এখানেই শেষ নয় - bhuapurnews24

এখানেই শেষ নয় পর্ব ১০

এখানেই শেষ নয়

এখানেই শেষ নয় পর্ব ১০
অপরাজিতা রহমান

ফোনের স্ক্রিনে ছবি টা সো করার সাথে সাথেই এক পলক ছবির দিকে তাকিয়ে কুয়াশা এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেল।
শায়ানের সবেমাত্র চোখ লেগে আসছিল হঠাৎ কুয়াশার চিৎকারে তড়িঘড়ি করে উঠে দেখে কুয়াশা মেঝেতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শায়ান কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।এতো রাতে মম কে ও ডাকা ঠিক হবে না ভেবে নিজেই কুয়াশার কাছে গেল। সিনিয়র বেবি কি হলো তোমার?

কিছুক্ষণ আগেও তো ভালো ছিলে , হঠাৎ কি হয়ে গেল?শায়ান কুয়াশার মুখে পানির ছিটা দিতে দিতে ভাবতে লাগলো, সিনেমায় দেখতাম নায়িকারা প্রেগন্যান্ট হলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেত।ও মাই গড!তার মানে কি সিনিয়র বেবি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল।শায়ানের এমন আকাশ কুসুম ভাবনার মধ্যে কুয়াশার জ্ঞান ফিরলো। সিনিয়র বেবি ঠিক আছো তুমি?কি হয়েছিল তোমার? হঠাৎ করে জ্ঞান হারালে কেন?
কা কা কা”টা হাত শায়ান।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

কিসের কা”টা হাত?আর কোথায়?
ঐ সাইকো একটা কা”টা হাতের ছবি পাঠিয়েছে।আর ঐ কা”টা হাত আর কারো নয় স্বয়ং আমার আম্মুর। আম্মুর অনামিকা আঙ্গুলে যে আংটি টা দেখছো এইটা আমার জমানো টাকা দিয়ে আম্মু আব্বুর বিবাহবার্ষিকী তে আম্মুকে আমি গিফট করেছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমারা যেদিন ট্যুরে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম , তখন আম্মু এই আংটি টা পরেছিল। এরপর কুয়াশা আর কিছুই বলতে পারলো না ।বলার আগেই ঐ সাইকোর নাম্বার থেকে কল আসলো। কুয়াশা কল রিসিভ করতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মিহি একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।হয়তো লোকটা ভয়েজ চেঞ্জ করে কথা বলছে যাতে কুয়াশা চিনতে না পারে।

টিয়া পাখি, এতোক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো কা”টা হাত টা আমার শ্বাশুড়ির মানে তোমার আম্মুর। বিশ্বাস করো পাখি আমি তোমার আব্বু আম্মু কে মা”র”তে চাই নি। কিন্তু কি করতাম বলো? তাদের কে বারবার বোঝানোর পরেও তারা বুঝতে চাই নি। তারা তো তোমাকে আমার হতে দিতে চাই নি।তাই তো তাদের এই করুন পরিস্থিতির শিকার হতে হলো। খুব শ্রীঘ্রই তোমার ঐ জুনিয়র বরের ও এমন অবস্থা হবে। তোমার আর আমার মাঝে যে আসবে তার ঠিক এই অবস্থায় হবে।
কে আপনি? কাপুরুষের মতো লুকিয়ে রয়েছেন কেন?সাহস থাকলে সামনে এসে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। আমি ও আপনার সাহস দেখতে চাই।

উপস পাখি, তোমার সেই রাগ ,জেদ ঠিক আগেই মতোই রয়ে গেছে। আসবো তো পাখি , খুব শ্রীঘ্রই তোমার সামনে আসবো তবে বিয়ের সেরোয়ানী মাথায় পাগড়ি পড়ে। কিন্তু তার আগে তোমার জুনিয়র বরকে তার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে তো।
তোর সেই চাওয়া কখনোই পূরণ হবে না।শায়ানের গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা,ওর দিকে তাকিয়ে দেখ ট্রাস্ট মি আমি তোর চোখ তুলে নিয়ে লুডু খেলবো।

হা,হা,হা আমি তো ভ”য় পেয়েছি পাখি। জুনিয়র বরের প্রতি এতো ভালোবাসা?ও মা গো ট্রুরু লাভ।এটুকু বলেই টু টু শব্দে কল কেটে গেল।
সিনিয়র বেবি !কি ব্যাপার বলো‌তো আমাকে ভালো টালো বেসে ফেললে নাকি? আমাকে মা”রা”র কথা বলতেই এতো হাইপার হয়ে গেলে যে?

কুয়াশা শায়ানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
সিনিয়র বেবি , কথা বলছো না কেন?শরীর খারাপ লাগছে?মম কে ডেকে দিব।
তার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি শুয়ে পরো।
শায়ান যেন মূহুর্তের মধ্যেই বুঝদার হয়ে গেল। কুয়াশা কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো। কুয়াশা ও বাচ্চাদের মতো শায়ানের বুকে গুটিসুটি মেরে পড়ে র‌ইল। নিজের থেকে দুই বছরের জুনিয়র ছেলের বুকেই তার পরম শান্তির জায়গা, একমাত্র আশ্রয়স্থল মনে হচ্ছে।

কেটে গেছে দুই মাস।এই দুই মাসে শায়ানের সাথে কুয়াশার সম্পর্ক একটু স্বাভাবিক হয়েছে। শায়ান সবসময় চায় কুয়াশা কে হাসিখুশি দেখতে। তাকে হুটহাট ফুচকা বিরিয়ানি রান্না করে সারপ্রাইজ দিতে।কুয়াশা ও চাইছে অন্য পাঁচ টা দম্পতির মতো স্বাভাবিক ভাবে সংসার করতে। কিন্তু যতবারই শায়ানের সাথে স্বাভাবিক হতে যাই ততবারই শায়ান কে হারানোর ভয় জেঁকে বসে।ঐ সাইকো টাকে এই দুই মাসে হাজার বার চেষ্টা করেছে খোঁজার, কিন্তু ফলাফল শূন্য।

খুবই চতুর একটা লোক ঐ সাইকোটা।যে নাম্বার দিয়ে কুয়াশা কে ফোন করে মেসেজ করে সেই সিম কার্ড টা রেজিস্ট্রেশন করা না ।যার কারনে লোকেশন ও ট্রেস করা যাচ্ছে না। তবু ও কুয়াশা শায়ান চেষ্টা করছে খুব শ্রীঘ্রই সাইকোটার পর্ব শেষ করে তাদের অপূর্ণ ভালোবাসার পূর্ণতা দেওয়ায়। হ্যাঁ শায়ান কুয়াশা দুজন দুজনকে এই দুই মাসে ভালোবাসে ফেলেছে।একে অপরের প্রতি কেয়ারিং , মজা খু”নশুটি ঝগড়ার মাঝে কখন যে দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছে কেউ ই বুঝতে পারি নি। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে কেউ কাউকে তাদের ভালোবাসার কথা জানাতে পারছে না।

ডিসেম্বর মাসের শুরু হয়েছে। সেই সাথে শুরু হয়েছে কুয়াশার স্কুলে পরীক্ষা।আজ কুয়াশার পরীক্ষার হলে ডিউটি রয়েছে। আম্মুর একটু শরীর খারাপ থাকার কারণে কুয়াশা ফজরের নামাজ শেষ করেই কিচেনে চলে গিয়েছে সকালের নাস্তা রেডি করার জন্য। অবশ্য সামিরা ও এসেছে কুয়াশা কে রান্নার কাজে হেল্প করার জন্য। কারো মুখে কোন কথা নেই,দুজনে দুজনের মতো কাজ করছে। নিরবতা ভেঙ্গে সামিরা বললো,আপু একটা কথা বলবো?

হ্যাঁ বল।
আই অ্যাম ইন লাভ আপু‌।
হোয়াট,এইটুকু বয়সেই লাভ?তো কে সেই ভাগ্যবান পুরুষ যে কিনা এতটুকু বয়সেই আমার ননদের মন হরণ করে নিল?
মিনহাজ স্যার।
হ্যাভ ইউ গন ম্যাড? মিনহাজ স্যার আর তোমার বয়সের পার্থক্য জানো?
ভালোবাসা কখনো বয়স দেখে হয় না আপু? ভাইয়া ও তো তোমার দুই বছরের জুনিয়র, কিন্তু আমি তোমার চোখে ভাইয়ার জন্য অসীম ভালোবাসা দেখেছি।

আমার সাথে তোমার তুলনা করছো কেন সামিরা? মিনহাজ স্যার তোমার টিচার হয়‌। তুমি কিভাবে পারলে ছাত্রী হয়ে টিচারের প্রেমে পড়তে? তাছাড়া আম্মু কখনো এই সম্পর্ক মেনে নিবে না।এক‌ই স্কুলে শ্বাশুড়ি ,জামাই, বৌমা ব্যাপার টা কেমন দৃষ্টিকটূ দেখায়।
আম্মু তো কিছু দিন পরেই অবসরে চলে যাবে। আমার ও এস‌এসসি পরীক্ষা শেষ হলে আমি এই স্কুল থেকে চলে আসবো‌। তখন তো আমাদের টিচার স্টুডেন্ট সম্পর্ক থাকবে না। আমি তো তোমার কাছে এতো দিন কিছু চাই নি। প্লিজ আপু আমার এই চাওয়া টুকু পূরন করো।

ঠিক আছে দেখছি আমি কি করা যায়।
উম্মাহ লাভ ইউ আপু।
লাভ ইউ টু।

কুয়াশা রান্নার পর্ব শেষ করে সকাল সকাল নাস্তা সেরে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে এমন সময় শায়ান এসে কুয়াশা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ব্যাপার টা কুয়াশা ইনজয় করলে ও শায়ান কে বুঝতে না দিয়ে গরম চোখে বললো,শায়ান! কি শুরু করেছো দেখেছো তো রেডি হচ্ছি। ইদানিং তোমার খুব সাহস বেড়েছে তাই না? আমি যে তোমার সিনিয়র এইটা কি ভুলে গিয়েছো?

সিনিয়র হ‌ও বা জুনিয়র হ‌ও তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আমার অধিকার আছে তোমাকে হাগ করার। আমি আমার ব‌উকে হাগ করছি , অন্য কাউকে তো করি নি।কি আর করবো বলো ?ঘরে এতো সুন্দরী বউ দেখলে শুধু আদর করতে মন চাই। অবশ্য তুমি যদি চাও সাইফাতুল মুনতাহা কে পটিয়ে তার সাথে …. শায়ান বাকি কথা টুকু সম্পূর্ণ করতে পারলো না। তার আগেই কুয়াশা শায়ানের গাল চেপে ধরে বললো ,আর একবার যদি তোমার মুখে সাইফাতুল মুনতাহা নাম শুনেছি , তোমার ঠ্যাং ভেঙ্গে রুমে বসিয়ে রাখবো বলে দিলাম।

তাহলে ভালোবাসি কথাটা বলে দাও।
“সব কথা বলে না হৃদয় , কিছু কথা বুঝে নিতে হয়”
তাহলে কি ধরে নিব তুমি আমাকে ভালোবাসো সিনিয়র বেবি?

কুয়াশা কোন রেসপন্স না করে স্কুলের উদ্দেশ্য র‌ওনা দিল।দশ টা থেকে পরীক্ষা শুরু হবে কিন্তু খাতায় ফর্মালিটি পূরণ করার জন্য নয়টা পঁয়তাল্লিশের সময় খাতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যথারীতি দশ টা থেকে একটা পর্যন্ত ডিউটি শেষ করে অনেক ক্লান্ত থাকায় ক্যান্টিনে চলে গেল। কিন্তু কুয়াশা ক্যান্টিনে গিয়ে এতো দিন পরে আবার তাকিয়ার দেখা পাবে ভাবে নি।আর আশ্চর্য করা বিষয় হলো তাকিয়ার সাথে একটা হুডি পড়া লোক রয়েছে।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ৯

যদিও এখন ডিসেম্বর মাস, তবু ও শীতের তেমন তীব্রতা নেই। সারাক্ষণ হুডি পড়ে চোখ মুখ ঢেকে রাখার মতো শীত এখানো আসে নি।তাহলে কি এই হুডি পড়া লোক টা কোন ভাবে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে? কুয়াশা ভাবতে লাগলো এই লোকটাই সেই সাইকো নয় তো যাকে আমি দীর্ঘ দুই মাস ধরে খুঁজে চলেছি?কে হতে পারে এই সাইকো লোক টা?

এখানেই শেষ নয় পর্ব ১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *