হিয়ার মাঝে পর্ব ৪
আর্শিয়া ইসলাম হিয়া
বউভাতের জন্য সাজানো স্টেজে বসে আছে রায়া। তখন আনিকা গিয়ে এনেছে তাকে। বউভাত শেষে জামাই সহ আবার বাবার বাসায় যাওয়ার নিয়ম আছে। হিয়ার দেখা নেই কোথাও। রায়া চারদিকে নজর বুলিয়ে হিয়াকেই খুঁজছে। রায়ার পাশে রাদ দাড়িয়ে ছিলো এতোক্ষণ, কিন্তু সেও কোথাও একটা চলে গিয়েছে। পুরো একা বসে আছে রায়া।
অতিথি-রা আসছে, রায়াকে গিফট দিয়ে দেখছে, চলে যাচ্ছে৷ এতোক্ষণ তবু নাতাশা ছিলো, সম্পর্কে কে কি হয় পরিচয় করাচ্ছিলো। পরে তার কল আসায় কোথায় চলে গিয়েছে কে জানে। বাকিরা তো অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত৷ অতিথিরা খেয়েদেয়ে বউকে দেখে তার শ্বাশুড়িদের জানিয়ে চলে যাচ্ছে। বাসার পাশেই কমিউনিটি সেন্টার হওয়ায় যার যখন মন চাচ্ছে এখানে আসছে,এরপর কোনো দরকার হলে বাসায় চলে যাচ্ছে।
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
রায়ার নানী তো বয়স্ক মানুষ, আসার পর থেকে উনি একটা রুমে শুয়ে বসে ছিলেন, হিয়া গিয়ে খোজ নিয়ে আসতো। একটু পরেই রায়া কমিউনিটি সেন্টারের গেটের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় তার বাবা,দুই মামা,মামীরা, কাজিন-রা তার দিকেই আসছে। সাথে বাবার বাড়ির পক্ষের আত্মীয় স্বজন। তাদের সাথেই হিয়া আছে। সাথে শ্বশুর, চাচা শ্বশুর আর নিজের স্বামীকেও দেখতে পায় রায়া। তারমানে তার বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের সম্মাম জানিয়ে আনতে গিয়েছিলো রাদ।
চারদিকে ছড়ানো ছিটানো অতিথির মাঝেই বাবাকে দেখে ঝ’ড়ঝড়িয়ে চোখের পানি ফে’লে রায়া। বিয়ে হবে কথাটা জানার পর থেকে তার চোখ দুটো বড্ড অবাধ্য হয়েছে তার। যখন তখন চোখের পানি কান্না হয়ে ঝড়ে পরে। রায়া হাতে থাকা রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নেয়। রুমালটা রাদ দিয়েছিলো তাকে, হুটহাট কান্না করা দেখে পানি মুছার জন্য। রায়ার চোখ মুছা হতেই রাদ এসে পাশে দাড়ায় রায়ার। কানের কাছে ফিসফিসে স্বরে বলে,
” আবার কাঁদছেন? আপনার বাবা তো মনে করবেন আপনাকে আনার পর অনেক অ’ত্যাচার করেছি আমরা। ”
রায়া চট করে রাদের দিকে তাকায়। ভ্রুকুচকে বুঝায় এতো অযথা বকবক কেনো করে লোকটা৷ রাদ নিরবে হাসে। রাদের হাসি দেখে শরীর জ্ব”লে উঠে রায়ার। কিন্তু কিছু বলে না রাদ কে। ততক্ষণে তার বাবা আর বাকি সবাই রায়ার কাছে এসে গেছে। রায়ার বাবা মিঃ শাহীন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেন। একদিন মেয়েকে দেখেননি, অথচ উনার কাছে মনে হচ্ছে কত জনম পর মেয়েকে দেখছেন। রায়া নিরলস, অনুভূতি হীন হয়ে দাড়িয়ে আছে। রায়া বাবার কানের কাছে আস্তে বলে,
” মেয়েকে যদি এতোই ভালোবাসো বাবা, অন্তত এভাবে মানসিক দ’হনে পু”ড়াতে না আমায়। ”
” যা করেছি, তোমার ভালোর জন্য। সময় হলে বুঝবে। ”
মেয়ের কথার উত্তরে কথাটা বলে মেয়েকে ছেড়ে দাড়ান মিঃ শাহীন। রায়ার নিজেদের বাড়ির মেয়েকে জড়িয়ে ভালো ম’ন্দ জিগাসা করেন। একে একে সব আত্মীয় স্বজনই রায়ার খোজ নিতে আসে। এরপর তাদের খাবারের দিকে চলে যেতে বলে রাদ। সবার কথার উত্তর দিয়ে স্টেজের রাখা ফুলে সজ্জিত চেয়ারে বসে পরে রায়া।
হিয়া তার কাজিনদের পেয়ে তাদের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। রাদ রায়ার পাশের চেয়ারে বসে নিজের ফোনে কিছু একটা ঘা’টাঘা’টি করছে। রায়ার শ্বশুর মশাই মিঃ জাহিদুল আর চাচা শ্বশুর মিঃ রুবেল বেয়াইকে নিয়ে মানে রায়ার বাবার সাথে একপাশে দাড়িয়ে গল্প করছেন৷ গল্পের ফাঁ’কে হাসি ঠাট্টায় মে’তে উঠছেন উনারা৷ ছোটোবেলার বন্ধু বলে কথা৷ রায়া গতকাল থেকে তার শ্বশুর বা চাচা শ্বশুর কাউকেই তাকে রুমে দিয়ে আসার পর দেখেনি। এখন দেখছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কথা রাদের বড় ভাই, তাকেও সে দেখেনি। কোথায় আছে কে জানে! রায়া বাবার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আনমনে বিরবির করে বলে, ‘ তোমার হাসির জন্য নিজের জীবনের হাসি বি’সর্জন দিলাম বাবা। তুমি সবসময়ই হাসবে এমন। ‘
” আপনার হাসিও ফেরত আসবে ইনশা আল্লাহ। ওয়াদা রইলো রাদ এহসানের৷ ”
রাদ হঠাৎই কথাটা বলে৷ রায়া অবাক হয়ে তাকায় রাদের দিকে। সে তো বিরবির করে কথাটা বলেছে। এ লোক শুনলো কিভাবে? লীপ রীড করতে পারে নাকি? রায়া অদ্ভুত চাহনীতে রাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাদের দৃষ্টি ফোনের ডিসপ্লেতে। সে রায়ার দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয়,
” পাশেই বসে আছি, এতো কাছাকাছি। আস্তে বললেও শুনে ফেলেছি। এভাবে অবাক ভঙ্গিতে তাকাতে হবে না। ভালো করেই দেখতে পারেন। আফটার অল আপনার একমাত্র জামাই। ”
রায়ার মেজাজ খা’রাপ হয় রাদের কথায়। লোকটা চ’রম নির্লজ্জ। মুখের উপর কথা বলে তাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে বারবার। সে বি’রক্তিতে অন্য দিকে তাকায়।
আতিথেয়তা,বউভাতের সব নিয়ম নীতি শেষে খেতে বসেছে রাদ আর রায়া। সাথে বসেছে, হিয়া, নাতাশা, ইহসাস, আনিকা আর মিসেস সেলিনা আর কল্পনা৷ ক্যাটারিং সার্ভিসের লোক খাবার সার্ভ করে দিয়েছে। সময় প্রায় সন্ধ্যা পেরিয়ে যাচ্ছে। হিয়া মনে মনে অস্থির হয়ে আছে কখন বাসায় যাবে সে। এতো লোকজন, কোলাহল! এসবের মাঝে থেকে অভ্যস্ত না হিয়া। প্রথম বারের মতো এতো মানুষের মাঝে সে। আর সহ্য হচ্ছে না তার।
ধৈর্যের বাঁধ ভে’ঙে গেছে তার। এরমাঝে আরেক ঝা”মেলা ইহসাস বসেছে তার সামনের মুখোমুখি চেয়ারে। মানুষের মাঝে খেতে পারেনা এমনিই, সেখানে তার সম্মুখে ইহসাস, তার খাওয়া হয়ে উঠবে কিনা! বুঝতে পারছেনা হিয়া। সারাদিন এই ইহসাস লোকটার দেখা মেলেনি, হুট করেই তার বাবার সাথে হাজির, এখন আবার একেবারে সামনের চেয়ার টাতেই বসতে হলো উনার৷ হিয়া ছোটো ছোটো করে লোকমা তুলে ভাত মুখে দিচ্ছে আর চার দিকে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে।
বড় বোনের দিকেও খেয়াল করলো হিয়া। রায়ারও একই অবস্থা। দুই বোন বলে কথা। দুজনের স্বভাব এক যে অনেক টা। রায়ার দিক থেকে চোখ ফিরাতেই হিয়ার চোখ পরে ইহসাসের দিকে। লোকটা খাওয়া রেখে তাকে দেখছে! আর মিটমিট করে হাসছে। আচ্ছা বাই এনি চান্স তাকে বাংলাদেশী সাজে পে”ত্নীর মতো লাগছে না তো! আয়নায় তো নিজেকে ঠিকঠাকই লাগছিলো। তাহলে এই লোক তাকে দেখে হাসছে কেনো! কই বাকিরা তো হাসেনি তাকে দেখে!
সবাই তো খেতে ব্যস্ত। হিয়া ইহসাসের দিকে এক ভ্রু উচু করে তাকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে এসব ভাবতে ব্যস্ত যখন, ইহসাস একটা কান্ড করে বসে তখন। তা দেখে হিয়া যেনো চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেলো। হিচকি উঠে যায় তার। ইহসাস তাকে চোখ টিপ মে”রেছে! হিয়ার বিশ্বাসই করতে পারছেনা। হিয়ার হিচকি উঠায় পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পরে আনিকা। সে হিয়ার পাশেই বসা ছিলো সে। সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায় হিয়াকে নিয়ে। রায়া ছোটো বোনকে ধ’মকে বলে উঠে,
” খেতে বসে কিসের তারাহুরো তোর! আস্তেধীরে খেতে পারিস না? ”
” আরে ভাবী, বুঝলে না ব্যাপার টা! বিয়ে বাড়িতে খাওয়ার পাল্লা বা’জে। তাইনা বিয়াইন সাহেবা? ”
ইহসাস রায়ার কথার জবাবে কথাটা বলে। রায়া ইহসাসের কথায় কোনো উত্তর দেয় না। মিসেস কল্পনা ছেলের এই কথায় ছেলেকে ধ’মক দেন। ইহসাস ঠোটে আঙুল দিয়ে বাচ্চাদের মতো গাল ফু’লিয়ে বসে রয়। নাতাশা একবার হিয়া তো একবার তার ভাইকে দেখে। বুঝতে পারছেনা তার ভাইয়ের সাথে হিয়ার হয়েছে কি! যে দুজন দুজনের পিছে লা’গে।
শাড়ি সামলে উঠে এসে বোনের পিঠে আস্তে আস্তে হাত দিয়ে চা’পড় দেয়। হিয়ার হিচকি কিছু টা থেমে আসে। সে হাত ধুয়ে উঠে চলে যায় খাওয়া রেখে। সে যেতেই মিসেস সেলিনা সবাইকে খাবার শেষ করতে বলেন। হিয়া খাবার টেবিল থেকে খানিকটা দূরে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পরে। হাতের ফোনটার লক খুলে নেট ওন করে স্ক্রল করতে থাকে। এরমাঝেই ইহসাসের দিকে ফের নজর পরে তার।
চট করে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চেপে বসে হিয়ার। সে চটপট ফোনের ক্যামেরা খুলে ইহসাসের খাবার খাওয়ার সময়ে গ্রাস দেওয়ার জন্য মুখ খোলার সময় ক্যামেড়া জুম করে ছবি তুলে ফটাফট। পরে তার একমাত্র ছোটো বিয়াই, ম’জা নেওয়া যাবে। তখনই মেসেন্জারে টুং করে মেসেজ আসার আওয়াজ হয়।
হিয়ার মাঝে পর্ব ৩
মেসেজ খুলে দেখতেই হিয়ার অন্তরাত্মা কে*পে উঠে। মেসেজ টা যে অনাঙ্ক্ষিত ছিলো তার কাছে। মেসেজ পড়ে ভেবে পাচ্ছে না সে উত্তরে কি বলবে! হিয়া নখ কা’মড়াতে শুরু করে। অতিরিক্ত চিন্তা হলে কোনো বুদ্ধিই যেনো হিয়ার মাথায় আসেনা। কি করবে সে এখন! কি থেকে কি হলো এটা!