ভালোবাসি প্রিয় ২ শেষ পর্ব 

Uncategorized

ভালোবাসি প্রিয় ২ শেষ পর্ব 
অপরাজিতা রহমান

-“দোয়ার এই অবস্থা দেখে সিমরান বললো,একি দোয়া! তোমার হিজাবে র”ক্ত কেন? কোথাও আঘাত পেয়েছো কি?
-” ও কিছু না সিমরান।সামান্য চোট লেগেছে।”
-“সামান্য চোট লাগলে কখনো হিজাব ভেদ করে র”ক্ত বেরিয়ে আসতো না‌। তুমি বরং ফার্মেসি তে চলো।”
-“ফার্মেসি তে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই সিমরান। ফার্মেসি তে যেতে গেলে হিসাববিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস মিস হয়ে যাবে। তুমি ক্লাসে চলো তো।”

-“হিসাববিজ্ঞান স্যার ব্যস্ত আছেন।তিনি আজ ক্লাস নিতে পারবেন না‌। সুতরাং আজ হিসাববিজ্ঞান ক্লাস হচ্ছে না।তাই আমরা নির্দ্বিধায় ফার্মেসি তে যেতে পারি।”
-” ঠিক আছে চলো।”
-“দোয়া ফার্মেসি তে ড্রেসিং করিয়ে সোজা বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরতেই শাহিনা বেগম বলেন,কিরে মা আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলি? শরীর খারাপ করছে মা?শরীর খারাপ করলে বাসায় থেকে বিশ্রাম করতে পারতি, শুধু শুধু জার্নি করে ভার্সিটি তে যেতে গেলি কেন?”

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

-“আম্মা আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন। তেমন কিছু হয় নি। মাথায় সামান্য একটু আঘাত পেয়েছি তাছাড়া আজ তেমন ক্লাস ও হয়নি।তাই চলে এসেছি।”
-“দেখি দেখি কোথায় লেগেছে? এজন্যই আমি বারবার বলেছিলাম তোর শহরের ভার্সিটি তে পড়তে হবে না। তুই শুনলি না আমার কথা।আজ একটা অঘটন ঘটলো ভবিষ্যতে যদি এর থেকে বড় কোন অঘটন ঘটে তবু ও আমি কিছুই জানতে পারবো না।গ্ৰামের কলেজে ভর্তি হলে আমি চোখে চোখে রাখতে পারতাম।”

-“আম্মা আপনি মাস্টার্স পাশ করা শিক্ষিত একটা মেয়ে হয়ে এমন কথা বলতে পারলেন?গ্ৰামের কলেজে অনার্স নেই ডিগ্ৰি আছে।আমি এইখানে ভর্তি হয়ে কি ডিগ্ৰি করতাম? তাছাড়া আমি বলছি তো আমার তেমন কোন সমস্যা হয় নি।”
-“মায়ের মন তুই বুঝবি না।যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”
-“টিয়া পাখি কোথায় আম্মা?ওকে দেখছি না যে?”

-“কোথায় আর যাবে? দেখ গিয়ে রুমে বসে বসে হয়তো ফোনে গল্প পড়ছে। পরীক্ষা শেষ করার পর তার তো শুধু একটাই কাজ দিন রাত ফেসবুকে গল্প পড়া।এই গল্পের মধ্যে কি এমন আছে আল্লাহ জানে।”
-“দোয়া রুমে এসে দেখলো ছোঁয়া মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে। ছোঁয়া কে এখন শুয়ে থাকতে দেখে দোয়া জিজ্ঞেস করল, টিয়া পাখি এই অবেলায় শুয়ে আছিস কেন?”

-“একটু মাথা ব্যথা করছে আপু।”
-“নিশ্চয় শ্যাম্পু করার পর চুলে আর তেল দিস নি। তুই তো জানিস তোর চুলে তেল না দিলে মাথা ব্যথা শুরু হয়‌। তাহলে তেল দিস নি কেন?”
-“তোমার হাতে ছাড়া কখনো চুলে তেল দিয়েছি আমি?”
-“তাই বলে মাথা ব্যথা সহ্য করবি?”

-“তুমি যদি আম্মা না খাইয়ে দিলে না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারো, তাহলে আমি কেন পারবো না?”
-“ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোর চুলে তেল দিয়ে দিবো। এবার খুশি তো?
-“হুম অনেক খুশি।”

-“দোয়া সবার সাথে হাসিখুশি থাকলেও ভেতরে ভেতরে চিন্তা হচ্ছে।বৃত্ত কে তো বলে দিলো সে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না দোয়া। পরক্ষণেই ভাবলো যা হয় হবে। আল্লাহ যা করবে ভালোর জন্যই করবে।”
-“দোয়া রাতে পড়াশোনা শেষ করে ঘুমোতে যাবে এমন সময় টুং করে একটা মেসেজ এলো।

মেসেজে লেখা ছিল,প্রিয় আমি চাইলে তোমাকে হারাম রিলেশনে আসার প্রস্তাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমি দেই নি। আমি শুধু তোমাকে ইহকালে নয় পরকালেও চাই। কিন্তু সেটা হালাল ভাবে হারাম ভাবে নয়।তুমি কি আমাকে একটা বার সেই ‌সুযোগ দিবে ? সুযোগ দিবে তোমার হাত ধরে জান্নাতে যাওয়ার?আমাকে কি অধিকার দিবে ভালোবাসি প্রিয় বলার?”
-“দোয়া মেসেজ দেখে অনেক অবাক হয়ে গেল?কে দিতে পারে এমন মেসেজ? দোয়ার ফোন নাম্বার তো বৃত্ত ছাড়া আর কারো কাছে নাই।তাহলে কি বৃত্ত দিলো এমন মেসেজ? কিন্তু এইটা কিভাবে সম্ভব?”

-“দেখ অভি তুমি ঠিক কি করতে চাইছো একটু ক্লিয়ার করে বলবে প্লিজ। তুমি কি আমরা মা”রা গেলে তারপর বিয়ে করবে? ইদানিং আমার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না।কবে আল্লাহর ডাক এসে যাবে কে জানে? আমার কি ইচ্ছা করে না বৌমা নাতি নাতনির মুখ দেখার? তুমি আমাদের পছন্দের মেয়েকে রিজেক্ট করলে।আবার তোমার পছন্দের মেয়ের ব্যাপারে ও কিছু বলছো না।সে দেখতে কেমন?বাসা কোথায়?বাবা কি করে এসব তো বলবে?’

-“আসলে আম্মু মেয়েটার চেহারা দেখি নি আমি।”
-“হোয়াট? না দেখেই তাকে বিয়ে করতে চাইছো?পা”গ”ল হয়ে গেছো তুমি?’
-“আম্মু ভালোবাসা এমন এক বন্ধন‌ যা বর্ণ গোত্র শরীরের সৌন্দর্য দেখে হয় না।আমি তাকে না দেখেই ভালোবেসেছি।সে যেমন‌ই হোক তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।”
-“বাহ্ ! খুব বড়ো হয়ে গেছো তুমি।ভালোবাসার সংজ্ঞা দিতে শিখে গেছো।তোমার যা মন চায় তাই করো ।এই ব্যাপারে আমি তোমাকে আর কিছুই বলবো না।”

-“দেখতে দেখতে সেই কাঙ্ক্ষিত বসন্ত উৎসবের দিন চলে আসলো। দোয়া কে সবাই বারবার করে বলে দিয়েছে সে যেন বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে আসে। কিন্তু দোয়া জানে পর্দার গুরুত্ব। তাই তো সে প্রতিদিনের মতো আজ ও কালো বোরকা দ্বারা নিজেকে আবৃত করে ভার্সিটি তে চলে আসলো।আর ভার্সিটিতে এসেই অপমানের শিকার হতে হলো।সিমরানের দেরি হচ্ছে দেখে দোয়া কল দিতে যাবে এমন সময় দোয়া দেখে একটা হলুদ পরী তার দিকেই এগিয়ে আসছে। সিমরান একটা হলুদ চুড়িদার পরে মাথায় হিজাব করে এসেছে।বেশ মিষ্টি লাগছে সিমরান কে। মেয়ে টা নিজেকে সবসময় কালো বলে অপমান করে। অথচ ও নিজেও জানে কতোটা মায়াবী চেহারা অধিকারী সে।”

-“দোয়া কে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিমরান তুড়ি মে”রে বললো, দোয়া কি দেখছো এমন করে।”
-“তোমাকে! মাশাআল্লাহ আজ অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে। কিন্তু তোমার এই সৌন্দর্য,এই সাজগোজ দেখার অধিকার শুরু একজনের, তোমার স্বামীর সিমরান।তবে এটা দেখে ভালো লাগলো বোরকা না পরলে ও লং চুড়িদার হিজাব করে এসেছো। ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে বোরকা পরার ও অভ্যাস হয়ে যাবে।”

-“সবটাই তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে দোয়া। আমি আমার জীবনে তোমাকে বান্ধবী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করি।”
-“হয়েছে !আর আলু দিতে হবে না।চলো তো এক্ষুনি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।”
-“হুম চলো।”

-“দোয়া সিমরান এসে দেখল , অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আশিয়ান আবরার বৃত্ত, বিন্দু মাহতাব,অভি ভাইয়া অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছে। ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র ছাত্রীদের দেশাত্মবোধক গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হলো।এরপর একে একে নাচ,গান কৌতুক চলতে থাকলো।এক পর ইংলিশ আপা কে নাচের জন্য ডাকা হলো। ইংলিশ আপা ইতিমধ্যে শাড়ি পরিবর্তন করে মডার্ন ড্রেস পরে স্টেজে উঠেছেন।

একদম ডানা কা”টা পরীর মতো লাগছে ইংলিশ আপা কে। ইংলিশ আপা কে দেখে ছেলেরা জোরে জোরে চিৎকার ,শিষ বাজাতে লাগলো। শুরু হলো ইংলিশ আপার পাতলি কামারিয়া গানে নাচ। ইংলিশ আপার নাচ সবাই বেশ ইনজয় করছে, বিশেষ করে ছেলেরা।এক পর্যায়ে মাইশাতুল দোয়া কে স্টেজে ডাকা হলো। দোয়া স্টেজে যেতেই সবাই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই অধির আগ্রহে দোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দোয়া নাচবে না গাইবে এটা দেখার জন্য। অনেকেই বলাবলি করছে ,এই মেয়ে নিশ্চয় ধামাকা ড্যান্স করবে‌।নাচতে নাচতে বোরকা খুলে সবাই কে চমকে দিবে। দোয়া কে একেক জন একেক রকম কথা বলে যাচ্ছে। হঠাৎ করে দোয়ার কানের কাছে কেউ একজন ফিসফিসিয়ে বললো,ভ”য় পাচ্ছো কেন? তুমি হেরে যাওয়ার মেয়ে ন‌ও দোয়া। আমি জানি তুমি পারবে। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি এবং থাকবো। তোমার জন্য আমার মনের দরজা, ঘরের দরজা সারাজীবন খোলা থাকবে। সবশেষে একটা কথায় বলবো #ভালোবাসি_প্রিয়।

‌সমাপ্ত

[আসসালামুয়ালাইকুম । গল্পটা এইভাবে শেষ করে দেওয়ার কারনে হয়তো অনেকেই অনেক কথা বলবে। তাড়াহুড়ো করে আজ কি লিখছি নিজেও জানি না। হঠাৎ করেই আমার একটা চাকরির পরীক্ষার ডেট আসছে । তাছাড়া ফেব্রুয়ারি তে আমার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। প্রতিদিন চার টা ম্যাথের সাবজেক্টের প্রাইভেট পড়া, বাসায় পড়া, আবার তার সাথে চাকরির পড়া যুক্ত হয়েছে।সব মিলিয়ে আমি আর পেরে উঠছি না। এমন হবে জানলে এই গল্পটা শুরু করতাম না। মাঝপথে এইভাবে ছেড়ে দিতে আমার ও ভালো লাগছে না। তাছাড়া গল্প দিতে একটু দেরি হলে তোমরা আমাকে কমেন্টে ইনবক্সে গালিগালাজ করো।আর তোমাদের অপেক্ষা করাতে আমার ও ভালো লাগে না।মৃ”ত্যু”র কথা বলা যায় না,কখন কি হয়। ইনশাআল্লাহ যদি বেঁ”চে থাকি পরীক্ষার পরে আবার ও এই গল্প নিয়ে ফিরবো। এবং যেইখানে শেষ করেছি সেইখান থেকে শুরু করবো ইনশাআল্লাহ।]

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ১২