এখানেই শেষ নয় - bhuapurnews24

এখানেই শেষ নয় শেষ পর্ব 

এখানেই শেষ নয়

এখানেই শেষ নয় শেষ পর্ব 
অপরাজিতা রহমান

আশ্চর্য! তুমি আমার বিয়ে করা বউ। জরিয়ে ধরেছি চুমু দিয়েছি এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?ব‌উ তো আদর সোহাগ করার জন্যই তাই না?

তাই বলে যেইখানে সেইখানে তোমার আদর সোহাগের ডালা খুলে বসবে। সেদিন ব‌ইমেলায় কি করেছিলে ভুলে গিয়েছো?
না ভুলি নি। সেদিন সাইফাতুল মুনতাহার স্টলে একটা কালো জামদানি শাড়ি পড়া মেয়েকে দেখেছিলাম হাসিমুখে সবাই কে অটোগ্ৰাফ দিতে। কিন্তু হঠাৎ করে মেয়েটা পিছনে ফিরতেই আমরা সবাই চমকে উঠেছিলাম।কারন সাইফাতুল মুনতাহা আর কেউ নয় স্বয়ং কুয়াশা।আসলে তোমাকে সাইফাতুল মুনতাহা রুপে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি।তাই তো লাজ লজ্জা ভুলে সবার সামনে জরিয়ে ধরেছিলাম।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

আমি চেয়েছিলাম তোমাদের সবাইকেই সারপ্রাইজ দিতে।তাই তো কাউকে বলি নি যে আমিই সাইফাতুল মুনতাহা।তোমরা যখন আমার গল্পের প্রশংসা করতে ব্যাপার টা আমি বেশ ইনজয় করতাম। তখনই মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম তোমাদের সবাইকেই সারপ্রাইজ দিব।তবে আম্মু জানতো ব্যাপার টা । আম্মুর সাপোর্ট পেয়েই এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

কিন্তু এখন তুমি কোন প্রকার লেখালেখি করতে পারবে না। লেখালেখি করতে গেলে মাথায় প্রেশার দিতে হবে। আমি তোমাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।আর এখন থেকে তুমি স্কুলে ও যেতে পারবে না‌।আই মিন চাকরি টা করছো না তুমি।বাসা থেকে স্কুলে জার্নি করে যাওয়া, সারাদিন স্টুডেন্টদের সাথে বকবক করতে গেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। তোমার জুনিয়র বর যথেষ্ট টাকা ইনকাম করে।তার ইনকামের টাকা দিয়ে তোমার মতো চারটা ব‌উয়ের ভরনপোষন চালাতে
পারবে।তাই তোমার চাকরির কোন প্রয়োজন নেই।কাল থেকে স্কুলে যাচ্ছো না তুমি।এটাই ফাইনাল।

শায়ান! তুমি বাচ্চাদের মতো করছো কেন?সবে মাত্র কনসিভ হয়েছে,এখন‌ই আমি বাবু সেজে রুমে বসে থাকবো ?মনে হচ্ছে পৃথিবী তে এই প্রথম আমি মা হতে চলেছি।আর কোন মেয়ে মা হয় নি।
কুয়াশার কথা শুনে শায়ান ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু দিয়ে বললো,সিনিয়র বেবি, তুমি নিজেও জানো না আজকে আমি কতটা খুশি হয়েছি। পৃথিবীতে একটা ছেলের সবথেকে সুন্দর অনুভূতি কি জানো?তার প্রথম বারের মত বাবা হ‌ওয়া সংবাদ শোনা। প্রথম বার বাবা হ‌ওয়ার অনুভূতি পৃথিবীর সমস্ত অনুভূতি কে হার মানায়।এই অনুভূতি এতোটাই আনন্দের যা শুধুমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। আমার অনুভূতি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না সিনিয়র বেবি। কিন্তু আমার খুবই টেনশন হচ্ছে তোমাকে নিয়ে।

কেন?
তোমার শরীরের যে অবস্থা, বেবি ক্যারি করতে পারবে তো। আমি চাই না আমাকে বাবা হ‌বার আনন্দ দিতে গিয়ে তোমার কোন ক্ষতি হোক।তাই তো সাবধানে থাকতে হবে।
কুয়াশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আম্মু এসে শায়ান কে বললো, শায়ান একটু বাইরে যাও তো কুয়াশার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আশ্চর্য! আমার ব‌উ আমার বাচ্চা আর আমাকেই তাড়িয়ে দিচ্ছ মম। এইটা কিন্তু আমার সাথে ঘোর অন্যায় করা হচ্ছে।
তুমি যাবে এইখান থেকে।
যাচ্ছি তো।

শায়ান যেতেই আম্মু এসে কুয়াশার দুই হাতে দুই টা বালা পড়িয়ে দিয়ে বললো, আমি বিয়ের পরে তোকে বলেছিলাম আমার অবুঝ ছেলেটাকে একটু বুঝদার বানাতে পারলে তোকে কিছু গিফট করবো। আমি জানতাম তুই পারবি তাই তো সেদিন ই বালা জোড়া বানাতে দিয়েছিলাম।আজ তুই এতো ভালো একটা খুশির সংবাদ দিলি তাই আজ তোর জিনিস তোকে দিয়ে দিলাম।জানিস তো মা, তোর বাবাও অনেক খুশি হয়েছে।সে তো দাদু হ‌ওয়ার সংবাদ শুনেই বাজার করতে চলে গিয়েছে।আজ নাকি তোকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে।

সত্যি আঙ্কেল আমাকে মেনে নিয়েছে?
হ্যাঁ । কিছু দিন পরে নাতি নাতনি আসবে তার দল ভারি হবে ,সেই আশাতেই মেনে নিয়েছে।একি কুয়াশা! কান্না করছিস কেন?
এতো সুখ আমার কপালে স‌ইবে তো আম্মু‌।
পাগলি মেয়ে।এতে কান্না করার কি আছে। আমি বলেছিলাম না দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন একটু রেস্ট কর।আসছি আমি।
ঠিক আছে আম্মু।

রাতে খাবার টেবিলে বসে আমার চক্ষু চড়কগাছ। আঙ্কেল একা হাতে সাত টা আইটেম রান্না করেছে আমার জন্য। আমি টেবিলে বসতেই আঙ্কেল প্লেটে ভাত বেড়ে আমার মুখে এক লোকমা ভাত দিয়ে বললেন, তুমি না সেদিন বলেছিলে, তোমার ও ইচ্ছে হয় সবার সাথে বসে খেতে, তুমি শ্বশুর শ্বাশুড়ির মাঝে তোমার বাবা মাকে খুঁজে পেতে চাও। বিয়ের পরে মিরার মধ্যে তোমার মাকে খুঁজে পেয়েছো ।আর আজ থেকে আমি তোমার বাবা। এখন থেকে প্রতিদিন আমি তোমাকে খাইয়ে দিব যেইভাবে রোজ সামিরা কে খাইয়ে দেয়।

যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
না ,না আঙ্কেল। আমার আপত্তি থাকবে কেন?
এই মেয়ে , তুমি আমার মেয়ে হলে আমি তোমার আঙ্কেল হ‌ই কিভাবে?বাবা হ‌ই আমি তোমার বুঝলে মেয়ে?
ঠিক আছে বাবা।

দেখতে দেখতে কে”টে গেল নয় মাস।এই মাসে বাড়ির প্রতিটা সদস্য কুয়াশার কেয়ার করেছে। শায়ান প্রতি মাসে কুয়াশার চেকাপ থেকে শুরু করে খাওয়ানো গোসল করানো সবটাই করেছে। কুয়াশার কেয়ারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখতে চায় না শায়ান। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই প্লেট ভর্তি ফলমূল নিয়ে আসে কুয়াশা কে খাওয়ানোর জন্য। কুয়াশার মধ্যে ও ইদানিং অনেক পরিবর্তন হয়েছে।হাত পা ফুলে গেছে। চেহারার মধ্যে কেমন যেন ফ্যাকাশে একটা ভাব এসেছে। নিজেকে সবসময় ঢিলেঢালা মেক্সিতে আবৃত করে রাখে।

এইতো সেদিন সামিরা মজার ছলে জিজ্ঞেস করেছিলো, আচ্ছা আপু আমরা তো পেট ভরে ভাত খেলেই নড়তে চড়তে পারি না। সেই খানে তুমি একটা বেবি কিভাবে ক্যারি করছো? তোমার কষ্ট হচ্ছে না?
জানো সামিরা আমার আম্মু একটা কথা বলতো , গাছের কাঁঠাল নাকি কখনো গাছে ভার হয় না। আজ সেই কথাটার অর্থ বুঝতে পারলাম। অর্থাৎ মায়েদের কাছে সন্তানের ওজন কে ওজন ই মনে হয় না। নিমিষেই ক্যারি করা যায়। আজকে আমি বুঝতে পারছি মা ডাক শোনা এতোটা সহজ নয়।তবে তোমার ভাইয়া যা করে মনে হয় প্রেগন্যান্ট আমি ন‌ই বরং সে হয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে কে জানো?

যার একজন কেয়ারিং হাজব্যান্ড আছে।আর আমি সেই ভাগ্যবতী দের একজন যে কিনা শায়ানের মতো এমন একজন স্বামী পেয়েছি।
তোমাদের ভালোবাসা সারাজীবন অটুট থাকুক আপু।

রাত দুই টা বেজে ত্রিশ মিনিট। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। শায়ান ঘুমিয়ে গিয়েছে।ছেলেটা বড্ড পাগল।এই কয়মাসে কুয়াশার চিন্তায় শায়ানের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।কতো রাত যে কুয়াশার পাশে বসে নির্ঘুমে কাটিয়েছে তার ঠিক নেই।সেসব কথা ভাবলেই কুয়াশা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে। কুয়াশার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় হুমায়ূন আহমেদের কোথাও কেউ নেই গল্প টা পড়ছিল , হঠাৎ করেই কুয়াশার পেইন ওঠে। এইদিকে শায়ানের ঘুমন্ত চেহারা দেখে শায়ান কে না ডেকে কুয়াশা দাঁত কামড়ে ব্যাথা সহ্য করে নেয়।এক পর্যায়ে ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়।

ভোর রাতে শায়ানের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে কুয়াশা মেঝেতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কুয়াশার এই অবস্থা দেখে শায়ান যেন পাগল হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে কুয়াশা কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রায় ১ ঘন্টা যাবত ওটির সামনে সবাই অপেক্ষা করেছে। অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডক্টর এসে বললেন, কংগ্রেস মিস্টার আপনি টুইন বেবির বাবা হয়েছেন,বাচ্চারা সুস্থ আছে।

আর আমার সিনিয়র বেবি কেমন আছে?
মানে?
আমার ওয়াইফ কেমন আছে?
সরি মিস্টার তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল।আপনারা রোগীকে অনেক দেরি করে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন।কোনমতো নিঃশ্বাস চলছে আরকি।গিয়ে দেখা করতে পারেন।

শায়ান কেবিনে প্রবেশ করে দেখতে পেল কুয়াশার নিথর দেহ টা বেডে পড়ে রয়েছে। কুয়াশা কে এই অবস্থায় দেখে শায়ানের ক”লি”জা মোচড় দিয়ে উঠলো।শায়ান কে দেখে কুয়াশা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,শায়ান দেখ তোমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে আমাদের টুইন মেয়ে হয়েছে। তুমি আমার মেয়েদের দেখে রেখো শায়ান। তোমার সাথে আমার আর পথ চলা হলো না শায়ান। আমাদের ভালোবাসা এখানেই শেষ হয়ে গেল।

না সিনিয়র বেবি আমাদের ভালোবাসা #এখানেই_শেষ_নয় । তোমার সাথে আরো পথ চলা বাকি আমার। ‌তোমার কিছু হবে না সিনিয়র বেবি। আমি কিছু হতে দিব না তোমার।
শায়ান শেষ বারের মত আমাকে একটু জরিয়ে ধরবে? শেষ বারের মত একবার সিনিয়র বেবি বলে ডাক দিবে? তোমার মুখে সিনিয়র বেবি শব্দ টা শুনতে যে আমার বড্ড ভালো লাগে।
শায়ান কুয়াশা কে জরিয়ে ধরতেই কুয়াশার দুই চোখের পাতা এক হয়ে গেল, নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। ডক্টর এসে কুয়াশার পালস চেক করে বললো,সি ইজ নো মোর।

বাবা বাবা!
কি হয়েছে আমার রাজকন্যাদের?
তোমার সিনিয়র বেবি মে”রে”ছে আমাদের।
সিনিয়র বেবির খুব সাহস বেড়ে গিয়েছে ।তোমরা দাদুর কাছে যাও এক্ষুনি আমি সিনিয়র বেবি কে বকে দিচ্ছি।
না আমাদের সামনে বকা দাও।

তোমাদের সামনে বকা দেওয়া যাবে না সোনা।তোমরা দাদুর কাছে যাও আমি ঠিক সিনিয়র বেবি কে বকে দিব।
বাপ বেটিরা মিলে আমার নামে কি অপবাদ দেওয়া হচ্ছে শুনি?
সিনিয়র বেবি তুমি আমার রাজকন্যাদের মে”রে”ছো কেন?

তোমার মেয়েরা কি করেছে জানো?বাবা নামাজ পড়তে বসেছে আর তোমার গুনধর মেয়েরা তার পিঠের উপর ওঠে বসে রয়েছে। একেবারে হয়েছে তোমার মতো।বাবা ভালো হলে তার মেয়েরাও ভালো হতো।আর আমার হয়েছে যতো জ্বালা। এইদিকে দুই টা মেয়েকে সামলাতে হবে আবার অন্যদিকে তাদের বাবাকেও সামলাতে হবে।এই পাঁচ বছরে ও তোমার কোন পরিবর্তন হলো না শায়ান। সেই আগের মতো বাচ্চাটাই বয়ে গিয়েছো অথচ নিজেই এখন দুই বাচ্চার বাপ।
দুই বাচ্চার বাপ হলেও ভালোবাসা কিন্তু আগের মতোই রয়েছে। সারাজীবন এমন‌ই থাকবে।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ১১

হ্যাঁ জানা আছে তোমার ভালোবাসার নমুনা। পাঁচ বছর আগে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে আমি মা”রা গিয়েছি।
পাঁচ বছর আগের একটা দুঃস্বপ্ন অথচ এখন ও সেই স্বপ্নের কথা মনে পরলে আমাকে হারানোর ভ”য়ে চোখের পানি ফেলে একাকার করে দাও। তুমি কি ভেবেছিলে আমাদের ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে। জ্বি না মিস্টার, আমাদের ভালোবাসা #এখানেই_শেষ_নয় ।

‌ সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *