টাঙ্গাইলে ছড়াচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

টাঙ্গাইলে ছড়াচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

টাঙ্গাইল জেলা

টাঙ্গাইলে কয়েক সপ্তাহ ধরে শীতের প্রকোপ বেড়েই চলছে। এতে করে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে- শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এর ফলে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দিন দিন রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি জেলার ১২ টি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেগুলোতেও রোগীর চাপ বেড়েছে। ভর্তি হওয়া আগত রোগীর ৮০ শতাংশই ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত।

এদিকে, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের ১০০টি আসন নিয়ে অতিরিক্ত আলাদা ওয়ার্ড খোলার পরও রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে পারছেন না চিকিৎসক এ সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সংখ্য রোগী বেড না পেয়ে হাসপাতালের ফ্লোরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে আরও ভোগান্তি পোহাচ্ছে হচ্ছে রোগীরা ও তার স্বজনরা।

শিশু ওয়ার্ডের বারান্দার ফ্লোরে চিকিৎসা নেওয়া ঘাটাইল উপজেলার ঘারিয়া গ্রামের রোজা মনি (৪)। শিশুটির মা লাবনী জানান, প্রথমে ঠান্ডা কম ছিল বলে বাড়িতে ওষুধ খাওয়ানো হয়। হঠাৎ ঠান্ডার সঙ্গে খিচুনি দেখা দেয়ায় রোজাকে গত সোমবার সকালে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সকালে ভর্তি হলেও রোজাকে চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। তবে, নার্সরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকায় বারান্দার ফ্লোরে ভর্তি রেখেই চিকিৎসা চলছে। আমি শুধু একা নই, আমার মতো অসংখ্য রোগির পরিবারের লোকজন ফ্লোরে চিকিৎসা নেয়াসহ ও নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

গাইনি ওয়ার্ডের বারান্দার আসনে ভর্তি মাহমুদনগরের পারবহুলী গ্রামের আর্জিনা বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রসবজনিত সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ওয়ার্ডের ভেতরে আসন খালি না থাকায় রাতে এই আসনটি দেওয়া হয়েছে। এতে করে অনেক সমস্যা হচ্ছে। রোগী চাপ বেশি থাকায় এমন সমস্যা পড়তে হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকস এবং দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মিলে ৪০১ জনের মধ্যে ৩২৮ জন কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতালে ৭৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ৫৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন ৪১ জন। ২৩৯ নার্সের স্থলে আছেন ২৩৩ জন। ৩২ জন প্যারামেডিকসের স্থলে আছেন ১৩ জন। এছাড়া ৭২ জন দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর স্থলে রয়েছেন ৪১ জন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. লুৎফর রহমান আজাদ জানান, হাসপাতালে শিশু রোগীর আসন সংখ্যা ২৫টি। তবে গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৮০ জন। এরমধ্যে ১ বছরের কম বয়সী ৪২ জন ও অন্যরা ১ বছরের বেশি বয়সের।

এরআগে শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫১ জন। শুক্রবার এ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৫ এবং শনিবার ৬৯ জন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৮৩ জন। এছাড়া শনিবার হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪০৩ জন, আর রোববার ছিল ৪৪০ জন। ভর্তি শিশু রোগীদের ৮০ ভাগই ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত।

হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. লুৎফর রহমান আজাদ জানান, মেডিসিন বিভাগের ১০০টি আসন মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করে আলাদা ওয়ার্ড করা হলেও আসনগুলো লিখিতভাবে স্থানান্তর করা হয়নি। কেবল রোগীর চাপ কমাতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই আসনগুলোর রোগীদের চিকিৎসাসহ সব সুযোগ-সুবিধা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, তীব্র শীতের কারণে শিশুসহ নানা বয়সী লোকজন নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। ক্রমাগত রোগীর চাপে গত রবিবার ৮ জানুয়ারি থেকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।