এখানেই শেষ নয় - bhuapurnews24

এখানেই শেষ নয় গল্পের লিংক || অপরাজিতা রহমান

এখানেই শেষ নয়

এখানেই শেষ নয় পর্ব ১
অপরাজিতা রহমান

একটা মেয়ে ঠিক কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের থেকে দুই বছরের জুনিয়র একটা ছেলেকে বিয়ে করতে পারে? বুড়ি একটা মহিলা হয়ে জুনিয়র ছেলেকে বিয়ে করতে একটুও বিবেকে বাধল না তোর? আমি না হয় মম এর জন্য তোকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু তুই তো চাইলেই পারতি বিয়ে টা আটকাতে,আটকালি না কেন? অবশ্য তুই জানতিস তোর মতো বুড়ি একটা মহিলাকে কেউ বিয়ে করবে না।তাই তো আমার মম কে হাত করে নিজের থেকে দুই বছরের জুনিয়র ছেলের গলায় ঝুলে পড়েছিস।

বাসর রাতে বরের মুখে কুরুচিপূর্ণ কথা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তুই তুকারি শুনতে হবে এইটা আমার ধারনার বাইরে ছিল। এমন কুরুচিপূর্ণ কথা শুনে লজ্জায়,অপমানে, ঘৃণার আমার চোখ থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ল।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

হেই ইউ, একদম ন্যাকা কান্না করবি না আমার সামনে । তোর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েকে আমার খুব ভালো করে চেনা আছে। তুই প্রথমে আমার মম কে হাত করলি, এখন আবার চোখের পানি ফেলে আমাকে হাত করতে চাইছিস?তোর সেই চাওয়া কখনোই পূরণ হবে না।তোকে জাস্ট আমার বিরক্ত লাগছে। সরে যা আমার চোখের সামনে থেকে।

অনেক বেশি বলে ফেলেছেন মিস্টার শ্রেয়াস আবরার শায়ান। আমার তো ভাবতেই ঘৃণা লাগছে যে আপনার মতো এতো নিচু মানসিকতার লোকের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।আর আপনি কি বললেন, আমি আপনাকে হাত করতে চাইছি?হা, হা,হা,হাসালেন মিস্টার শ্রেয়াস আবরার শায়ান। আপনার মতো নোংরা মানসিকতার লোক কে হাত করা তো দূরে থাক আপনার সাথে কথা বলতেই আমার রুচিতে বাঁধছে। ম্যাম এর মতো এতো ভালো একজন মানুষের ছেলের এই শিক্ষা।

ছিঃ ছিঃ ছিঃ। মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই বোধটুকু ও আপনার মধ্যে নেই। একথা বলার সাথে সাথেই শায়ান আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে গলায় ছু”রি লাগিয়ে বলল, তুই এই শ্রেয়াস আবরার শায়ান এর শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিস?মনে হচ্ছে এক্ষুনি তোর গলায় ছুরি চালিয়ে দেই।আরে তুই কিভাবে বুঝবি ভালোবাসাকে চোখের সামনে শেষ হতে দেখার যন্ত্রণা।ভালোবেসেছিস কখনো কাউকে?

আমি বেসেছি। তুই নিজেও জানিস না তুই আমার কতো বড় ক্ষতি করেছিস।তোর জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড সু”ই”সা”ই”ড করতে বসেছে। আমার গার্লফ্রেন্ড তাকিয়া ফেসবুকে একজন ‌নামকরা লেখিকা।২০২৩ সালের ব‌ইমেলায় ওর লেখা ব‌ই বের ‌হবে।সামান্নার নখের যোগ্যতা ও তোর নেই।

ওর যদি কিছু হয়ে যায় ট্রাস্ট মি আমি সত্যি সত্যি তোকে খু*ন করে ফেলব। আমাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে ম্যাম আর আঙ্কেল আমাদের রুমে চলে আসলেন।ম্যাম এসেই শায়ান কে থাপ্পড় দিয়ে বললেন, ছিঃ শায়ান ছিঃ। আমি এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে?বাসর রাতে তুমি ব‌উয়ের গায়ে হাত তুলছো,তার সাথে তুই তুকারি করছো? তোমার এতোটা অধঃপতন হবে আমি ভাবতে পারি নি।

মম তুমি ভুলে যাবে না এই বিয়েটা আমি নিজের ইচ্ছায় করি নি। তুমি আমাকে বাধ্য করেছ এই বুড়ি মহিলাকে বিয়ে করতে। তোমার ইচ্ছায় বিয়ে করেছি তাই বলে ভেবো না অন্যদের মতো এই বুড়ি মহিলাকে নিয়ে আমি সংসার করব।
ব‌উ হিসেবে না মানো অন্তত সিনিয়র হিসেবে প্রাপ্য সম্মান টুকু তো দিতে পারতে।

পাশ থেকে আঙ্কেল বলে উঠলো, তোমাকে আমি বারবার বারন করেছিলাম মিরা, এমন থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে শায়ানের বিয়ে দিও না ,ওর জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি শুনলে না আমার কথা। একবার ও ভেবে দেখলে না এর পরিনতি ঠিক কি হবে?এখন আবার বাইরের একটা মেয়ের জন্য তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুললে মিরা?

তুমি ভুলে যাবে না ও এখন কোন বাইরের মেয়ে নয়।শরীয়ত মোতাবেক ও এখন এ বাড়ির বউ। শায়ানের স্ত্রী।
ম্যাম আমার সামনে এসে আমার হাত দুটো তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন, শায়ানের হয়ে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। আমি একজন ব্যর্থ মা, ব্যর্থ শিক্ষিকা,যে কি না হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেই অথচ তার নিজের ছেলে টা‌ কেই শিক্ষা দিতে পারে নি। তুই এই রুম থেকে ‌চল।

এইখানে তোকে এই মানুষ রুপি কু*কু*রে*র সাথে আমি কিছুতেই থাকতে দিব না। ম্যাম আমাকে ওনার রুমে নিয়ে এসে একটা সুতির শাড়ি দিল বিয়ের শাড়ি পাল্টে পরার জন্য। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ম্যাম আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে। আসলে সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয় নি, প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।

কিন্তু সমাজের কথা শুনে খাওয়ার ইচ্ছা টাই ম*রে গিয়েছিল। এখন ম্যাম এর হাতে বিরিয়ানি দেখে খাওয়ার ইচ্ছা টা আবার তরতাজা হয়ে গিয়েছে। বিরিয়ানি দেখে জিহ্বা লকলক করছে, কিন্তু নতুন ব‌উ হয়ে তো আর একবার বলাতেই খাওয়া শুরু করা যাবে না। ম্যাম দুই তিন বার বললে তারপর খাওয়া শুরু করব। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ম্যাম বললেন, ঝটপট খাবার টুকু শেষ কর।

পেটে ক্ষুধা মুখে সৌজন্যতা বজায় রেখে বললাম আমার খেতে ইচ্ছে করছে না ম্যাম।
এদিকে বস আমি খাইয়ে দেই , যদি তোর কোন আপত্তি না থাকে।
না,না,ম্যাম আপত্তি থাকবে কেন?

আমি তোর জীবন টা শেষ করে দিলাম তাই না রে? তোকে কলঙ্ক থেকে বাঁ”চ”তে গিয়ে একটা মিথ্যা সম্পর্কে ‌জরিয়ে দিলাম। অবশ্য তুই প্রথম যেদিন স্কুলে জয়েন হলি সেদিনই তোকে দেখে আমার ভালো লেগেছিল। লম্বায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি একটা মেয়ে,হালকা পাতলা গড়ন, গাঁয়ের রং টকটকে ফর্সা, হাঁটু পর্যন্ত চুল, ডাগর ডাগর চোখ ,যে চোখের মায়ায় আমি ডুবে গেছিলাম।

তখনই আমার মনের মধ্যে সুপ্ত ইচ্ছা জেগেছিল , তোকে শায়ানের ব‌উ করার। কিন্তু তুই যে শায়ানের সিনিয়র ছিলি ,তার জন্যই আমার ইচ্ছা টা দমিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছা টা পূরণ করেছে, আজ তুই শায়ানের স্ত্রী। শায়ান তোকে মানুক বা না মানুক তুই শায়ানের ব‌উ হয়ে না‌‌ সামিরার মতো আমার আরো একটা মেয়ে হয়ে এই বাড়িতে থাকবি ।

আচ্ছা ম্যাম, একটা কথা বলুন তো আমার সাথেই কি এমন হ‌বার ছিল?আজ যদি আমার বাবা,মা বেঁচে থাকত তাহলে আমাকে আশ্রীতা‌ , বুড়ি উপাধি পেতে হত না।
বাদ দে মা। পুরোনো কথা ভেবে মন খারাপ করিস না। আল্লাহ যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। সামিরা তো ঘুমিয়ে পড়েছে। তুই বরং আমার পাশে শুয়ে পড় । আমি তোর মাথায় বিলি কে”টে দেই।

ম্যাম যত‌ই পুরোনো কথা ভুলতে বলুক‌, নিজের অতীত কি এতো সহজে ভোলা যায়? এতো গুলো বছর পরে আবার ও আমি ডুব দিলাম আমার অতীতের পাতায়। আমি কুয়াশা। কুয়াশা মীর।র‌ওনক মীর ও নাজমা মীরের একমাত্র রাজকন্যা কুয়াশা মীর। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি আজ একজন ‌আশ্রীতা। অন্যদের মতো আমার ও হাসিখুশি একটা পরিবার ছিল। আমার বাবা একজন নামকরা ব্যবসায়ী আর মা একজন ‌ব্যাংকার ছিল ।

আমি ছিলাম আমার বাবা মায়ের চোখের মণি। প্রতিবছর আমার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে আমি বাবা মা ফ্যামিলি ট্যুরে চলে আসতাম।সেই বছর ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ডিসেম্বর এ পরীক্ষা শেষ করে আমরা ফ্যামিলি ট্যুরে র‌ওনা দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।

বরাবরই আমার গাড়িতে ঘুমানোর অভ্যাস।সবে মাত্র ঘুমের রেশ এসেছে হঠাৎ আম্মুর চিৎকারে চোখ খুলে দেখি বেসামাল ভাবে একটা ট্রাক আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। এইটা দেখেই আম্মু আমাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁ*চে গেলেও‌ বাঁ”চ”তে পারে নি আমার বাবা মা। চোখের সামনে দুইটা তাজা প্রাণ শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। এরপর থেকে শুরু হয় আমার সংগ্ৰামের জীবন।

বাবা মায়ের ছায়াতল ছাড়া বেঁ*চে থাকা কতটা কঠিন প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করেছি, প্রতিনিয়ত বেঁ*চে থেকে ও মরেছি। তবুও দিন শেষে আমার বাবার বলে যাওয়া একটা কথাই আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমি লড়াই করে বাঁ*চ”তে শিখেছি। কোন কারনে যখন ভেঙ্গে পড়াতাম বাবা সবসময়ই বলত #এখানেই_শেষ_নয় মা। বেঁ*চে থাকলে হলে আমাদের লড়াই করে বাঁ*চ*তে হবে। বাঁ*চা*র মতো বাঁ*চ*তে হবে।

এখানেই শেষ নয় পর্ব ২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *