হিয়ার মাঝে পর্ব ৩
আর্শিয়া ইসলাম হিয়া
” এই যে আমাকে আনতে গিয়েছিলো ভাইয়া। ”
রাদকে প্রশ্ন করায় পিছন থেকে এসে উত্তর দেয় একটি মেয়ে। হিয়া আর রায়া তার দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ির সবাই মেয়েটাকে দেখে রীতিমতো জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। আনিকা রায়ার কাছে দাড়িয়ে ছিলো বলে রায়া আনিকার শাড়ির আঁচল ধরে টান দেয়। আনিকা তাকাতেই রায়া আস্তে প্রশ্ন করে,
” মেয়েটা কে ভাবী? আন্টিরা ধরে এভাবে কাঁদছে কেনো? ”
” এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে নাতাশা এহসান। ছোটো বাবার মেয়ে। ইহসাসের ছোটো বোন। তোমার ভাসুর আর রাদের আত্মার টুকরা। ইহসাস মায়ের পেটের ভাই হয়ে যতটা না বোনকে কদর করে এরা দুজন বেশি করে, এদের বোন নেই বলে। ”
” কিন্তু ইহসাসের মতো ওনাকেও তো কাল দেখলাম না যে! ”
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
” নাতাশা বাড়িতে থাকেনা। পড়াশোনার সূত্র ধরে জার্মানি থাকে। তার ছোটো মামা জার্মানিতে থাকে তো,তাদের সাথেই থাকে নাতাশা। ইহসাসও ছিলো, কিন্তু ওর পড়াশোনা শেষ হওয়ায় চলে এসেছে দেশে। বিদেশ বিভুই ইহসাসের পছন্দ না। নাতাশা চান্স পেয়েছিলো বিধায় চলে যায় দেড় বছর আগে। বিয়েতে আসবে ছুটি পাচ্ছিলো না, জানিনা হুট করে কিভাবে আসলো!”
” ওহহ।”
আনিকার কথার উত্তরে ছোট্ট করে উত্তর দেয় রায়া। হিয়া তার চিরাচরিত অভ্যাস কি করবে বুঝতে না পারলে নখ কা’মড়ায়, এখনও সেটা করছে আর দেখছে সবাইকে৷ মিসেস সেলিনা আর কল্পনা নাতাশাকে ছাড়তেই ইহসাস গিয়ে নাতাশার পিছনে দাড়িয়ে মাথায় টো’কা দিয়ে বলে,
” তুই না বললি আসতে পারবিনা! কিভাবে আসলি? ”
” উফ ভাইয়া, আসতে না আসতেই তোর শুরু হলো আমার পিছে লাগা। অনেক কষ্ট করে ছুটি ম্যানেজ করে এসেছি। ভেবেছিলাম, বিয়েই এটেন্ড করতে পারবো না। তবুও ভাগ্য বউভাত দেখতে পারবো। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই ভাইয়াকে কল দিই। এবং ভাইয়া আনতে যায়। এই যে এখন আমি এখানে।”
” আসার আগে অন্তত একবার জানাতে পারতি! ”
মিসেস কল্পনা নাতাশার উত্তরে কথাটা বলেন৷ নাতাশ তার মা-কে বলে,
” সবার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো এটা।”
” ভালোই হলো বিয়েতে একটু মজা করা যাবে তোকে খেপিয়ে নাটাশা। এমনিতেও বিয়ে বিয়ে আমেজ পাচ্ছিলাম না তোকে মিস করে। ”
কথাটা বলেই ইহসাস রুম থেকে চলে যায়। নাতাশা বাচ্চাদের মতো হাত পা ছোড়াছুড়ি করে মিসেস কল্পনাকে বলে,
” দেখলে আম্মু? দেখলে তোমার ছেলে কি বলে গেলো! ”
” বাদ দে ঐ পা’গলের কথা। ”
মিসেস সেলিনা উত্তর দিয়েই নাতাশাকে জড়িয়ে ধরেন। রাদ রুমের এককোণে দাড়িয়ে বাড়ির মেয়েকে কাছে পেয়ে মায়েদের আহ্লাদ দেখছিলো। আনিকা নাতাশার জন্য নাস্তা রেডি করতে চলে যায়। মিসেস সেলিনা আর কল্পনা মেয়েকে কাছে পেয়ে আদর করার কমতি রাখছেন না। একজন জড়িয়ে ধরেন তো অন্যজন চুমু খান কপালে। রাদ ওদের পাশ কা”টিয়ে ওয়ারড্রব থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। রায়া একবার আড়চোখে তাকে দেখলো।
এদিকে নাতাশা তার মায়েদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
” তোমরা নতুন ভাবীর সাথে আমার পরিচিত হতে দেবেনা নাকি? আসার পর থেকে ধরে বসে আছো। ”
হিয়া নাতাশার কথা শুনে আপনমনে বিরবির করে বলে, ‘ এতোক্ষণে হুঁশ হলো এ রুমে আরও মানুষ উপস্থিত আছে। ‘
নাতাশার শুনে মিসেস সেলিনা বললেন,
” দেখেছো মেয়েকে পেয়ে আমাদের নতুন মেয়ের কথা মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো। ”
মিসেস কল্পনা হেঁসে উঠেন বড় জা-য়ের কথায়। মেয়েকে সাথে নিয়ে রায়ার সামনে দাড় করিয়ে বলেন,
” এই যে আমার একমাত্র মেয়ে নাতাশা। বড্ড আদরের তো, দূরে থাকে, কাছে পেয়ে একটু খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু মনে করো না আম্মু।”
রায়া চাচী শ্বাশুড়ির কথায় কিছু বললো না। শুধু মুচকি হাসলো। নাতাশা রায়ার থুতুনীতে আঙুল দিয়ে মুখ উঁচু করে ধরে বলে,
” মাশা আল্লাহ আমার ভাই তো চাঁদ ঘরে এনে তুলেছে। ”
” চাদের গায়ে কিন্তু কলঙ্ক থাকে আপু। ”
হিয়া নাতাশার কথা শুনে তার প্রতিত্তোরে কথাটা বলে বসে। তখনই রাদ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে হিয়ার কথা শুনতে পেয়ে সবাই সামনেই বলে বসে,
” তোমার আপুর গায়ে না হয় আমি কলঙ্ক হলাম হিয়া। ”
মিসেস সেলিনা আর কল্পনা ছেলের কথায় মিটমিট করে হাসেন। রাদ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় চলে যায়। নাতাশা ভাইয়ের কথা শুনে বলে,
” বাহ ভাইয়া দেখছি বিয়ের একরাতেই একদম গোমড়ামুখো থেকে রোমান্টিক হয়ে গেলো। ”
নাতাশার কথায় রায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। লোক টা এরকম নির্লজ্জ নাকি। মিসের সেলিনা আর কল্পনা বউমা লজ্জা পাচ্ছে বুঝে রুম থেকে চলে যান৷ উনারা চলে যেতে হিয়া নাতাশাকে জিগাসা করে,
” আচ্ছা আপু আপনার সব ভাই-ই কি গোমড়ামুখো নাকি? ইহসাস লোকটাকেও আমার সেরকম মনে হলো। এখন রাদ ভাইয়াকেও বলছেন গোমড়ামুখো। ব্যাপার কি! ”
” আমার ভাইদের মুখ থেকে দরকার ছাড়া অতিরিক্ত কখনও কথা পাবে না বুঝলে। সেজন্য ওদের মুখে এরকম রোমান্টিক কথা আর অমাবস্যার চাঁদ দেখা একই৷ কিন্তু তুমি কে? ”
” হিয়া, আমার বোন। ”
নাতাশার প্রশ্নে রায়া উত্তর দেয়। তখনই রাদ রুমে আসে। হিয়া আর নাতাশা রাদকে খেয়াল করে নাতাশা চোখের ইশারায় হিয়াকে বুঝায় রুম থেকে চলে যাওয়ার কথা। হিয়া নাতাশার ইশারা অনুযায়ী রায়ার পাশ থেকে সরে এসে নাতাশার সাথে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ যাওয়ার সময় দরজার ভেজিয়ে দিয়ে যায়।
তারা যেতেই রাদকে দেখে রায়া অসস্তিতে গাঁট হয়ে বসে থাকে। কাল রাত থাকে তার স্বামীর সাথে সেভাবে কথা বলেনি সে। এখন এমন লজ্জাহীন কথা তার শ্বাশুড়ি মায়েদের সামনে বললো লোকটা। লজ্জা যেনো শাড়ির মতো পেচিয়ে ধরেছে রায়াকে৷ রাদ ব্যাপারটা খেয়াল করলো। বউভাতে পরার জন্য রায়ার শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কেনা পান্জাবি,পাজামা, কুর্তা বের করে নেয়। বের করে খাটের উপর রেখে দরজা লক করে দিয়ে পরনের টিশার্ট খুলতে খুলতে বলে,
” স্বামী হই আপনার। আপনার গায়ে কলঙ্ক হওয়ার অধিকার আছে আমার৷ এতে এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই৷ ”
রাদের কথায় রায়া মাথা তুলে তাকায়। তার সামনেই রাদকে টিশার্ট খুলতে দেখে আরও অসস্তিতে পরে যায় রায়া। বিরক্তির স্বরে বলে,
” ওয়াশরুম আছে তো ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য। এখানেই করতে হলো! ”
” রুমে আমার বউ বসে আছে, কোনো পরনারী নয়, যে আমার লজ্জা পেতে হবে। আর পুরুষ জাতীর নাকি লজ্জা এমনিই কম। সেখানে বিয়ে করা বউয়ের সামনে লজ্জা পাওয়া মানে হয়। ”
রাদের একরকম ছন্নছাড়া কথায় প্রচুর বিরক্তবোধ করে রায়া। সে দাত কি’ড়মি’ড়িয়ে উত্তর দেয়,
” আপনি বুঝতে পারছেন না, এই বিয়েতে আমার মতামত ছিলো না। তবুও এতো নরমালই বিহেভ কেনো করছেন? আমি মানতে পারবোনা আপনাকে। ”
” সম্পর্ক যখন জুড়েই গেছে, তখন অস্বীকার করার রাস্তা নেই মিসেস বৃষ্টি জাহান রায়া। ”
কথা বলতে বলতেই রাদ কাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুল সেট করে নেয় জেল দিয়ে। বডি স্প্রে দিয়ে নেয়। এরপর দাড়ায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলে বসা রায়ার পাশে। তারপর বলে উঠে ,
” দেখুন কি সুন্দর লাগছে আমাদের একসাথে। ”
রায়া চোখ তুলে তাকায় রাদের কথা শুনে। রাদের মুখে বৃষ্টি নাম শুনে ক্ষণিকের জন্য ঘোরে চলো গিয়েছিলো সে। সেই বৃষ্টিমাখা দিন, একজনের মুখে রেইন ডাক৷ আবার সেই অন্তরদ’হ’ন। এরপর রাদের কথা। ড্রেসিং টেবিলে দৃষ্টিপাত করে। তার স্বামীকে প্রথম বার ভালো মতো দেখে। তার স্বামী নামক মানুষ টা সুদর্শন, কিন্তু তার পাশে রাদকে স’হ্য করতে পারছেনা রায়া। চোখ বন্ধ করে নেয়। টপটপিয়ে অশ্রু ঝ’ড়ে পরে রায়ার চোখ দিয়ে। রাদ তখনই বলে উঠে,
হিয়ার মাঝে পর্ব ২
” সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিন রায়া। কথা দিলাম এভাবে কাঁদতে দিবো না। ”
” অথচ আজ আপনি আমার কান্নার কারণ। ”
রায়া কথাটুকু বলেই তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দেয়। তখন দরজায় কারোর নক পরে। রাদ রায়ার দিকে একপলক দেখে তার পাশ থেকে সরে দরজার দিকে অগ্রসর হয়।