সুখের অনুভব পর্ব ৭

সুখের অনুভব পর্ব ৭
Jhorna Islam

আজানের কথা শুনে তুলনা মুচকি হেসে দেয়। আহা মন প্রাণ সব জুড়িয়ে গেলো।
তুলনা আবার ফুল নিয়ে পরেছে।
আজানের মেঝো চাচি মজা করে বলে,, কিরে তুলু এতো ফুল দিয়ে তুই কি করবি? কিছু দে আমাদের আহানের বাসর সাজাই!

একদম না ওদের বাসর সাজানোর জন্য আলাদা ফুল এনেছে। এগুলো সব আমার কাউকে দিবো না।অনেক কষ্টে পেয়েছি। হুহ্ আবার খুজতে আসে।
আহানা তুলনার পাশে মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে। একবার ফুলের দিকে তো একবার তুলনার দিকে তাকাচ্ছে।ওর ও নিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই তুলু তো কাছেই ঘেষতে দিচ্ছে না।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

তুলনা ফুল গুলো নাড়াচাড়া করতে করতেই আহানার দিকে তাকায়। আহানাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,এই আনা আয় আয় আমি আবার এতো নির্দ’য় না।
এমন হা’ভাতের মতো তাকায় থাকতে হবে না। পরে আবার নজর লেগে তারাতারি নষ্ট হয়ে যাবে।
নেহাত তোর জামাই নাই, তা নাহলে ফুল কেনো,,একটা ফুলের পাতাও দিতাম না।সব আমার জামাই আমার জন্য এনে দিয়েছে। আমার জান ভাইয়া।

এবার আমান বলে,, তাহলে তোর জা’ন ভাইয়া হলে ওর ও তো জান ভাইয়া ই হয়।তাহলে তো দুজনের সমান সমান অধিকার তাই না? আহানা ও অর্ধেক ফুল পাওনা এখান থেকে কি বলো সবাই?
সবাই এক সাথে বলে তাইতো।আমান ঠিকইতো বলেছে।তুলনা আহানা কে ও এখান থেকে অর্ধেক দিয়ে দে।
এই একদম না অল্প দিচ্ছি এই অনেক। তোমরা সবাই এক জোট হয়ে নেমেছো আমার বিরুদ্ধে তাই না? ভাই বাদ আমিতো ভুলে ভাইয়া বলে ফেলেছি।জা’ন তো আমার জামাই লাগে জামাই।আমার জামাই জান।

তুলনার কথা শুনে সকলে এক সাথে হেসে দেয়। পা/গলি একটা।সবার আদর পেয়ে সেই ছোটোদের মতোই আচরণ করে। মে’চি’উ’রি’টি এখনো আসলো না তার মধ্যে।
এই আনা কি করা যায় বলতো এতো ফুল দিয়ে? কিছু ঘর সাজাবো।কিছু দিয়ে শাড়ি পরে ফটোগ্রাফি করবো।অনেক দিন তো থাকবেনা তাই নারে? কিছু দিয়ে রুপ চর্চা করার প্রডাক্ট বানাবো। আরো যদি বেঁচে যায় ঐগুলো দিয়ে তোদের জন্য নতুন আইটেম এর খাবার বানাবো হু হা হা হা!

সবইতো বললি। আমি একটা ভালো বুদ্ধি দেই?
দে দেখি কি বুদ্ধি দেস তুই।
এখান থেকে আমাকে কিছু দে।
দিলাম। তারপর?
আজতো ছোটো ভাইয়ার বাসর রাত তাই না?

— হুম তো?
— তোর কিন্তু একটা চান্স আছে।
— কিসের চান্স?
— অহনা তুলনার মাথায় গা’ট্টা মেরে বলে আরে গা’ধী বুঝলিনা?
— কি বুঝবো?
— আমাকে বলতে পারিস।আমি খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে তোদের রুমটা সাজিয়ে দেই।২য় বারের মতো বাসর টা সেরে ফেল কি বলিস? বলেই তুলনাকে চোখ মারে।

তুলনা আহানার কথা শুনে ফুল রেখে তুলনা কে দৌড়াচ্ছে মারার জন্য। তর বুদ্ধি দেওয়া আমি বের করছি দাঁড়া। তোর মাথা ফাটাবো আমি আনা। তুই ভুলে গেলি আমি তোর বড় ভাবি হই।লজ্জা করলো না বলতে? বেশি পেকে গেছিস তাই না? দাড়া সবাইকে বলে তর বিয়ের ব্যবস্থা করছি আমি। আর তোর ভাইয়ার কাছে বলবো তো আমি তুই যে আমায় এসব বলেছিস। তখন বুঝবি মজা!

আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,,ভাইয়া আমায় কিছুই বলবে না।আরো খুশি হবে আমি যদি এই কাজটা করে দেই। এমন ও হতে পারে ভাইয়া আমায় গিফট ও দিবে। আমায় না দৌড়ে আয়, আমি তোকেও সুন্দর করে সাজিয়ে পাঠাই ফুল দিয়ে।
তোরে আমি হাতের কাছে পাইরে আনা তর খবর আছে।
হুহ আমায় ধরতে পারলেতো খবর করবি।
আমি তোকে ধরতে যাবো কেনো? তুই আমার কাছে নিজে থেকেই এসে ধরা দিবি দেখেনিস।

রিয়া অনেক সময় ধরে খাটে বসে আছে। মূলত আহানের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে দেখতে পায়,, আহান কে এ বাড়ির দুজন গার্ড হুইলচেয়ারে করে নিয়ে আসছে।
প্রথমে রিয়া একটু দ্বিধায় ছিলো।বাড়ির বড় কেউ আহান কে নিয়ে আসলে লজ্জায় পরতে হতো।ভা’জ্ঞি’স বাড়ির কেউ নিয়ে আসেনি।

গার্ড দুটো আহানকে রুমে ঢুকিয়ে বিছানায় বসিয়ে চলে যায়।
রিয়া গিয়ে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। ফ্রেশ হয়ে গিয়েছিলো রিয়া আগেই। রিয়া গিয়ে আহানের পাশে চুপটি করে বসে।
রিয়া পাশে বসাতে আহান একটু নার্ভাস ফিল করে।রিয়া সেটা হয়তো বুঝতে পারে। তাই নিজের হাতটা আহানের হাতের উপর রাখে।

আহান এবার রিয়ার দিকে চোখ তুলে তাকায়।
এতো নার্ভাস হচ্ছো কেন? আমিইতো। যেখানে আমার নার্ভাস হওয়ার কথা সেখানে তুমি হচ্ছো।
আহান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,তুমি কেনো নিজের ইচ্ছেতে নিজের লাইফ টা নষ্ট করলে রিয়া?
— আমি আমার লাইফ নষ্ট করিনিতো। তোমাকে পেয়ে আমার লাইফ টা ধন্য হয়েছে।
— তুমি আরো বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো রিয়া।
— উফফ আহান! তুমি আবার এসব লে’ই’ম ডায়লগ দিও না। আমার বেটার কাউকে চাইনা। তোমাকে পেয়েছি আর কাউকেই চাইনা।

— আমার সম্পর্কে এতোকিছু জেনেও তুমি এসব বলছো?
আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম।সে আমায় ধোকা দিয়েছে।আমার পায়ের অবস্থা দেখেছো? কবে ভালো হবে জানি না। আদৌ ভালো হবে কিনা তাও জানি না।
— এখন এসব কথা গুলো কেনো বলছো আহান? আমিতো সব জেনেই তোমায় ভালোবেসেছি, বিয়ে করেছি।
— আমার মন তো ধোকা খেয়ে বসে আছে রিয়া।তোমাকে কিভাবে সহজে মেনে নিবো?

তোমার জোর করে সব মেনে নিতে হবে না আহান।তুমি সময় নাও।যতদিন ইচ্ছে সময় নাও।আমার কোনো আপত্তি নেই।শুধু তোমার পাশে রেখো।তোমার সেবা করার সুযোগ দিও আহান। তুমি দেখো তোমার পা খুব তারাতাড়ি ভালো হয়ে যাবে। আমাকে ভালোবাসতে হবে না জোর করে আহান।তোমার মন যে সময় সায় দেয় ঐই সময়ই তুমি ভালোবেসো।এখন না হয় আমরা বন্ধু হিসাবে থাকি।

— আমরা কি বন্ধু হতে পারি না আহান? বলেই হাত বাড়ায়।
— আহান রিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। মেয়েটা এতোকিছুর পরেও নিজের ভালোবাসার জন্য সব করছে। আহান আর কিছু না ভেবেই নিজে হাত বাড়িয়ে হাত মিলায় রিয়ার সাথে।অবশ্যই আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
সম্পর্কের মূল ভিত্তি ই কিন্তু বন্ধুত্ব আহান।আজ থেকে তোমার পাশে সবসময় আমায় রাখবে।বলেই মুচকি হাসে।
তারপর আহানকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শরীরে কাঁথা টেনে দেয়। লাইট অফ করে নিজেও আহানের পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরে।

সকাল সকাল যে যার কাজে বেরিয়ে গেছে।রিসেপশন পার্টি আরো দুই দিন পরে দেওয়া হয়েছে।
এখন প্রায় সকাল দশটা বাজে। সবারই প্রায় খাওয়া দাওয়া শেষ। শুধু তুলনা বাকি আছে। সে আরামছে পরে পরে ঘুমুচেছ। আজান ও ডেকে যায় নি। ঘুমোচেছ ঘুমাক।উঠলেই আবল,তাবল বকতে থাকে সারাক্ষণ। যতসময় ঘুমায় ততক্ষণ ই সব ঠান্ডা।

অনেক বেলা হয়ে গেছে, তুলনা এখনো উঠেনি দেখে।আজানের মা শরিফা কে পাঠায় ডেকে আনার জন্য। নয়তো আরো লেট করে খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
তুলনা মাত্রই আড়মোড়া ভেঙে ঘুৃম থেকে উঠে বসেছে। এর মাঝেই শরিফা এসে হা’জির।

— আফা মনি আমনে উঠছেন?
— চোখে দেখতে পাস না?
— আমনে আমার ডাক দেওয়ার আগে কেন উঠলেন?
— দেখ এমনিতেই সকাল সকাল তোর মুখটা দেখিয়ে কালকের নিভে যাওয়া রা’গ টায় আবার ধোঁয়া ছুটতেছে আগুন উঠার জন্য। সো চুপ যা।

সুখের অনুভব পর্ব ৬

— আফা মনি আমনে আমার উপর রাগ করে আছেন কেনো?
— শরিষা খেত যাতো এখান থেকে।
— আফামনি আমার নাম শরিফা বানু।আমনে আমারে শরিষা খেত কন কিললাই?
— আমার ইচ্ছে তোর কি? আমার ইচ্ছা হলে তোকে শরিষা খেত ডাকবো।নয়তো মূলা খেত যা ভাগ।

সুখের অনুভব পর্ব ৮

1 thought on “সুখের অনুভব পর্ব ৭”

Leave a Comment