এখানেই শেষ নয় - bhuapurnews24

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৫

এখানেই শেষ নয়

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৫
অপরাজিতা রহমান

আমি কি আপনাকে হেল্প করব আপামনি? মিষ্টি কন্ঠে পেছনে ফিরে দেখি আনুমানিক বারো কি তেরো বছর বয়সী হালকা পাতলা গড়নের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মন বলল এটা হয়তো রেনু। তবু ও শিওর হ‌ওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি রেনু?

জ্বি আপা মনি।
তোমার কথা বার্তা পোশাকে মনে হচ্ছে না যে তুমি এই বাসায় কাজ কর।
শুধু আপনি না কেউই ধরতে পারে না যে আমি এই বাসায় কাজ করি।এই বাসার প্রত্যেকটা মানুষ খুবই ভালো মনের। তারা আমাকে নিজেদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে। এমনকি আমাকে স্কুলে ও ভর্তি করিয়েছে।
ও আচ্ছা।আপাতত তোমার এইখানে কোন কাজ নেই। তুমি গিয়ে পড়তে বস। আমার প্রয়োজন হলে আমি ডেকে নিব।
ঠিক আছে আপামনি।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

আমি ঝটপট ফ্রিজ থেকে হাঁসের গোশত , ইলিশ মাছ , বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলাম। আম্মুর থেকে জেনেছি শায়ান আর আঙ্কেলের নাকি নারকেল দিয়ে হাঁসের গোশত আর ঝরঝরে পোলাও খুব পছন্দের। ফ্রিজে আদা রসুন পেঁয়াজ সব কিছু পিসে রাখা ছিল,যার ফলে আমার বেশি কষ্ট করতে হয় নি।

আমি এক চুলায় গোশত বসিয়ে অন্য চুলায় পোলার চাল ভেজে নিলাম। বরাবরই আমার রান্না করতে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু রান্নার সময় লোকজন থাকলে মোটেও আমার ভালো লাগে না। আমার মনে হয় তারা রান্নায় নজর দিয়ে খাবারের স্বাদ নষ্ট করে দেয়।এমনকি আম্মু বেঁচে থাকতে যখন ছুটির দিনে কখনো রান্না করতে ইচ্ছে করত আম্মু কে ও আমি কিচেনে এলাও করতাম না।এই নিয়ে আম্মু আব্বু সারাক্ষণ আমাকে টিজ করত। পুরোনো কথা মনে পড়তেই আপনা আপনি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।

প্রায় তিন ঘন্টা ব্যয় করে শায়ান আর আঙ্কেলের পছন্দের হাঁসের গোশত,পোলাও , বাসমতি চালের ভাত,সরষে ইলিশ, কচুর লতি দিয়ে ছোট মাছের তরকারি আর সাথে একটু পায়েস ও রান্না করলাম।
আপামনি রান্না শেষ হয়ে গিয়েছে? আপনি তো আমাকে ডাকলেন না।
রেনু এসেছো? আমি এক্ষুনি তোমাকে ডাকবো ভাবছিলাম।সব রান্নাবান্না করা শেষ ‌হয়ে গিয়েছে। তুমি সবকিছু ডাইনিং টেবিলে নিয়ে রাখো। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।

ঠিক আছে আপামনি।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আঙ্কেল বাদে সবাই টেবিলে বসে পড়েছে । আমাকে দেখে আম্মু বলল, তুই ও বোস আমি খাবার সার্ভ করছি।

তুমি খাবে না আম্মু?
মায়েরা কখনো আগে খাই না মা।তোরা খেয়ে নে তারপর আমি খাবো।
এইটা কেমন কথা আম্মু? তুমি ও বসো না।সবাই মিলে এক সাথে খাওয়ার মজাই আলাদা।
মিরা মনে হচ্ছে আজ বাসায় ভালো মন্দ রান্না হয়েছে? ভেবেছিলাম তোমার উপর অভিমান করে আজ বাইরে থেকে খাবার খাব। কিন্তু খাবারের ঘ্রাণে রুমে থাকা দুঃষ্কর হয়ে পড়েছিল আমার জন্য। অভিমান ভুলে চলে এলাম খেতে। এখন তাড়াতাড়ি খেতে দাও।

হ্যাঁ দিচ্ছি।
খাবার টেবিলে পিনপন নিরবতা চলছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।যে যার মত করে খাচ্ছে। হঠাৎ আঙ্কেল বলে উঠলো,মিরা তোমার হাত টা দাও দেখি?
কেন কি করবে?

তোমার রান্নার হাত দেখব।আজ হঠাৎ এতো ভালো রান্না কিভাবে করলে?মনে হচ্ছে নতুন হাতের রান্নার স্বাদ পেলাম। টেবিলে রাখা প্রত্যেক টা রেসিপি আমার পছন্দের। তোমাকে তো হাজার বার বলেও কচুর লতি রান্না করাতে পারি না।আজ হঠাৎ এই অধমের দিকে নজর গেল কেন তোমার?

আজকে তো আমি রান্না করি নি।
তাহলে কে করল রেনু?ও তো এতো ভালো রান্না জানে না।আর সামিরা তো কখনো কিচেনেই যায় নি।ওর তো এতো ভালো রান্না জানার প্রশ্ন‌ই আসে না।

আমারা কেউই রান্না করি নি। ইনফ্যাক্ট আমরা কেউই আজ কিচেনে যাই নি। কুয়াশা একা হাতে সব কিছু রান্না করছে।আমি রান্না করেছি শুনে আঙ্কেলের মুখের রং পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি খাবার ছেড়ে চলে যেতে লাগলেন।আমি সাহস করে আঙ্কেলের হাত ধরে বললাম, প্লিজ আঙ্কেল খাবার ছেড়ে যাবেন না। অপরাধ আমি করেছি, খাবার তো কোন অপরাধ করে নি। আপনি প্লিজ যাবেন না।

আজ থেকে আট বছর আগে বাবা মাকে হারিয়েছি। আমার ও ইচ্ছে হয় সবার সাথে বসে খেতে।বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে। আমি ও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। জানেন আঙ্কেল আমি সবসময় মন কে সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম,বাবা মা কে হারিয়েছি তো কি হয়েছে শ্বশুর শ্বাশুড়ির মাঝে আমি আবার ও নতুন বাবা মা খুঁজে নিব। কিন্তু সবার ভাগ্যে তো আর সব সুখ জোটে না।

আমার কথা শুনে আঙ্কেল চুপচাপ বসে খেতে লাগল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,এই মেয়ে খাবার শেষ করে তুমি আমার রুমে আসো।
ঠিক আছে আঙ্কেল।

খাবার শেষ করে আঙ্কেলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ভেতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।বাবাগো আঙ্কেলের যে রাগ দেখা গেল আমার গালে ঠাঁটিয়ে এক চড় বসিয়ে দিল।
এই মেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন? ভেতরে আসো। আমি মানুষ,পশু ন‌ই যে তোমাকে খেয়ে ফেলব। আমার মধ্যে ও মানবিকতা আছে। তোমার হাত দাও।

জ্বি আঙ্কেল।
তোমার হাত দিতে বলছি।
আমি ভয়ে ভয়ে হাত এগিয়ে দিতেই আঙ্কেল আমার হাতে এক হাজার টাকার পাঁচ টা নোট ধরিয়ে দিল।
ও মা টাকা কেন আঙ্কেল?
এটা হচ্ছে তোমার পুরষ্কার আমার পক্ষ থেকে।

আমি সত্যিই আঙ্কেলের থেকে এতোটা ভালো ব্যবহার আশা করি নি। মানুষ তার চাওয়া থেকে বেশি কিছু পেলে হতভম্ব হয়ে যায়।কি করা উচিত অনুচিত সেই বোধ টুকু ও থাকে না। আমার ও সেই রকম অবস্থা হয়েছে। বুঝতে পারছি না আমার ঠিক কি রকম প্রতিক্রিয়া করা উচিত। আমি ঠাঁই সেইখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি এর‌ই মধ্যে আম্মু এসে বলল, বাহ্ আমি যে তোমাকে ত্রিশ টা বছর রান্না করে খাওয়াচ্ছি ক‌ই আমাকে তো কখনো এমন পুরস্কার দাও নি।

দেখ মিরা ভালো জিনিসের প্রশংসা করতে আমি কখনো পিছপা হয় না। তুমি ইদানীং বুড়ি হয়ে গিয়েছ, রান্নার দিকে তেমন কোন মনোযোগ দাও না। তাই রান্নার স্বাদ টা ও আগের মতো নেই।
এই কি বললে তুমি? আমি বুড়ি হয়ে গিয়েছি? তুমি জানো ভার্সিটির কতো টিচাররা এখনো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
হা,হা,হা।তারা তোমার ঐ সাদা চুল দেখে এটাই ভাবে যে , তোমার মতো বুড়ি মহিলা আমার মতো এমন হ্যান্ডসাম বর পেল কিভাবে?

কিছু দিন পরে দাদু হয়ে যাবে আর এখন ও নিজেকে হ্যান্ডসাম দাবি করছো?
দেখেছ আপু তুমি মাত্র একদিন হয়েছে এই বাসার ব‌উ হয়ে এসেছ,আর এরই মধ্যে আমাদের বাসার পরিবেশটাই পাল্টে গেছে। আস্তে আস্তে দেখ বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমার তো হিংসা হচ্ছে আপু। আমার বাবা মায়ের ভালোবাসায় ভাগ বসাবে তুমি।

তোমাকে তো এই বাসায় তো রাখছি না সামিরা। তোমার এস‌এসসি পরীক্ষা শেষ হলেই আম্মুকে বলে তোমাকে এই বাসার থেকে বিদায় করে দিব। আমি ও আমার ভালোবাসায় তোমাকে ভাগ বসাতে দিব না।

আমি তো এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করব না আপু। আমি ও তোমার মতো আম্মুর মতো একজন আদর্শ শিক্ষিকা হব। আপু তুমি বরং ঝটপট আমাকে ফুপি আম্মু বানিয়ে দাও বলেই সামিরা এক দৌড়ে রুমে চলে গেল।
রুমে এসে দেখি শায়ান কোলের উপর ল্যাপটপ বসিয়ে কাজ করছে। আমি তড়িঘড়ি করে ল্যাপটপ সরিয়ে শায়ানের কোলের উপর বসে পড়লাম।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৪

সিনিয়র বেবি তোমার সাহস কিন্তু বেড়েই চলেছে। সকালের ঘটনা কি তুমি ভুলে গিয়েছ? তোমার সাহস হলো কি করে আমার কোলে বসার?
কোলে বসেছি বেশ করেছি। আপনি আমার বিয়ে করা বর। শুধু কোলে নয় আপনার ঘাড়ে বসার ও অধিকার রাখি আমি।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *