এখানেই শেষ নয় - bhuapurnews24

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৯

এখানেই শেষ নয়

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৯
অপরাজিতা রহমান

কুয়াশা ওঠে শায়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে শায়ানের গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল।
মারলে কেন সিনিয়র বেবি?
কুয়াশার কি হলো কে জানে শায়ান কে সাথে সাথে জরিয়ে ধরল।আমি কি তোকে বলেছি আমার জন্য হাত পুড়িয়ে‌ বিরিয়ানি রান্না করতে?হাতের কি অবস্থা করেছিস ? ফোস্কা পড়ে যাবে তো। তুই একটু দাঁড়া আমি মলম নিয়ে আসছি।

মলমের কোন প্রয়োজন নেই। তোমার জন্য হাত পুড়িয়ে রান্না করলাম,ক‌ই একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে তা নয়তো দিলে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে। এজন্যই কথায় বলে “যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।”
আমি তো তোকে চুরি করতে বলি নি। তুই আগ বাড়িয়ে চুরি করতে গিয়েছিস কেন?
তোমার মুখে ‌তুই তুকারী শুনতে বেমানান লাগে। প্লিজ তুই করে বলো না।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

ও মা এ দেখি ভুতের মুখে রাম রাম। তুই তুকারি বলা কে শুরু করেছিল শুনি?ভুলে গেছিস বাসর রাতের কথা।চেনা না জানা না অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে অভদ্রের মতো তুই তুকারি করেছিলি।
বারবার বাসর রাতের কথা তোলো কেন?তাকিয়ার ব্যাপারে তো সবটাই বললাম।ও হয়তো ভেবেছিল আমার বিয়ে হলে ওকে ওর প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা দিব না।যার কারনে ও সু”ই”সা”ই”ডে”র মিথ্যা নাটক করেছিল।আর সব মিলিয়ে আমার মাথায় আগুন জ্বলছিল যার কারণে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম।

তার মানে তাকিয়া তোমার গার্লফ্রেন্ড নয়?
না।ও আমার ক্লাস ফ্রেন্ড ছিল।ওর মতো ঠকবাজ অর্থ লোভী মেয়ে কখনো আমার গার্লফ্রেন্ড হ‌ওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আমার প্রথম প্রেম,ভালোলাগা , ভালোবাসা সাইফাতুল মুনতাহা।যদি ও আমি জানি না
সে আমার সিনিয়র না জুনিয়র কালো না ফর্সা, লম্বা না খাটো ইনফ্যাক্ট তার সাথে কখনো আমার কথা ও হয় নি।তাকে না দেখেই ভালোবেসেছি। যদিও তার মতো এতো বড় একজন লেখিকা আমার মতো সাধারণ ছেলেকে ভালোবাসবে না।তবু ও তার অসাধারণ প্রতিভা ,তার ব্যক্তিত্ব ,তার আচরণ ব্যবহার আমাকে বাধ্য করেছে তাকে ভালোবাসতে। আমি জানি সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না তেমনি আমি ও দূর থেকে তাকে ভালোবেসে যাবো।

তাহলে তুমি যে বলেছিলে তাকিয়া তোমার গার্লফ্রেন্ড।এমনকি আম্মু ও বলেছিল।
তাকিয়া সবজায়গাতেই ওকে আমার গার্লফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিত।এমনকি আমাকে ও বাধ্য করেছিলে ওকে আমার গার্লফ্রেন্ডের পরিচয় দিতে। আমি ও নিজেকে বাঁ”চা”তে তাকিয়ার কথা অনুযায়ী চলতে বাধ্য হয়েছি।আর দুই দিন ধরে তাকিয়ার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করতে পারছি না।ওর ফোন বন্ধ। এখন এতো কথা না বলে ঝটপট বিরিয়ানি খেয়ে নাও দেখি। ঠান্ডা হয়ে গেলে বিরিয়ানির স্বাদ পাবে না।

তুমি খেয়েছ?
খাওয়ার আর সময় পেলাম কই। তাছাড়া তুমি যে কথা,সাথে থাপ্পড় খাইয়েছো এমনিতেই পেট ভরে গেছে। আপাতত এক সপ্তাহ না খেলেও চলবে। আমি তো তোমার বাবা মা কে ইচ্ছা করে মা”রি নি।আর আমি শিওর জানি ও না আসলেই কি কোন এক্সিডেন্ট হয়েছিল নাকি সবটাই সাজানো নাটক।কারণ আমি নেশার ঘোরে ডুবে ছিলাম। তাকিয়া আমাকে যেভাবে বলেছিল আমি সেভাবেই বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম।

সরি। আসলে আমি সত্য টা না জেনে না বুঝে তোমাকে অনেক কথা শুনিয়েছি। আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল আমার বাবা মায়ের মৃ”ত্যু এ”ক্সি”ডে”ন্টে হয় নি।তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে খু”ন করা হয়েছে। আর আমার ধারণা টাই সত্যি হয়েছে। সেদিন তোমার গাড়ি তে আমার বাবা মায়ের এ”ক্সি”ডে”ন্ট হয় নি। আমার মনে হয় তাকিয়া তোমাকে ঘোলের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়েছিল। কারণ ঘোল খেলে এতোটাও নেশা হয় না ।এর পেছনে নিশ্চয় তাকিয়ার কোন হাত রয়েছে।আর যেইখানে তুমি শুধু মাত্র দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কিছুক্ষণ আগেই তো বললে আমি তোমার বাবা মায়ের খু”নি।আর এখন‌ই বলছো আমি কিছু করিনি। কিন্তু তুমি এতো কিছু জানলে কিভাবে?

বিয়ের একদিন আগে আমার ফোন পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতো দিন ফোন সার্ভিংয়ে ছিল।আজ যখন ফোন পুনরায় চালু করলাম, তখন এই মেসেজ গুলো দেখে বুঝতে পেরেছি আমার বাবা মায়ের খু”ন মেসেজের অপর পাশের ব্যক্তি করেছে।আর যার সাথে তাকিয়া ও জরিত রয়েছ। দেখ বিয়ের দিনের মেসেজে লেখা , তোমাকে আমি কিছুতেই অন্যের হতে দিব না টিয়া পাখি। তোমাকে পাওয়ার জন্য এতো পরিশ্রম করেছি। সেই পরিশ্রম কিছুতেই ব্যর্থ হতে পারে না।

বিয়ের রাতের মেসেজ, আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম।পারলাম না বিয়েটা আটকাতে। আমি চেয়েছিলাম তোমার বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার পর সবাই যখন তোমার দিকে আঙ্গুল তুলবে ঠিক তখন আমি ভালো মানুষ সেজে তোমার সামনে যাবো। তোমাকে বিয়ে করে আমার করে নিব। কিন্তু আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিয়ে কোথার থেকে যেন ঐ বুড়ি তার কচি ছেলে নিয়ে উদয় হলো আমার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে।

তুমি হয়তো এতোক্ষণ বাসরে মগ্ন হয়ে গেছ , বিশ্বাস করো পাখি আমার ক”লি”জা ছিঁড়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে তোমার ঐ জুনিয়র বরকে ঠিক সেইভাবে মৃ”ত্যু দেই যেইভাবে তোমার বাবা মাকে দিয়েছিলাম।

আরে বাহ্ এতো দেখছি তোমার সাইকো প্রেমিক। প্রেমিকার জন্য বাবা মাকে খু”ন।ভাবা যাই কত্তো ভালোবাসে তোমাকে।একি! সিনিয়র বেবি তুমি কান্না করছো কেন? আমি তো মজা করছিলাম।দেখ যা হবার তাতো হয়ে গিয়েছে।আমরা এখন চাইলে ও আঙ্কেল আন্টি কে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবো না। কিন্তু আঙ্কেল আন্টির খু”নি কে বের করে ঠিক শাস্তি দিতে পারব। তুমি চিন্তা করো না সিনিয়র বেবি আমি আছি তোমার সাথে।আর তাকিয়ার সাথে ও আমার অনেক বোঝাপড়া বাকি আছে। এখন ঝটপট চোখের পানি মুছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও তো।

তুমি ও তো খাও নি।আর হাতের যা অবস্থা মনে হয় না হাত দিয়ে খেতে পারবে।হা কর আমি খাইয়ে দেই।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে শায়ানের কল আসাই শায়ান বাইরে চলে গেল।আর কুয়াশা আম্মুর রুমে গিয়ে স্কুলের বিষয়ে আলোচনা করতে লাগল।

রাতে ঘুমাতে এসে কুয়াশা দেখল শায়ান সোফায় ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিয়ের পরের দিন থেকে কুয়াশা শায়ান এক‌ই রুমে থাকলেও এক‌ই বিছানায় থাকে না। কুয়াশা বিছানায় থাকে আর শায়ান সোফাতে। কিন্তু এখন হালকা হালকা শীত শুরু হয়েছে। শায়ানের সোফায় ঘুমোনো বেশ কষ্টকর হয়ে যাবে বুঝতে পেরে কুয়াশা শায়ান কে বললো, শায়ান তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো , আমি বরং সামিরার কাছে বা অন্য কোন রুমে ঘুমিয়ে পড়বো।

এতো বড় একটা বিছানা থাকতে তুমি অন্য রুমে কেন যাবে সিনিয়র বেবি ?তুমি যদি চাও আমরা বেড শেয়ার করতেই পারি।
আর ইউ শিওর?
ইয়াহ।
ফ্রি তে সার্কাস দেখতে হবে না তো?
একদমই না। আজকে ট্রাউজার পরেছি সো সার্কাস দেখানোর কোন চান্সই নেই।

ঠিক আছে তুমি শুয়ে পড়। আগামীকাল আমার ফিন্যান্স ক্লাস আছে। আমি ব‌ইয়ের পাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নিয়ে তারপর ঘুমোতে যাবে।
ঠিক আছে । গুড নাইট সিনিয়র বেবি।
এই দাঁড়িয়ে যাও।
আবার কি হলো সিনিয়র বেবি?
তুমি যে শুতে যাচ্ছো মশারি কে টানাবে?
এতো দিন তো তুমি টানিয়েছো । তাহলে আজ প্রশ্ন উঠছে কেন?

এতো দিন আমি বিছানায় একা ছিলাম ,তাই মশারি ও আমি টানিয়েছি। আজকে থেকে যেহেতু তুমি ও থাকবে তাই সপ্তাহে চার দিন আমি মশারি টানাবো আর বাকি তিন দিন তুমি টানাবে।সো তাড়াতাড়ি মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়।আর হ্যাঁ তোমার মুখে যেন আর কখনো সাইফাতুল মুনতাহা নাম না শুনি।বিয়ে হয়েছে এখন নজর ঠিক করতে শিখো প্রিয়।
আমি নজর ঠিক করবো আর তুমি ঐ সাইকোর সাথে ইটিশ পিটিশ করবে তাই তো?

হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ইটিশ পিটিশ?ঐ সাইকো কে তো আমি ঠিক খুঁজে বের করবো। আমার থেকে বাবা মাকে কেড়ে নিয়েছে।আমাকে এতিম বানিয়ে দিয়েছে।এতো সহজে ওকে আমি ছেড়ে দিব ভাবছো। কখনোই না।
কুয়াশা সবে ফিন্যান্স ব‌ইতে চোখ বুলিয়েছে হঠাৎ মেসেজের টুং শব্দে ধ্যান ভেঙ্গে গেল। সেই সাইকোর নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আর একটা ছবি এসেছে।ছবি টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৮

মেসেজে লেখা ছিল,টিয়া পাখি খুব শ্রীঘ্রই তোমাকে আমার জন্য আবার ও লাল শাড়ি পড়তে হবে। তোমার আর আমার মাঝে কোন থার্ড পারসন কে আমি এলাও করবো না। তোমার ঐ জুনিয়র বরের ও ঠিক এই ছবিটার মতো হাল করবো।হা,হা,হা,হা। কুয়াশার হাত পা কাঁপছে কি এমন ছবি হতে পারে। ফোনের স্ক্রিনে ছবি টা সো করার সাথে সাথেই এক পলক ছবির দিকে তাকিয়ে কুয়াশা এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেল।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *