ভালোবাসি প্রিয় ২ - bhuapurnews24

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ৪

ভালোবাসি প্রিয় ২

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ৪
অপরাজিতা রহমান

-“কাল সকালের জন্য প্রস্তুত থেকো।কাল তোমার সাথে যা হবে তুমি ভাবতেও পারবে না মিস দেড় ফুট। ভার্সিটি থেকে তোমার কাছে কোন প্রকার নোটিশ যাবে না ভার্সিটি ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু আমি তোমার এমন অবস্থা করবো যেন তুমি নিজেই বাধ্য হবে ভার্সিটি ছেড়ে দিতে।এতে সাপ ও ম”র”বে আর লাঠি ও ভাঙ্গবে না।হা হা হা হা।”

-“আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি আমি আপনাকে ভ”য় পাই না।আর ভার্সিটিতে আমার যোগ্যতা দিয়ে গিয়েছি।তাই আপনার এই সস্তা থ্রেটে এই দোয়া কাবু হবে না।”
-“জানি তো! এতো সহজে তুমি কাবু হবে না। কিন্তু তুমি ও বৃত্তকে চেনো মিস দেড় ফুট। আমার গালে থা”প্প”ড় দেওয়ার শাস্তি তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে। তোমার লাইফ আমি বরবাদ করে দিব।”

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

-“আগে নিজের লাইফ ঠিক করুন। তারপর না হয় আমার লাইফ বরবাদ করতে আসবেন লিখে মেসেজ টা সেন্ড করে বৃত্তের নাম্বার ব্লক করে‌ দিল দোয়া।”
অতঃপর ফ্রেশ হ‌ওয়ার উদ্দেশ্য ওয়াসরুমের উদ্দেশ্য অগ্ৰসর হতেই পিছন থেকে কেউ একজন জরিয়ে ধরলো। দোয়া পিছনে ফিরতেই দেখলো আনুমানিক পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা, শ্যাম বর্ণের রোগা পাতলা গড়নের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দোয়া খানিকটা অবাক হয়ে বললো, টিয়া পাখি তুই!

-“তোমার সাথে আড়ি আমার দোয়াপু?”আমি মাত্র তিন দিন বাসায় ছিলাম না,এর‌ই মধ্যে তোমার টিয়া পাখিকে ভুলে গেলে?”
-“দোয়া সামনে থাকা মেয়েটাকে জরিয়ে ধরে বললো কে বলছে আমি আমার টিয়া পাখিকে ভুলে গিয়েছি? আমি খুব মিস করেছি আমার টিয়া পাখিকে। আব্বা, আম্মা আর তুই ছাড়া আমার কে আছে বল? তুই আমার কলিজার এক অংশ।এই পিচ্চি টিয়া পাখিকে তার দোয়াপু খুব ভালোবাসে।”

-“আমি জানি তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো।মায়ের পরে আমার দ্বিতীয় ভালোবাসা তুমি। আমি অনেক ভাগ্যবতী কারন আল্লাহর তোমার মতো একটা বড় বোন দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। তুমি আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি ভাবতে ও পারি না।জানো আপু এই তিন দিন আমার কাছে তিন যুগের মতো মনে হয়েছে। তোমার বিয়ে হয়ে গেলে আমি কিভাবে থাকবো এইটা ভেবেই আমার কান্না পাই।”

-“নো টেনশন ডু ফুর্তি। দুই বোন দুই ভাই দেখে বিয়ে করবো । তারপর বোন থেকে হয়ে যাবো জা জায়েলি। দুই বোন মিলে চুটিয়ে সংসার করবো।”
-“দুই বোন মিলে কি গল্প করা হচ্ছে শুনি ? প্লেটে খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে বললেন মিসেস শাহিনা বেগম।”
-“কিছু না আম্মা।”
-“তুই কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না দোয়া?”এতো বড় মেয়ে যাকে কি না আজ বিয়ে দিলে কাল বাচ্চার মা হয়ে যাবে তাকে আমার প্রতি ওয়াক্তে খাবার খাওয়ার জন্য বকাঝকা করা লাগে।”

-“আসলে আম্মা কি হয়েছে জানেন? ভার্সিটি থেকে এসে ক্লান্ত লাগছিলো বলে নামাজ পড়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
-“আমার পেটে তুই ছিলি, তোর পেটে আমি ছিলাম না দোয়া। আমি খুব ভালো করেই জানি আমি হাত দিয়ে না খাইয়ে দেওয়া পর্যন্ত আমার মেয়ের পেটে ভাত যাবে না।”
-“আপনি জানেন আমার নিজের হাতে আমি খাই না। তবু ও কেন খাবার আনতে এতো দেরি করলেন‌ আম্মা? আপনার হাতে না খেলে যে আমার পেট ভরে না আম্মা।”

-“বিয়ে হলে কি করবি? তখন তো খাইয়ে দেওয়ার জন্য আমি থাকবো না?”
-“আচ্ছা আম্মা! আমি কি আপনাদের বোঝা হয়ে গিয়েছি? সবসময় বিয়ে বিয়ে করেন কেন? আপনাদের কে ছেড়ে যাওয়ার কথা আমি ভাবতে পারি না আম্মা।”

-“দেখ মা বিয়ে একটা সামাজিক নিয়ম ও পারিবারিক বন্ধন। সমাজের নিয়মে একটা মেয়ে সারাজীবন তার বাবা মায়ের কাছে থাকে না। একদিন না একদিন তাকে বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যেতে হয়।
অন্যদিকে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়।”

“হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বান্দা যখন বিবাহ করে , তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন (ইমান) পূর্ণ করে।এত‌এব বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহ কে ভয় করে।[সহীহ আল_জামিউস সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহ হা/৬১৪৮, সহীহ তারগীব ওয়াত তাবহীব,ইমাম আলবানী বলেন, হাদিসটি হাসান লিগাইরিহ]”

-“তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দিয়ে দিবেন আম্মা?”
-“বাদ দে তো এসব কথা। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।এই ছোঁয়া তুই ও ফ্রেশ হয়ে আই। আমি দুজনকে একসাথে খাইয়ে দিচ্ছি।”
-“ঠিক আছে আম্মা।”

এদিকে বৃত্ত বাসায় এসে নিজের রুমের জিনিসপত্র ভাংচুর করতে লাগলো।নিচ থেকে ঝর্না আবরার ভাংচুরের শব্দ পেয়ে বৃত্তের রুমে ছুটে এসে দেখলেন বৃত্তের হাত কে”টে র”ক্ত ঝরছে হয়তো ড্রেসিং টেবিল ভাঙ্গতে গিয়ে হাত কে”টে গিয়েছে। বৃত্তকে এই অবস্থায় দেখে ঝর্না আবরারের ক”লি”জা মোচড় দিয়ে উঠলো।

আজ ছেলের এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে তার।ছেলে টাকে যদি সেই ছোটবেলা থেকে শাসন করার সুযোগ পেতো তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। কোন বাবা মাই চায় না তার সন্তান খারাপ পথে যাক‌। কিন্তু কি আর করার?সে চাইলেও পারে না তার ছেলে টাকে শাসন করতে।

তাই তো সবসময় আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করে তার এই বখাটে ছেলের জীবনে এমন কেউ আসুক যেন তার ছেলের জীবন টা পরিবর্তন করে দিতে পারে।তাকে হেদায়েতের পথে ফিরিয়ে আনতে পারে। অবশেষে বৃত্তকে শান্ত করতে ঝর্না আবরার বৃত্তকে জরিয়ে ধরে বললেন,বেটা শান্ত হ‌ও প্লিজ। তোমার এই অবস্থা দেখে মমের কষ্ট হচ্ছে তো।এই দেখো মম কিন্তু কান্না করছে‌।

-“মম ঐ দেড় ফুট মেয়ের সাহস হলো কি করে আমাকে ব্লাক লিস্টে দেওয়ার?দেড় ফুটের একটা মেয়ে ভার্সিটির সবার সামনে আমাকে থা”প্প”ড় দিয়ে চরম অন্যায় করেছে ‌এখন আবার আমার নাম্বার ব্লাক লিস্টে রেখে দিলো।ওর সাহস হলো কি করে?”

-“শান্ত হ‌ও বেটা। বাচ্চা মেয়ে বুঝতে পারে নি।”তুমি ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নাও।”
-“ঠিক আছে মম। তুমি যাও এখন ‌। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
-“ওকে বেটা বলে বৃত্তের কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেল মিসেস ঝর্না আবরার।”
-“এদিকে বৃত্ত কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। বারবার চোখের সামনে দোয়ায় থা”প্প”ড় দেওয়ার দৃশ্য ভেসে উঠছে। বৃত্ত শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো কিভাবে দেড় ফুটের তেজ কমানো যায়।পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে পৌশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো বৃত্ত।”

-“ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল দোয়ায়। ছোঁয়া কে ডেকে তুলে দুই বোন ফ্রেশ হয়ে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করলো। কিছু দিন পরে যেহেতু ছোঁয়ার এস‌এসসি পরীক্ষা সেহেতু কোরআন তেলাওয়াত শেষ করে ছোঁয়া ব‌ই পড়তে বসে গেল।আর দোয়া কিচেনে চলে গেল শাহিনা বেগমের রান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য।”
-“দোয়া নাস্তা শেষ করে বোরকা হিজাব পরিধান করে ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবে এমন সময় শাহিনা বেগম বললেন, বাসা দোয়া বের হ‌ওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়ে বের হোস।”

-“আমার মনে আছে আম্মা। তবু ও আপনি বাসা থেকে যখন‌ই বের হ‌ই তখনই আয়াতুল কুরসি পাঠ করার কথা মনে করিয়ে দেন। আমি জানি আম্মা আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফজিলত অনেক ‌।”
১.আয়াতুল কুরসি পড়ে বাড়ি থেকে বের হলে
৭০,০০০
ফেরেস্তা চর্তুদিক থেকে তাকে রক্ষা করে।
২.এটি পড়ে বাড়ি ঢুকলে বাড়িতে দারিদ্রতা
প্রবেশ করতে
পারেনা।

৩.এটি পড়ে ঘুমালে সারারাত একজন ফেরেস্তা
তাকে
পাহারা দেন।
৪.ফরজ নামাযের পর পড়লে তার আর বেহেস্তের
মধ্য
একটি জিনিসেরই দূরত্ব থাকে; তা হলো মৃত্য।
এবং
মৃত্য আযাব এতই হালকা হয়; যেন একটি পিপড়ার
কামড়।

৫.ওজুর পর পড়লে আল্লাহর নিকট ৭০ গুন মর্যাদা
বৃদ্ধি
লাভ করে।
আয়াতুল কুরসী ও উহার ফযীলত
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻲُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻟَﺎ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻩُ ﺳِﻨَﺔٌ ﻭَﻟَﺎ ﻧَﻮْﻡٌ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﻦْ ﺫَﺍ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺸْﻔَﻊُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫْﻧِﻪِ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠْﻔَﻬُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺤِﻴﻄُﻮﻥَ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﻣِﻦْ ﻋِﻠْﻤِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﻤَﺎ ﺷَﺎﺀَ ﻭَﺳِﻊَ
ﻛُﺮْﺳِﻴُّﻪُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺌُﻮﺩُﻩُ ﺣِﻔْﻈُﻬُﻤَﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻲُّ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢُ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহু লাইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল
ক্বইউম, লাতা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওম, লাহু
মাফিস্*

সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মানযাল্লাযি
ইয়াশ্*ফাউ
ইন্*দাহু ইল্লা বিইযনিহ। ইয়ালামু মা বাইনা
আইদীহিম
ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম মিন
ইলমিহি ইল্লা বিমাশাআ ওয়াসিয়া কুরসিয়্যুহুস
সামাওয়াতি ওয়াল আরযা, ওয়ালা ইয়াউদুহু
হিফযুহুমা

ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আযীম। (সূরা বাকারা:
২৫৫)
ফযীলতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয
সালাতের
পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে জান্নাতে
যাওয়া
থেকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছুই বাঁধা দিতে
পারবে

না।” (মুসলিম, নাসাঈ)।
-“এইবার আসি আম্মা। আসসালামুয়ালাইকুম।”
-“ওয়ালাইকুমুস সালাম। সাবধানে যাস মা। তুই যতোক্ষণ বাইরে থাকিস আমার মনটা কিছুতেই শান্ত করতে পারি না।”
-“আপনি চিন্তা করবেন না আম্মা। আমার কিছু হবে না। আল্লাহ আছেন আমাকে রক্ষা করার জন্য।”

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ৩

-“দোয়ার বাসা থেকে ভার্সিটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। অবশেষে প্রায় এক ঘন্টা জার্নি শেষ করে দোয়া ভার্সিটি তে প্রবেশ করার সাথে সাথেই দোয়ায় সাথে অদ্ভুত এক কান্ড ঘটলো যা দোয়া ভাবতেও পারে নি।তবে আন্দাজ করতে পারছে কাজ টা কে করতে পারে।”

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *