সুখের অনুভব শেষ পর্ব
Jhorna Islam
আজানদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বারোটার উপরে বেজে গেছে।
গাড়ি আজানই ড্রাইভ করে এসেছে। গাড়ি এসে বাড়ির গেটের কাছে থামতেই দারোয়ান গিয়ে গেইট খুলে দেয়।আজান গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে পরে।
গাড়ি পার্কিং ল’টে এসে থামায়। তারপর তুলনার দিকে তাকায়। গাড়ির ঝা’কিতে তুলনার চোখ খুলে তাকায়।
তারপর আজানের দিকে তাকিয়ে বলে,,, জা’ন কই আছি আমরা?
ঘুম ভেঙে গেলো?
হুম।
বাড়িতে এসেছি নামো। পারবাতো নামতে? নাকি আবার ঘুমের ঘোরে পরে যাবা?
নাহ্ পারবো না আমি।তুমি আসো আমি গেলাম।বলেই চোখ কচলিয়ে বাড়ির ভিতরে হেলতে ঢুলতে ঢুকে পরে।
আজান তার অফিসের ফাইল নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে সেও বাড়ির ভিতরে হাঁটা দেয়।
তুলনা এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে ঢুকে পরে। তার এখন ঘুম প্রয়োজন। জামা কাপড় না পাল্টেই পায়ে জোতা সহ গিয়ে শুয়ে পরে। বেশি সময় ও লাগেনি আবার ঘুমিয়ে যেতে।
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
আজান রুমে এসে দেখে তুলনা ফ্রেশ না হয়েই পায়ে জোতা সহ ই ঘুমিয়ে আছে এলোমেলো হয়ে। এক পা বিছানায় আরেক পা নিচে ঝুলছে। আজান তুলনাকে দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। এই মেয়েটাও না এভাবে কেউ ফ্রেশ না হয়েই ঘুমায়? ঘুমিয়েছে ভালো কথা ঠিকঠাক ভাবে তো শুবে। জোতা সহ ই ঘুমিয়েছে আছে। পায়ে পরে ব্যাথা পাবে।
আজান ফাইলটা সোফার উপর রাখে।তারপর বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে। তুলনার পা থেকে জোতা জোরা খুব যত্ন সহকারে খুলে দেয়। তারপর উঠে গিয়ে ঠিক ঠাক ভাবে বালিশে মাথা দিয়ে শুইয়ে দেয়।
তুলনা নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।
আজান তুলনাকে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে,ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায়। কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে আসতেই শুনতে পায় কেউ দরজায় নক করছে।
আজান দরজা খুলে দেখে তার মা এসেছে। হাতে খাবারের প্লেট। আজানের মা আজানকে দেখেই মুচকি হাসে। আজান ও বিনিময়ে হাসি উপহার দেয় তার মাকে।
বাবা এভাবে কেউ কাজ করে? এমন ভাবে চলতে থাকলেতো অসুস্থ হয়ে যাবি। নে আমি খাবার নিয়ে এসেছি। দুইজনে খেয়ে নে দেখি।
আম্মু এসব কেনো আনতে গেছো? আমরা খেয়ে এসেছি। শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলা। আর এতো রাত অবধি জেগে আছো কেনো? অসুস্থ হয়ে পরবা তো।আমরা কেউ এখন খাবো না।যাও এসব রেখে গিয়ে ঘুমাও তুমি।
তুলনা কে জিজ্ঞেস করে দেখ যদি খায়।যা অল্প খাবার খায় হয়তো খিদে লেগেছে।
সেকি আর খাওয়ার জন্য বসে আছে? সে ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে গেছে। অফিসে ঘুমিয়েছে।গাড়িতে ও ঘুমিয়েছে। আবার বাড়িতে এসে ফ্রেশ না হয়েই আবার ঘুম দিয়েছে।
আচ্ছা বাবা তাহলে তুইও আর দেরি করিস না ঘুমিয়ে পর।অনেক রাত হয়ে গেছে।
হুম তুমিও গিয়ে ঘুমোও আর কখনো আমার জন্য অপেক্ষা করে রাত জেগে থাকতে হবে না। এখন বড় হয়ে গেছি না?
আজানের মা যেতে যেতে বলে সন্তানরা কখনো মায়ের কাছে বড় হয় না বাবা।তুই আমার কাছে সেই ছোট্ট আজানই আছিস।সন্তান বাড়িতে না আসা পর্যন্ত বাবা মা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে না।যেদিন বাবা হবি সেদিন বুঝবি।
আজান মায়ের যাওয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়।তারপর দরজা লাগিয়ে তুলনার মুখের দিকে তাকায়। কি শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে মেয়েটা।
আজ আহান আর রিয়ার রিসেপশন পার্টি।রিয়ার বাবা মা রিয়া আর আহানকে আজই বাড়িতে নিয়ে যাবে।
আহান প্রথমে না করেছিলো যে সে এই অবস্থায় যাবে না।আহানের কথা শুনে রিয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। মুখটা কালো করে ফেলে।তাও আহান কে জোর করে না যাওয়ার জন্য।
আহান রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রিয়ার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারে। বেচারি হয়তো আশা করে আছে নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
তাই আহান রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,, ঠিক আছে যাবো আমি। আজকেই যাবো।
রিয়া আহানের কথা শুনে পারে তো আনন্দে লাফিয়ে উঠে। মুখটা মুহূর্তের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
আহান রিয়ার হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে মেয়েটা এতোকিছুর পরও আহানের সাথে থাকতে চায়।সব জেনেও আহানকে বিয়ে করেছে।বন্ধু হয়েছে। এটুকু তো সে করতেই পারে।
সবাই পার্টির জন্য তৈরি হচ্ছে। আজান ও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তুলনা সে চুপচাপ বিছানায় বসে বসে নখ কা’ম’ড়াচ্ছে।
আজান শার্ট গায়ে দিতে দিতে তুলনার দিকে তাকায়। তারপর একটা ধমক মারে,,,
এসব কি ধরনের নোংরা অভ্যাস? নখ কামড়াচ্ছো কেনো? তুমি কি বাচ্চা?
তুলনা আজানের ধমকে কেঁপে ওঠে। আজানের দিকে তাকায় কিছু বলে না।
কি হলো কথা বলছো না কেনো?
— এমনি।
— কি এমনি এখনো তৈরি হচ্ছো না কেনো? সবাই তৈরি হয়ে গেছে প্রায়। তুমি এখানে বসে আছো।
— আমি যাবো না।
— যাবে না মানে? যাও চুপচাপ তৈরি হয়ে আসো এক সাথে যাবো।
তুলনা এবার একটু জোরেই বলে আমি কি করে যাবো? আমার সব ভালো জামা গুলো দিয়ে দিয়েছো। আজকের জন্য রেখে দেওয়া জামাটা ও বাদ দেও নাই।আমি কেন যাবো? যাবো না তুমিই যাও।
আজান এতোক্ষনে বুজলো কেনো ম্যাডাম গাল ফুলিয়ে চুপচাপ বসে আছে। নয়তো সবার আগে তৈরি হয়ে ঘুরঘুর করতো।
কাবার্ড টা খুলেছিলে আজ?
নাহ্
খুলে দেখো যাও।
আমি পারবো না
খুলতে বলছি আমি যাও!
তুলনা এবার উঠে গিয়ে কাবার্ড খুলে। দ্বিতীয় তাকে চোখ যেতেই দেখে একটা প্যাকেট রাখা আছে। প্যাকেট টা বের করে বিছানায় এসে বসে।তারপর খুলে চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দেয়।একটা সুন্দর লং গাউন। কি সুন্দর লাগছে। এটা আমার জন্য এনেছো?
নাহ্ শরিফার জন্য । দাও ওকে দিয়ে আসি।
এএএ একদম না এটা আমার। কখন এনেছো? আমিতো দেখলামনা আনতে।
সকালে বাইরে গিয়েছিলাম।এটার জন্যই গিয়েছি।জানিতো ম্যাডাম মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে।যাও এবার তৈরি হও গিয়ে।
রিসেপশন পার্টিতে সকলেই আহান আর রিয়াকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। গিফট দিয়ে তাদের দুজনের জন্য দোয়া করে যাচ্ছে।
তুলনা আর আহানা,,রিয়া আর আহানের সাথে নানান পো’সে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। একেরপর এক তুলেই চলেছে।
তারপর তুলনার মাথায় এলো সবার সাথে সেলফি নিলেও।আজান আর নতুন বর কনের একসাথে সেলফি নেওয়া হয়নি। এদিকে ওদিকে আজান কে খুজতে থাকে। তারপর চোখ যায় কর্ণারে আজান দাঁড়িয়ে একটা লোকের সাথে কথা বলতে বি’জি।
আজানের পাশে গিয়ে আজানের হাত টেনে ধরে নিয়ে আসে।আজানকে কিছু বলার ও সুযোগ দেয় নি। তারপর সবাই এক সাথে সেলফি নিতে থাকে। আহানা তুলে দিচ্ছে। আহান, রিয়া আর তুলনা আজান একসাথে ক্যামেরায় বন্দি।
পরিবারের লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে হাসে।কি সুন্দর লাগছে। মনে মনে দোয়া করে এভাবেই যেনো সারাজীবন সুখে শান্তি তে থাকে ওরা।
সমাপ্ত।
বিঃদ্রঃ এতো তারাতারি শেষ করে দেওয়ার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। ভবিষ্যতে এখান থেকেই এর দ্বিতীয় পার্ট আনার চেষ্টা করবো। কিছুদিনের মধ্যেই আপনাদের জন্য নতুন কাহিনির নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো।