

ছন্দময় সংসার

ছন্দময় সংসার পর্ব ৩
মারিয়া রশিদ

–” বাবা- মা এসেছেন। আশা করবো,, ওনারা যে কয়দিন আছে সে কয়দিন আমাদের মাঝে কোনো কথা কাটাকাটি না হোক।”
তরির পেছনে দাড়িয়ে কথাটা বলে ওঠে কুশান। তরি কাপড় গুছিয়ে রাখছিলো। তার মাঝে এমন কথা শুনে হাত থেমে যায় তরির। মায়া চৌধুরী,, শিশির,, জিহাদ চৌধুরী,, কুহু সবাই একটু আশেপাশে ঘুরতে বেরিয়েছে। তরির কাজ থাকায় যায় নি,, আর কুশান অফিসের কিছু কাজও করে নিয়েছে,, তাই আর যায় নি।

তরি কাজ থামিয়ে দিয়ে কুশানের দিকে ফিরে তাকায়। কুশান তরির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তরি চোখটা অন্যদিকে সরিয়ে বলে ওঠে,
–” এইটা তোমার না বললেও চলতো,, তাছাড়া দুইদিন পর যখন আমাদের ডিভোর্স হবে,, তখন কি ওনারা জানবেন না?”
কুশান হালকা রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কি বলছো তুমি এইসব? আমাকে বার বার এই কথা বলার মানে কি?”
তরি ছলছল চোখ নিয়ে বলে ওঠে,

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

–” কারন,, কথাটা তুমি নিজেই বলেছো। আসলে,, আমাদের সংসার তো আর আগের মতো নেই,, অনেক ঝামেলা ঢুকে গেছে,, আর এতো টাই ঝামেলা ঢুকেছে যে,, তুমি ডিভোর্স পর্যন্ত চলে গেছো।”
কুশান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নেয়। তারপর বলে ওঠে,
–” আসলেই তোমার সাথে আমার আর সংসার করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। অনেক দুরত্ব চলে এসেছে,, আমাদের মাঝে।”
কথাটাহ বলেই কুশান চলে যায়। তরি ফুপিয়ে কান্না করে উঠে।

চারিদিকে রাত হয়ে গেছে। সবার রাতের খাওয়া দাওয়াও শেষ। তরি ডাইনিং টেবিলটা গুছিয়ে নিচ্ছে। এমন সময় মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” বৌমা!”
তরি কাজ থামিয়ে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি! মা! কিছু লাগবে?”
–” না! অনেক রাত হইয়া গেছে। আর কি কাম বাকি আছে,, আমারেও কউ,, আমিও কইরা দেই। তাইলে তাড়াতাড়ি শুইয়া পড়তে পারবা।”

–” না! মা! আমার হয়ে গেছে। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।”
–” সত্য?”
–” জি মা!”
–” আইচ্ছা!”
মায়া চৌধুরী চলে যায়। তরি সব কিছু গুছিয়ে নিজের রুমে এসে দেখে শিশিরকে বুকে নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে কুশান। শিশির কুশানের বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে। তরিকে দেখে কুশান শিশিরকে কোলে নিয়ে উঠে দাড়ায়। তরি তাড়াতাড়ি বিছানা ঠিক করে নিয়ে শিশিরকে ভালোভাবে শুইয়ে দেয়।

কুশান বারান্দায় চলে যায়। তরি রুমের লাইটটা অফ করে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। এমন সময় কুশানের ফোনে আলো জ্বলে উঠে। কেউ কল দিয়েছে। ফোন সাইলেন্ট থাকায় কোনো শব্দ না হয়ে শুধু আলো জ্বলছে।
তরি এক পলক বারান্দার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকায়। এতো রাতে কে ফোন দিচ্ছে কুশানের ফোনে? তরি এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফোনের উপর “রিমি” নাম টাহ জ্বলজ্বল করছে। কে এই রিমি? কুশানের পি.এ না? এতো রাতে কুশানকে ফোন দিচ্ছে কেন? হয়তো অফিসের কোনো কাজে।

তরি ফোনটা নিয়ে বারান্দায় যায়। আজও আকাশে বেশ বড় একটা চাঁদ উঠেছে। চারিদিকে চাদের আলোয় ভরে আছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ভরে আছে কুশানের শরীর। তরির বেশ ভালোই লাগে কুশানকে চাঁদের আলোয় দেখতে। আবার ফোনের আলো জ্বলে উঠতেই তরির ধ্যান ভাঙে। ফোনটা কুশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে তরি বলে ওঠে,
–” তোমার ফোন এসেছে।”

কুশান তরির দিকে তাকিয়ে দেখে তরি ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এতো রাতে কে ফোন দিলো? কুশান ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। কুশান কি মনে করে যেনো তরির দিকে তাকায়। তরি কুশানের দিকেই শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

তরিকে আজ খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে। শাড়ি পরেছে তরি। কিন্তু,, এতো সৌন্দর্যের কাছে যেতে পারছে না কুশান। নিজেদের মাঝে এই দুরত্বের সুচনাও যেন খুঁজে পায় না কুশান। সত্যিই কি এমন পরিস্থিতি আসবে,, যে দুইজন আলাদা হয়ে যাবে? ভাবতে পারে না কুশান। তরি কিছু সময় কুশানের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায় রুমে।
কুশান তরির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিমির কল দেখে তরি কি কিছু মনে করলো? আর রিমিই বা এতো রাতে কল করেছে কেন? কোনো সমস্যায় পড়লো নাতো? বাধ্য হয়ে হয়তো এতো রাতে কল করেছে তাকে। কুশান রিমিকে কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে রিমি বলে ওঠে,

–” সরি,, স্যার! এতো রাতে আপনাকে কল করার জন্য।”
–” না,, ঠিক আছে! বলো কি হয়েছে? এতো রাতে কল করেছো কেন?”
–” আসলে,, স্যার! আমি নিজেও জানি না,, আপনাকে কেন কল করলাম।”
কুশান কিছুটাহ ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,

–” মানে?”
–” সরি,, স্যার! এতো রাতে আপনাকে কল করার জন্য।”
–” রিমি! তুমি ঠিক আছো?”
–” জি! স্যার!”
–” আমার মনে হচ্ছে না,, তুমি ঠিক আছো। তুমি এখন ঘুমাও,, অনেক রাত হয়েছে। আর শরীর খারাপ থাকলে আগামীকাল অফিসে আসার দরকার নেই।”
–” না! স্যার! আমি ঠিক আছি। সরি স্যার! রাখছি,, গুড নাইট!”
–” গুড নাইট!”

কল কেটে দেয় কুশান। রিমির এমন আচরনের কোনো মানেই বুঝলো না কুশান। তাও,, বেশি ভাবলো না রিমিকে নিয়ে। রুমে এসে ড্রিম লাইটের আলোয় দেখে শিশির মাঝে ঘুমিয়ে আছে,, আর তরি এক পাশে শুয়ে আছে,, ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে,, বোঝা যাচ্ছে না।
কুশান আরও কিছু সময় ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। আর এইদিকে ব্যাপারটা খেয়াল করে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নেয় তরি।

#_৩_দিন_পর_
মায়া চৌধুরী,, জিহাদ চৌধুরী,, কুহু আজ গ্রামে আবার চলে যাচ্ছে। তরি ছলছল চোখে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরও দুইদিন থাকতে বললাম। থাকলে না। কি এমন ক্ষতি হতো,, থাকলে?”
মায়া চৌধুরী হালকা হেসে বলে ওঠে,

–” নারে,, মা! এতো থাকোন যায় নাকি? বাড়িডা খালি পইড়া আছে নাহ? আমি তো শুধু তগো সুখে সংসার খান দেখতে আইছিলাম। তোরা ভালা আছিস,, এতেই আমি খুশি।”
তরি ছলছল চোখে কুশানের দিকে তাকায়। কুশানও তার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। এই মানুষ গুলো কতো বড় একটা ভুল ধারনা নিয়ে সুখি মনে চলে যাচ্ছে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তরির। কোনো ভাবে নিজেকে সামলিয়ে রেখেছে তরি।
কুশান ওদের সবাইকে এগিয়ে দিতে যাচ্ছে। ওরা সবাই শিশিরকে আদর করলো। জিহাদ চৌধুরি এগিয়ে এসে তরির মাথায় হাত রেখে বলে ওঠে,

–” ভালো থাকিস মা! এইভাবেই সুখে সংসার কর।”
এদের বলা প্রতিটা কথা তরির বুকে উথাল-পাথাল সৃষ্টি করছে। চলে গেলো ওরা সবাই। তরিও শিশির কে নিয়ে নিজেদের ফ্লাটে চলে আসে। শিশিরকে খেলনা দিয়ে বসিয়ে নিজের রুমে চলে যায় তরি।
নিজেকে আর সামলাতে পারেনা তরি। জানালার গিরিল ধরে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করে দেয় সে। নিজের কষ্ট টাকে বের করার এক আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তরি।

#_সন্ধ্যা_৭_টা_
কুশান অফিসে কাজ করছে। কাজ প্রায় শেষ আজকের মতো। এমন সময় ফোন বেজে উঠে কুশানের। ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিমির কল। রিমি আজ বিকালেই চলে গেছে অফিস থেকে। তাহলে,, এখন কল দিচ্ছে কেন? আজকাল এই মেয়েটার কর্মকান্ড কুশানকে কিছুটাহ অবাক করে তুলছে। কল টাহ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রিমি বলে ওঠে,

–” হ্যালো! স্যার!”
–” রিমি! তুমি তো বিকালেই চলে গেলে। এখন?”
–” স্যার! আমার আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো।”
–” জরুরি কথা?”
–” জি! স্যার!”
–” ঠিক আছে! বলো,, কি বলবা?”
–” স্যার! আমি আপনার জন্য সাগরিকা ক্যাফেট এরিয়ায় ওয়েট করছি। আপনি এখানে চলে আসুন।”
কুশান কিছুটাহ অবাক হয়ে বলে ওঠে,

–” ওখানে কেন?”
–” প্লিজ! স্যার! না করবেন না। আমি ওয়েট করছি আপনার জন্য। আসুন।”
–” ঠিক আছে! আসছি আমি।”
কল কেটে দেয় কুশান। এই মেয়ে আবার ক্যাফেট এরিয়ায় কেন ডাকছে তাকে? এখন তো না যেয়েও পারবে নাহ,, আবার যেতেও ইচ্ছে করছে না। সব সময় সব কিছু নিজের ইচ্ছের উপর ডিপেন্ড করে না। যেতে হবে এখন তার। কুশান কাজ গুলো গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায় ক্যাফেট এরিয়ার উদ্দেশ্যে।

………………….চারিদিকে বেশ ছিমছাম হালকা আলোয় আলোকিত পরিবেশ। এই ক্যাফেট এরিয়ায় নরমালি কাপেলদের সমাগম বেশি। কয়েকটা টেবিলে কয়েকজন কাপেল বসে আছে। খুব নিরিবিলি আর শান্ত পরিবেশ।
কুশান চারিদিকে তাকিয়ে রিমিকে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায় রিমিকে। এক কর্নারে একটা নীল শাড়ি পরে বেশ সেজেগুজে বসা রয়েছে রিমি। কুশান এগিয়ে যায় রিমির বসে থাকা টেবিলের দিকে।

রিমি কুশানকে দেখে হালকা হাসি দিয়ে দাড়ায়। কুশান আর রিমি অপজিট চেয়ারে বসে। রিমি ওয়েটার কে ডেকে দুইটা কফির অর্ডার দেয়। কুশান কিছু সময় চুপ থেকে বলে ওঠে,
–” রিমি! আমাকে এখানে ডেকেছো কেন? কি জরুরি কথা তোমার?”
রিমি একটু নড়েচড়ে বসে বলে ওঠে,
–” জি! স্যার! বলছি,, আসলে স্যার!”

–” রিমি! তুমি এমোন আমতা আমতা করছো কেন? যা বলবে তাড়াতাড়ি বলো।”
রিমি কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” স্যার! আমি জানি,, আপনাকে এইটা বলা আমার ঠিক হচ্ছে নাহ। আমি অনেক চেষ্টা করেছি,, নিজেকে বোঝানোর। কিন্তু,, আমি পারছি না।”

–” কি হয়েছে রিমি?”
এর মাঝেই ওয়েটার এসে ওদের কফি দিয়ে যায়। রিমি এক কাপ কফি কুশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” স্যার! কফি।”
–” ঠিক আছে! তুমি বলো।”
রিমি কিছু সময় চুপ করে থেকে,, হঠাৎ টেবিলের উপর থাকা কুশানের হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নেয়। কুশান চমকে উঠে রিমির এমন কাজে। অবাক হয়ে তাকায় রিমির দিকে। কুশান নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিমি আরও জোরে চেপে ধরে বলে ওঠে,

–” প্লিজ! স্যার!”
কুশান থেমে যায়। তারপর থম ধরা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” এইসব কি করছো রিমি? আমার হাতটা ছাড়ো।”
–” আমাকে মাফ করবেন স্যার! আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই,, আমি অনেক দিন ধরেই কথাটাহ নিজের মাঝে আকড়ে রেখেছি। কারন,, আমি জানি এইটা অন্যায়,, কিন্তু আমি আর পারছি না। তাই,, আজ আমাকে বলতে হবে।”
কুশান হালক রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,

–” যাহ বলবে বলো,, আর তাড়াতাড়ি বলো,, আর হাতটা ছাড়ো প্লিজ!”
রিমি হাত না ছেড়ে সেই একই ভাবে বলে ওঠে,
–” স্যার! আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
কুশান চমকে তাকায় রিমির দিকে। কুশানের চোখে অবাক মেশানো রাগ ফুটে উঠেছে। জোর খাটিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় কুশান। রিমি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে কুশানের দিকে। কুশান রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” হোয়াট? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো রিমি? তুমি জানো না? আমার স্ত্রী আছে,, আমি বিবাহিত,, আমার একটা সন্তানও আছে।”

রিমি কান্না মেশানো কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমি জানি স্যার! কিন্তু….”
–” তাহলে,, কিভাবে আমাকে এমোন প্রস্তাব দিতে পারো তুমি? লজ্জা লাগলো না তোমার?”
–” স্যার! আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। আমি প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছি,, সেইদিন থেকেই আমি আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি নিজেকে,, কিন্তু আমি পারি নি। আমি পারিনি নিজের অনুভূতিকে আটকিয়ে রাখতে।”

কুশান কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” একটা কথা মন দিয়ে শুনে রাখো রিমি,, আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসি! আমার স্ত্রীই আমার কাছে সব থেকে বেশি রূপবতী। আমি এমোন চরিত্রের ছেলে না,, যে ঘরে বউ রেখে বাইরে পরোকিয়া করে বেড়াবো। আর আমি আমার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট। আমার সন্তানও আমার কাছে আমার নিজের থেকেও বেশি মূল্যবান। সেখানে আমি ওদের ফেলে,, তোমার সাথে এক অবৈধ নোংরা সম্পর্কে জড়াবো,, এইটা স্বপ্নেও ভেবো নাহ।”

রিমি মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে। নিজেকে বড্ড ছোট লাগছে তার নিজের কাছে। কুশান আবার বলে ওঠে,
–” তুমি আমাকে রাত বিরাতে কল করতে,, আমি কিছুই মনে করতাম না। আমি তোমাকে নিয়ে আলাদা কিছু ভাবতামই না। কারন,, আমার প্রতিটা মিনিটের ভাবনা জুড়ে তো আমার স্ত্রী,, আমার সন্তান,, আমার পরিবার রয়েছে। সেখানে আর কারোর জায়গা নেই। আজ যেইটা তুমি করলে,, অনেক বড় অন্যায় করলে। চিন্তা করো না,, আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার পি.এ থেকে অন্য কারোর পি.এ তে ট্রান্সফার করে দিবো।”

রিমি চমকে তাকায় কুশানের দিকে। রিমি থমথমে গলায় বলে ওঠে,
–” কিক কি বলছেন স্যার?”
কুশান কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে,
–” ঠিকই বলছি। আমার মনে হয়,, তোমার সাথে আমার কাজ করা একদম উচিত না। তুমি ভুল করতেছো। আর তাছাড়া,, আমার আশেপাশে থাকলে তোমার অনুভূতি আরও বাড়বে। যেইটা আমি চাই না। তোমার গোটা জীবন পড়ে আছে,, তুমি এখনো অবিবাহিত,, তোমার একটা সুন্দর জীবন পাওনা আছে রিমি! আর এর জন্য,, তোমার আমার থেকে একটু দুরে থাক উচিত। দোয়া করি,, ভালো থাকো তুমি। আসছি,, আল্লাহ হাফিজ!”
কথাগুলো বলে কুশান চলে যায়। রিমির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। নিজেকে অনেক ছোট লাগছে তার।

শিশির ঘুমিয়ে গেছে। তরি একদৃষ্টিতে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে ফুলে আছে তরির,, চুল গুলোও কিছুটাহ উসকো খুসকো। এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজে কিছুটাহ নড়েচড়ে উঠে তরি।
আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলে দিয়ে সামনেই কুশানকে দেখতে পায় তরি। তরির দিকে তাকাতেই কুশানের বুকটা ধুক করে উঠে। কেমন যেন ছন্ন ছাড়া দেখা যাচ্ছে তরিকে। কুশান কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই তরি নিজের রুমে চলে যায়।

কুশান কিছুটাহ অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকে। ওদের মাঝে হাজার রাগারাগি হলেও তরি কখনো এমন করে নাহ। আর চোখ গুলোও কেমন লাল হয়ে ফুলে আছে,, ফর্সা মুখ টাও কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। কি হয়েছে তরির?
কুশান দরজা বন্ধ করে রুমে আসে। তরি আবার আগের জায়গায় বসে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশান এক পলক তরিকে দেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আবার চোখ যায় তরির দিকে। তরিকে এমন লাগছে কেন? কি হয়েছে মেয়েটার? কুশান তরির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,

–” তরি!”
কুশানের ডাকে তার দিকে ফিরে তাকায় তরি। কুশান যেন তরির দৃষ্টিতেও আজ অন্য কোনো কিছুর আভাস পাচ্ছে। একদম শান্ত লাগছে তরির দৃষ্টি। তাও কুশান বলে ওঠে,
–” তোমাকে এমোন দেখা যাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোমার?”
তরি উঠে দাড়ায়। তারপর কুশানের দিকে একটু এগিয়ে এসে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” মি. কুশান চৌধুরী! কোথা থেকে আসলেন আপনি?”
তরির এমন কথার বেশে কিছুটা ভ্রু কুচকায় কুশান। তারপর বলে ওঠে,

–” মানে?”
তরি ছলছল চোখ নিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” মানেটা বুঝতে পারছেন না? আমি বলছি,, ওয়েট।”
কথাটা বলে তরি এগিয়ে গিয়ে নিজের ফোনটা হাতে নেয়। কিছু একটা বের করে তরি ফোনটা কুশানের সামনে এগিয়ে দেয়। কুশান ফোনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠে,, কেঁপে উঠে কিছুটা। কারন,, তরির ফোন স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে তার আর রিমির হাত ধরা ফটো। যেইটা তোলা হয়েছে,, আজ কফিশপে।

কুশান বিস্ফোরিত চোখে তরির দিকে তাকায়। এমন ফটো কে তুললো? আর তরিকেই বা কে দিলো? তরি কি তাহলে তাকে ভুল বুঝছে? কুশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তরি বলে ওঠে,
–” আমার সাথে এতো ঝামেলা হওয়া,, আমাকে ডিভোর্সের কথা বলার আসল কারন কি এই রিমি?”
কুশান কিছুটাহ থম ধরা কন্ঠে বলে ওঠে,

–” তরি আসলে তুমি….”
কুশানকে কিছু বলতে না দিয়ে তরি বলে ওঠে,
–” চুপ করো। চুপ করো কুশান! আজ তুমি কিচ্ছু বলবে না,, আজ আমি বলবো তুমি শুনবে। প্রথমেই বলি এই ফটো আমার কাছে কিভাবে আসলো,, আমি তোমার পিছনে টিকটিকি লাগায় নি,, তোমার ছেলে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করেছিলো,, আমি তোমার ছেলেকে নিয়ে আইসক্রিম পার্লারে গিয়েছিলাম। সাগরিকা ক্যাফেট এরিয়ার অপজিটের আইসক্রিম পার্লারের আইসক্রিম ভালো হওয়ায় ওখানে কিনতে যায়। আর সেখান থেকে বের হয়ে ক্যাফেট এরিয়ার কাচ ভেদ করে এই দৃশ্য আমার সামনে আসে।”

কুশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তরির দিকে। তরি আবার বলে ওঠে,
–” এই মেয়েটা তোমাকে রাত বিরাতে কল দিতো,, আর আমি ভাবতাম কাজের ফোন হয়তো। কিন্তু,, না! অন্য কাজে ফোন দিতো এই মেয়ে,, তাই না?”
–” তরি! আমার কথাটা…”
–” মি. কুশান! আপনাদের এই সম্পর্কের জন্য আমাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছেন তাই না?”
–” তরি! তুমি এইসব কি বলছো?”

–” আমি ঠিকই বলছি। আচ্ছা! কুশান! তোমাদের সম্পর্ক কতোদিনের? তুমি তো বেশ কিছুদিন হলো আমার কাছে আসো না,, আমাকে স্পর্শ করো না। তোমার আর রিমির সম্পর্ক কি ক্যাফেট এরিয়া পর্যন্ত? নাকি বিছানা পর্যন্ত চলে…..”
কথা শেষ করতে পারে না তরি। তার আগেই কুশানের হাতের থাপ্পড় পড়ে তার গালে। তরি অবাক হয়ে অশ্রুসিক্ত গালে হাত দিয়ে কুশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কুশান রাগান্বিত মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কুশানের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। তরির চোখ থেকে ঝরছে অজস্র পানির ফোঁটা। কুশান রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,

–” খবরদার তরি! এতো সময় তুমি যা যা বলছো,, আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি,, তার মানে এই না যে,, তুমি যা খুশি তাই বলবা। যা বলছো ভেবে কথা বলো,, নাহলে তোমার জিভ টেনে আমি ছিড়ে ফেলে দিবো। মাইন্ড ইট!”
কুশান নিজের রাগ সামলাতে পারছে না। তাড়াতাড়ি অন্য রুমে চলে যায় কুশান। যদি রাগে উল্টো পাল্টা করে ফেলে,, তাই তাড়াতাড়ি সরে এলো কুশান। তরি ওখানে বসেই কান্না করতে থাকে।

ছন্দময় সংসার পর্ব ২

…………………..সূর্যের উজ্জ্বল রশ্মিতে চারিদিকে ভরে গেছে। সারারাত ঘুম হয় নাই দুই নর-নারীর। একজন সারারাত এক রুমে সিগারেটের ধোয়ায় নিজেকে বিলিয়েছে,, আর একজন ছেলেকে বুকে নিয়ে সারারাত চোখের জল বিসর্জন দিছে।
কুশান নিজের রুমে এসে কোনোদিকে নাহ তাকিয়ে সোজা অফিস ড্রেস পরে নেয়। তরি এক পলক কুশানের দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকায়। কুশান অফিসের জন্য রেডি হয়ে সোজা ফ্লাট থেকে বেরিয়ে যায়। আর তরি উঠে লাগেজ নামিয়ে কাপড় গোছাতে শুরু করে।।।!!

ছন্দময় সংসার শেষ পর্ব