ভালোবাসি প্রিয় ২ - bhuapurnews24

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ১১

ভালোবাসি প্রিয় ২

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ১১
অপরাজিতা রহমান

-“টিয়া পাখি বাসায় কেউ এসেছে নাকি? বাইরে অনেক গুলো অপরিচিত জুতা দেখলাম।”
-“হ্যাঁ আপু তোমাকে দেখতে এসেছে।”
-“মানে কি?”
-“তোমার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে আপু।”

-“আশ্চর্য!আমাকে দেখতে আসবে অথচ আমি জানি না। আম্মা ক‌ই রে টিয়া পাখি?
-“আম্মা কিচেনে মেহমানদের জন্য নাস্তা তৈরি করেছেন।”
-“দোয়া গিয়ে শাহিনা বেগম কে জরিয়ে ধরে বললো, আমি এখন বিয়ে করবো না আম্মা। আপনাদের কে ছেড়ে থাকার কথা আমি ভাবতে ও পারি না।আজকে যে আমাকে দেখতে আসবে এই কথাটা আমাকে একবার ও জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না আম্মা?”

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

-“পাগলি মেয়ে কান্না করছিস কেন?দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি? তাছাড়া ওনারা হুট করে এসেছেন। আমি বা তোর আব্বা কেউই এই বিষয়ে অবগত ন‌ই।তোর ফুফু রেহেনা শিকদার এনাদের নিয়ে এসেছেন মাগুরা থেকে।তোর ফুফুর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। তুই তো জানিস ই তোর ফুফু আমাদের পছন্দ করেন না। আমাদের চলাফেরা, লাইফস্টাইল তার পছন্দ নয়।এখন যদি আমি তাদের কে মুখের উপর না করে দিতাম এইটা ভালো দেখাতো না মা। তাদের কে অপমান করা হতো।তবে কোন পুরুষ মানুষ আসে নি মা।

শুধু দুই জন মহিলা আর ছোঁয়ার বয়সী একটা মেয়ে এসেছে। তুই ফ্রেশ হয়ে বোরকা ছেড়ে একটা ভালো থ্রিপিস পরে আয়।আমরা তোর অমতে বিয়ে দিবো না তুই এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারিস। কেননা বিয়ে কোন খেলা নয়, এটা হল দু’টি জীবনের চির-বন্ধন। ইসলামী বিবাহ-বন্ধনের জন্য প্রথমতঃ শর্ত হল পাত্র-পাত্রীর সম্মতি। সুতরাং তারা যেখানে বিবাহ করতে সম্মত নয় সেখানে জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়া তাদের অভিভাবকের জন্য বৈধ নয়। মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘‘কুমারী নারী (র বিয়ে) সম্বন্ধে তার মতামত নেয়া হবে, সে যদি চুপ থাকে তবে তাই তার সম্মতি। আর যদি সে অস্বীকার করে তবে তার উপর কোন চাপ প্রয়োগ করা চলবে না।’’ (নাসাঈ ৩২৭০, তিরমিজি ১১০৯)

-“দোয়া ফ্রেশ হয়ে কালো রঙের একটা থ্রিপিস পড়ে রেডি হয়ে নিলো। দোয়া রুম থেকে বের হতে যাবে এর‌ই মধ্যে দোয়ার ফুফু রুমে প্রবেশ করে বললো,একি রে দোয়া! এইভাবে ফকিন্নির বেশে পাত্রপক্ষের সামনে যাবি? তোর কি ভালো জামা কাপড় নেয়? এমনিতেই তো খাটো,ক‌ই একটু ভালো করে সাজগোজ করবি যাতে তাদের পছন্দ হয়।তা নয় তো হুজুর সেজে মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে যাচ্ছিস। এইভাবে হুজুর সেজে গেলে আর কোন দিন আর শ্বশুরবাড়ির ভাত খেতে হবে না‌। সারাজীবন বাপের ঘাড়ে বসে বসে অন্ন ধংস করতে হবে।”

-“ফুফুর কথায় দোয়া অনেক কষ্ট পেলেও তার সামনে প্রকাশ না করে বললো, হ্যাঁ ফুফু আমি খাটো তবে এতে আমার কোন আফসোস নেই ।কারন আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাকে খাটো করে সৃষ্টি করেছেন।কেউ পছন্দ করুক বা না করুক আল্লাহ তায়ালা যার জন্য আমাকে সৃষ্টি করেছেন সে ঠিকই পছন্দ করবে।”

-“তোর মতো চার আংগুলে মেয়ের থেকে কি এখন আমার হাদিস শিখতে হবে? এজন্যই কারো উপকার করতে হয় না। উপকারের বিনিময়ে লা”থি ,উষ্টা খেতে হয়।তোর ভালো চাই বলেই সম্বন্ধ টা এনেছিলাম।ছেলে দেখতে যেমন ফার্স্ট ক্লাস তেমনি পড়াশোনায় ও ফার্স্ট ক্লাস।

শহরের নামকরা একটা ভার্সিটি তে অনার্স করছে। কিছু দিনের মধ্যেই গ্ৰাজুয়েশন শেষ করবে। তাছাড়া ওদের শহরে নিজস্ব বাড়ি গাড়ি রয়েছে। বাবার যা সম্পত্তি আছে তাতে ছেলের চাকরি বাকরি না করলে ও চলবে।এমন পরিবারে বিয়ে হলে রাজরানী হয়ে থাকতে পারতি। কিন্তু এখন আমার মনে আমি তাদের এইখানে এনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।যাই হোক এখন তো আর মেয়ে না দেখিয়ে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। আপনি বরং আমার সাথে তাদের সামনে গিয়ে উদ্ধার করুন।”

-“এতোক্ষণ দরজায় নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহিনা বেগম। রেহেনা শিকদার চলে যেতেই শাহিনা বেগম এসে দোয়া কে জরিয়ে ধরে চোখের পানি মুছে বললেন, তোর ফুফুর কথায় কিছু মনে করিস না মা।মেহমানরা অনেক সময় অপেক্ষা করেছে। চোখের পানি মুছে চল ।”

প্রায় এক সপ্তাহ পরে অভির বাবা মা তাদের গ্ৰামের বাড়ি মাগুরা থেকে বাসায় ফিরে এলো।ফিরতে ফিরতে প্রায় আট টা বেজে গেল। বাসায় ফিরে দেখল অভি কিচেনে রান্না করছে আর বৃত্ত ওকে এটা ওটা এগিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করছে ।বৃত্তকে দেখে অভির মা বললো,বৃত্ত কেমন আছো বাবা? অনেক দিন তোমাকে দেখি না। হঠাৎ কি মনে করে এই গরীবের বাসায়?”

-“কেন অভি তোমাকে আমার কথা কিছু বলে নি?তোমরা গ্ৰামে যাওয়ার পর থেকেই আমি তোমাদের বাসায় রয়েছি।অভির নাকি একা থাকতে ভ”য় করে ।তাই আমাকে যেতে দেয় নি।বলি কি আন্টি তোমার ছেলেকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও।তাহলে দেখবে ভ”য় টয় বাপ বাপ করে পালাবে।এই এক সপ্তাহ অভির সাথে থেকে আমি একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি আন্টি, তোমার ছেলের ভ”য় টয় বলে কিছুই নেই, সব‌ই বিয়ে করার ধান্দা। শীতকাল মানে বিয়ের সিজন চলছে তো , বুঝতেই পারছো বেচারার মনের অবস্থা।”

-“অনেক তো আমার ব্যাপারে বললি এবার একটু নিজের মনের অবস্থার কথা ও বল।এই এক সপ্তাহ রাতে ঘুমের মধ্যে আমাকে বারবার তুই জরিয়ে ধরেছিস।তাহলে এবার বল ব‌উ কার বেশি প্রয়োজন?আমার নাকি তোর?
-“আহ্ অভি বাচ্চাদের মতো কি শুরু করলে? তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে অভি।”
-“হ্যাঁ আম্মু বলো।”

-“এখন নয়। তুমি রান্না সেরে ফ্রেশ হয়ে নাও। ডিনারের সময় বললো।”
-“ঠিক আছে আম্মু। তুমি জার্নি করে এসেছো এখন গিয়ে বিশ্রাম নাও।
-“হুম।”

-“অভি জানতো না আজ তার বাবা মা গ্ৰাম থেকে ফিরে আসবে।তাই দুইজনের জন্য ভাত আলুভর্তা ডাল আর ডিম ভাজি করেছিল।এখন আবার নতুন করে রাইস কুকারে ভাত বসিয়ে দিয়ে গ্ৰাসের চুলায় মাছ আর মাংস বসিয়ে দিল।প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে অভি রান্না শেষ করে ফ্রেশ হতে গেল। ”
-“অভি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। খাওয়ার এক পর্যায়ে অভি বললো, আম্মু তুমি কি যেন বলতে চেয়েছিলে?

-“তোমার বিয়ের ব্যাপারে বলতে চেয়েছিলাম।”
-“আমার বিয়ে মানে? তুমি কি বৃত্তের কথা সিরিয়াসলি নিলে?বৃত্ত মজা করেছে আম্মু।”
-“আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখে এসেছি।মেয়ে মাশাআল্লাহ।মনে হচ্ছিল যেন কোনো জান্নাতি হুর দেখছি। আমার তাকে খুবই পছন্দ হয়েছে। তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমি এই ব্যাপারে আগাতে পারি।”

-“আমি এই বিয়ে করতে পারবো না আম্মু।”
-“কারন জানতে পারি ?”
-“আমি একটা মেয়ে কে পছন্দ করি আম্মু। পছন্দ করি বললে ভুল হবে ইনফ্যাক্ট তাকে ভালোবাসি। আমি বিয়ে করলে তাকেই করবো।”
-“ঠিক আছে।তবে এই মেয়েটাকে একবার দেখ।আমি শিওর এই মেয়েকে দেখার পর অন্য কোন মেয়ের চিন্তা তোমার মাথাতে আসবে না।”

-“আমি দেখতে চাই না আম্মু।”
-“তুমি অনেক বড়ো ভুল করলে অভি।এই মেয়ে তোমার জীবনসঙ্গী হলে তোমার জীবনটাই পাল্টে যেত।আমি এখন তাদের কে কি জবাব দিবো বল তো? তাদের কাছে আমার কোন মুখ থাকলো বলো তো?”
-“আমি যাকে ভালোবেসেছি তাকে আমার জীবনসঙ্গী করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।আর আমি শিওর তোমাদের ও তাকে পছন্দ হবে।”

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে দোয়া বিছানা রেডি করছে এমন সময় দোয়ার ফোনে রেহেনা শিকদারের কল আসে। দোয়া কল রিসিভ করে সালাম দিতেই ও পাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে ভেসে আসলো, খুব তো মুখে ফটর ফটর করেছিলি , কিন্তু কি হলো?ছেলেপক্ষ না করে দিয়েছে। সারাজীবন আমার ভাইয়ের ঘাড়ে বসে বসে অন্ন ধংস কর। আমি ও দেখতে চাই কোন ম্যাজিস্ট্রেট আসে তোকে বিয়ে করতে।”

-“ফুফু বেয়াদবি মাফ করবেন। আমি আমার আব্বার ইনকাম খাচ্ছি। আপনি তো আমাদের এক পয়সা দিয়ে ও সাহায্য করেন না।আর আল্লাহর রহমতে আমাদের কারো সাহায্যের প্রয়োজন ও নেই।তাহলে আপনি কেন বেশি কথা বলেন?
-” চার আংগুলে মেয়ের মুখের বুলি দেখ তো। কেন যেন ম”র”তে গিয়েছিলাম তোদের বাড়ি বলেই ফোন কে”টে দিলেন রেহেনা শিকদার।”
-“এই আপু কার সাথে কথা বলছিলে?
-“ফুফু ফোন দিয়েছিলো।”
-“কি বললো?”

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ১০

-“পাত্রপক্ষ না করে দিয়েছেন।”
-“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।”
-“তুই ঠিক বলেছিস টিয়া পাখি। অনেক রাত হয়েছে চল ঘুমতে হবে।
-“হুম গুড নাইট।হ্যাভ এ নাইস ড্রিম উইথ‌ মি।”
-‘হা হা হা পাগলি মেয়ে।”

ভালোবাসি প্রিয় ২ পর্ব ১২