সুখের অনুভব - bhuapurnews24

সুখের অনুভব পর্ব ৩

সুখের অনুভব

সুখের অনুভব পর্ব ৩
Jhorna Islam

পুরো নাম মোহতাসিন মির্জা আজান।মির্জা বাড়ির বড় ছেলে। মোহসীন মির্জার একমাত্র ছেলে। মোহসীন মির্জারা তিন ভাই। মোহসীন মির্জা সবার বড়। মেঝ ভাই তাহসিন মির্জা তার এক ছেলে আমান। আর ছোট ভাই আহসান মির্জা তার এক ছেলে আহান আর এক মেয়ে আহানা।আজ মির্জা বাড়িতে বিয়ের ধুম পড়েছে।
মির্জা বাড়ির সবার আদরের ছোট ছেলে আহানের বিয়ে। কোনো কিছুর কমতি রাখা হয় নি। চারিদিকে বিয়ের হৈ হোল্লড়।সকলে আনন্দ করছে।

আজানের কাল বাড়িতে আসতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। এসে দেখে প্রায় সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তাই সে নিজের রুমে চলে যায়। তুলনা ও ঘুমিয়ে আছে। তাই আজান ও গিয়ে চুপচাপ তুলনার পাশে ঘুমিয়ে পরে। একেইতো জার্নি করে এসেছে তারউপর দৌড় ঝাপ।চোখে ঘুম নেমে আসতে বেশি সময় লাগেনি।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

তুলনা আজানের ফুফাতো বোন ছিলো এখন অবশ্য তার একটি মাত্র বউ।বিয়েটা যদিও পারিবারিক ভাবেই হয়েছে । তুলনা আজানকে আগে থেকেই পছন্দ করতো সেটা বাড়ির সবাই জানতো।তাই তো তারা আজানের সাথে বিয়ে ঠিক করে ছিলো।আজান ভালোবাসতো কিনা তা তুলনা জানে না। কারণ বিয়ে ঠিক করে যখন আজান কে জানানো হয় তখন সে এক কথায় রাজি হয়ে যায়। এতে সবাই ই ভেবে নেয় আজান তুলনাকে পছন্দ করতো।সবাই অনেক খুশি হয়।কারণ প্রথমে সবাই একটু ভয়ে ছিলো তাদের ডিসিশন আজান মানবে কি না। আজান সব সময় ই তার মর্জি মতো চলে এই জন্যই ভ’য় টা পাচ্ছিলো।আজান রাজি হয়ে যাওয়ায় সবাই অনেক খুশি হয়েছে।তারপর ওদের বিয়ে টা খুব ধুমধামে দেওয়া হয়।

সকালের মিষ্টি রোদে আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে তুলনা।পাশে তাকিয়ে দেখে আজান উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে।ঘড়িতে তখন দশটার উপরে বাজে।তুলনা নিজের বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে নিয়ে আজানের খোলা পিঠে মাথা রেখে শুয়ে পরে। কতোক্ষন আজানের চুল নিয়ে টানাটানি করে।।আসলে তুলনা ঘুৃম থেকে আজানকে উঠাতে চাচ্ছে। এতো কিছুর পরও যখন উঠছে না তখন পিঠ থেকে উঠে আজানের মুখের কাছে চলে যায়।

— এইই জান,,,,জান,,ঐই উঠো না।
— উমম কি হয়েছে ঘুমোতে দাও।কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি।
— উহু উঠো অনেক ঘুমিয়েছো।আর ঘুমাতে হবে না।
— তুলনা যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও।আমার ঘুমে ডিস্টার্ব করবানা একদম নয়তো মাইর লাগাবো কিন্ত।
— দেখো দশটা বাজে। আর ঘুমোতে হবে না উঠো না।

আজান কথা না বাড়িয়ে তুলনাকে সোজা করে শুইয়ে তুলনার উপরে উঠে ঝাপটে ধরে শুয়ে পরে। এবার তুমিও ঘুমাও। আর একটা কথা ও বলবানা।
এইই কি করতেছো ছাড়ো আমায়।উফফ আল্লাহ তুমি ঘুমোও।জান ডিস্টার্ব করার জন্য স’রি আর করবো না ছাড়ো।তুমি ঘুমাও।
এতোসময় এটা ভাবা উচিৎ শাস্তি তোমার।এখন নো ছাড়াছাড়ি।

আমার জানে না কতো ভালো ছেড়ে দাও না। আজ আহানের বিয়ে ভাবি+বোন হিসাবে আমার কতো দায়িত্ব জানো? ছাড়ো।
আজান বিরক্তিতে চোখ মুখ কোচকে তুলনার দিকে তাকায়। তুলনা ভয়ে ভয়ে আজানের দিকে তাকিয়ে রয়।
আজান তুলনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠে,,, তুমি আমায় অনেক জ্বালাও তুলু।

আজানের কথা শুনে তুলনা ঠোঁট উল্টে আজানের দিকে তাকিয়ে বলে,, ঠিক আছে আমি আজই বাবা মা আসলে বাপের বাড়ি চলে যাবো।তাহলে আর কেউ তোমাকে জ্বালাবে না।সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে।
— হু চলে যাও।আবার একটা বিয়ে করবো।দেন নতুন বউ কে নিয়ে সুখে শান্তি তে থাকবো।আহ্ ভাবতেই আমার সুখ সুখ লাগছে।

— এই কি বললি তুই আবার বিয়ে করবি আমায় রাইখা? তুই কি ভেবেছিস তুই বিয়ে করবি আর আমি দাঁড়ায় দাঁড়ায় লক্ষি বউয়ের মতো ফুল ছিটাবো কক্ষনো না।দুটোকেই নিজের হাতে মেরে দিবো।
আজান তুলনার মুখটা চেপে ধরে বলে,,, আমার সাথে তুই তুকাড়ি?
নানা না মজা করতেছিলাম তো জান সিরিয়াস নাও কেন?
আজান তুলনাকে ছেড়ে সোজা হয়ে শোয়। উপরের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমার ঘুমের দফারফা করে দিয়েছো তুমি। ইচ্ছে করতেছে কানের নিচে দুইটা লাগাই।

হ্যা এটাইতে পারো শুধু। ভালোবাসতে তো জানো না।
আজানের বুকে মাথা রেখে আজানের দিকে তাকিয়ে রয়।
কি ম্যাডাম আপনার না কতো দায়িত্ব? নিচে যাবেন না?
— পরে যাবো। তোমাকে ভালো করে দেখে নেই। এক সপ্তাহ তুমি বাসায় ছিলে না। ফোনে আমার সাথে ভালো করে কথা বলোনি তুমি জা’ন। আমি কিন্তু তোমার উপর অভিমান করে আছি।

— বাহ্ এই প্রথম শুনলাম যে অভিমান করেছে সে নিজ থেকেই বলছে সে অভিমান করেছে।
— কি করবো? যার উপর অভিমান করেছি সে যদি না বোঝে তাহলে তো বলেই দিতে হবে।
ওদের কথার মাঝেই আজানের ফোন বেজে উঠে। আজান বালিশের পাশে থেকে ফোনটা নিয়ে কথা বলতে থাকে। তুলনা আজানের বুকে মাথা রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। আজ প্রায় এক সাপ্তাহ পর এতো কাছ থেকে দেখছে মানুষটাকে। বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলো। কাজে হয়তো অনেক বিজি ছিলো তাই তুলনার সাথে ভালো করে কথা ও হতো না।

তুলনা আজানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই নিজের হাতটা আজানের গালে রাখে।
আজান ফোনে কথা বলতে বলতেই তুলনার দিকে তাকিয়ে ব্রু উচিয়ে জানতে চায় কি?
তুলনা না সূচক মাথা নাড়ায়।তারপর আরেকটু এগিয়ে যায়।
— জান তুমি আমার জন্য দেশের বাইরে থেকে কি গিফট নিয়ে এসেছো? আমিতো কিছুই দেখলাম না।তুমি কি কিছু আনোনি আমার জন্য? একটা চকলেট ও আনোনি।

— গোটা আমিটাই তো চলে এসেছি আবার তোমার কি চাই?
হু এখনতো এসব কথা বলবাই আমাকে ভুলানোর জন্য। এসব বাদ।জানো আহান কতো তোমাকে খুজতে ছিলো।আমায় কিছু সময় পরপরই জিজ্ঞেস করে ভাবি বড় ভাই কই? এখনো আসে না কেনো? ভাই এটা একদম ঠিক করতেছেনা। আরো কতো কি অভিযোগ তোমার নামে।

আমি বলছি আমি জানি না। সে তাও থামার পাত্র? বলে ভাই যদি না আসে তাহলে আমি বিয়েই করবো না দেখে নিও।বলেই আজানের দিকে তাকায় তুলনা।
আজান এক মনে কি যেনো ভেবে চলেছে। হঠাৎ ই আজান বলে উঠে তুলু আমার ভাইটা সুখি হবে তো?
কেনো হবে না।দেখো ওরা কতো সুখে থাকে।আহান এবার সত্যিকারের ভালোবাসা পাবে।রিয়া অনেক ভালো রাখবে আহান কে।তার সব অতীত ভুলে যাবে। আর আহান ভাইয়ের পা তো সেরে যাবে ডাক্তার বলেছে। রিয়া সেই ছোট থেকে আহান কে ভালোবাসে।টেনশন নিও না।

আহানের সাথে মিলার দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো। আহান মন থেকে মিলা কে ভালোবেসে ছিলো।যখন যা বলতো মিলা তাই করতো আহান। অন্ধ ভালোবাসা যাকে বলে তাই করতো সে মিলাকে।এমন কোনো ন্যায় অন্যায় আবদার নেই যে সে পূরণ করেনি মিলার।সব করতো ভালোবাসা তে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো আহান।

আহানের সবচাইতে প্রিয় ভালোবাসার মানুষ যার কাছো আহানের সিক্রেট বলতে কিছু নেই সব সময় সব শেয়ার করে পরামর্শ চায় উপদেশ নেয়।প্রতিটা কথা পাই টু পাই মেনে চলে।যার প্রায়োরিটি সবার আগে দেয় আহান তার কলিজার বড় ভাই আজান।তাকেই রিলেশনের কথাটা জানায় নি সে। হয়তো জানালে আজ আহানের এই পরিণতি হতো না।
মিলা আহান কে টাকার মেশিন হিসাবে যখন যে ভাবে পেরেছে ব্যবহার করেছে। সব সময় মিলা বলতে দেরি আহানের টাকা দিতে দেরি হতো না।

মিলার এতো টাকা কিসের জন্য লাগছে একবার জানতেও চাইতো না।
বাড়িতে যখন সবাই আহানকে বিয়ের জন্য চা’প দিচ্ছিলো তখন আহান মিলাকে সেটা জানায়। মিলা নানান ভাবে এড়িয়ে যায়।

প্রায় ছয় মাস ধরে আহান মিলা কে বিয়ের জন্য বলতো।লাস্ট যখন আহানের বিয়ে রিয়ার সাথে ঠিক করে ফেলে প্রায়। ঐদিন মিলাকে আহান অনেক বোঝায় বিয়ের কথা বলে। প্রতি দিন এক কথা শুনতে শুনতে মিলার ও রা’গ উঠে যায়।সে আহান কে বলে আহানকে সে ভালোবাসে না।এতোদিন সে টাইম পাস করেছে।আহান যেনো বিয়ে করে নেয়।
আহান মিলার কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। নিজের বোধ বুদ্ধি সব চলে যায়।

আশে পাশে না তাকিয়ে মাঝ রাস্তা দিয়েই হাঁটা শুরু করে। হঠাৎ ই একটা গাড়ির ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে। লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতাল নিয়ে যায়।
মাথায় আর পায়ে অনেক ব্যাথা পায়। ঐদিন আজান কে জড়িয়ে ধরে ভাই ভাই বলে চিৎকার করে কান্না করে আহান। আজান শুধু চুপচাপ বসে ছিলো।আহান সব বলে আজান কে। আজান সব শুনে আহানকে একটা কথাও বলে নি। আজান মনে মনে ঠিক করে নেয় যথাযথ শাস্তি দিবে সে মিলা কে।তাই পরিকল্পনা করে মিলাকে টাকার লোভ দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে।

ঐদিনের পর থেকে আজান আহানের সাথে কথা বলে না।আহান অনেক মাফ চেয়েছে। বারবার বলেছে ভুল হয়ে গেছে। তাও যখন কথা বলে না।তখন আহান বলে ভাই তুমি আমার সাথে কথা বলো।তুমি আমায় যা করতে বলবা তাই করবো ভাই।তাও কথা বলো প্লিজ ভাই।
তখন আজান বলেছিলো ভেবে বলছিস তো? আমি যা বলবো তাই করবি।
হ্যা ভাই বলো কি করতে হবে।

বিয়ে তাও আবার রিয়াকে। (রিয়া আজানের বাবার বন্ধুর মেয়ে। ছোটো থেকেই ওদের বাড়িতে যাওয়া আসা।সেখান থেকেই আহানের সাথে দেখা।আর সে আহানকে অনেক ভালোবাসে।)
কিন্তু ভাই এই অবস্থায় কিভাবে? আমিতো হাটতেও পারিনা।কবে পারবো কে জানে? তারউপর আমার এতো সব জেনে সে কেনো করবে আমায়?

তোর এতো সব,না ভাবলেও চলবে।করবি কি না বল?যদি উত্তর না হয় তাহলে আমার সাথে আর কথা বলতে আসবি না।
না না ভাই করবো করবো আমি রিয়া কে বিয়ে।
গুড।

এতোসময় আজান আহানের অতীত ভাবতেছিলো।আজানের ভাবনার মাঝেই তুলনা আজানের গালে চুমু খায়। আজান তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
তুলনাকে ঝাপটে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। তুলনা আবেশে চোখ বন্ধ করে রাখে। আজানের ভালোবাসা তে ভুলেই বসে ছিলো বেলা অনেক হয়ে গেছে। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান। আজান তো এখন তুলনাকে ছাড়বে বলে মনেও হচ্ছে না ।
তাই তুলনা আজানের থেকে ছাড়া পেতে বলে উঠে,,, কাল তোমার এতো দেরি হলো কেনো।এয়ারপোর্ট থেকে কোথাও কি গিয়েছিলে?

সুখের অনুভব পর্ব ২

— হুম।
— কোথায়?
— গার্লফ্রেন্ড এর কাছে।বলেই আজান উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় তুলনাকে ছেড়ে।
তুলনা আ’হা’ম্ম’কের মতো টা’স’কি খেয়ে আজানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।

সুখের অনুভব পর্ব ৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *