সুখের অনুভব পর্ব ৬
Jhorna Islam
জা’ন ভাইয়া হয়েছে কি,,,
হুম কি হয়েছে? তুলনা আপু? বলেই তুলনার হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে আজান।
তুলনা ব্যাথায় চোখ মুখ কোচকে ফেলে।ছিঃ কি বলো এগুলো? আমি তোমার আপু? বউকে আপু বলতে লজ্জা করলো না? মানলাম আমি তোমার ফোপাতো বোন।তাও তো তুমি আমায় আপু বলতে পারো না কারণ আমি তোমার ছোট। আর সব কথার এক কথা আমি তোমার বিয়ে করা একমাত্র বউ হই বউ।
ওহ তাই নাকি আপনার মনে আছে আপনি যে আমার বউ? বউরা বুঝি তাদের বর কে ভাইয়া বলে ডাকে?
তুলনা মিনমিনে স্বরে বলে,,, আমি কি সব সময় ডাকি? তুমি জানোনা বেশি খুশি হলে,,বেশি এক্সাইটেড হলে,আর ভয় পেলে তোমায় আমি ভাইয়া বলে ফেলি? তাই বলে তোমাকেও বলতে হবে কেনো?
এসব বাদ তোমাকে না কি যে নো দিতে বলছিলে এতক্ষন আবার বলো একটু শুনি।
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
ওটাতো মজা করে বলেছিলাম।সব সিরিয়াস নাও কেন? সব কিছু মজার ছলে নিবা বুঝলা? শুধু আমার ভালোবাসা কে সিরিয়াস নিবা। জাননন যেতে দাও না। আমার দায়িত্ব পালন করে আসি ভাবি হিসাবে দায়িত্ব আছে না একটা?
কচু আছে।কি দায়িত্ব টা পালন করেছো শুনি।সারাক্ষণ তো শুধু ঢেংঢেং করে ঘুরে বেরিয়েছো।আর আমায় দেখলে লুকিয়েছো।
— ছাড়ো আমি ওদের কাছে যাবো।
— কি যেনো বলছিলে সেটা আগে বলো।তারপর ছাড়ার কথা ভেবে দেখবো।
— কিছু বলিনি তো তুমি বেশি শুনেছো কানে।
— আজান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আবার বলে,,,না না তুমি কানে বেশি শুনোনি তো।আমার মুখ বেশি বলেছে।
— যেতে দাও! সবাই দেখলে কি ভাববে বলো তো।
— আই ডোন্ট কেয়ার।এবার ফটাফট তোমার বলা বাক্য গুলো আবার রি’পি’ট করো। একেবারে ফাস্ট থেকে লাস্ট পর্যন্ত বলবা ওকে?
তুলনা এবার কোনো উপায় না পেয়ে মুখ কাচুমাচু করে বলতে শুরু করে,,,,,
“ফুল দিও, কলি দিও, কাটা দিও না।
আস্তে করে,,,,,,,
থামলে কেনো বলো বলো
আস্তে করে চুমো দিও কা’মড় দিও না।
তুলনার ছন্দ শুনে আজান অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কিছুক্ষন হাসে।তারপর বলে,, ওকে আস্তে করেই দিবো বাট চুমু না কা’মড়।
আস্তে করে কা’ম’ড় দিবো চুমু দিবো না। ঠিক আছে না?
নাহ একদম ঠিক নাই।ছাড়ো প্লিজ আমায়।
নো ছাড়াছাড়ি বলেই আজান তুলনাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে।তুলনা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ এই দিকে আছে কি না। আজান তুলনার কাছে এসে মুখটা তুলনার গালের কাছে নিতেই শরিফা কোথা থেকে এসে ভাইজান বলে হাজির হয়।
আজান তুলনাকে ছেড়ে শরিফার দিকে তাকায়। তুলনা তারাতাড়ি আজানের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
ও আফা মনি ভাইজান আন্নেরা এইহানে? আর আমি সব জায়গায় খুইজা হয়রান হইয়া গেছি।
কেনো খুঁজতেছিস শরিফা কিছু দরকার?(আজান)
হ ভাইজান দরকারের লিগা অই।আমারে দেহেন তো কেমন লাগতাছে।এই যে কালকা আমনে জামা গুলা দিছেন না? ঐহান থেইকা একটা পরছি। আরো আগেই পরতাম কাম করছিতো হের লাইগা পরি নাই।ময়লা হইয়া যাওয়ার ভয়ে।এহন পইরা আসলাম দেহাইতে। আমনে তো কইছিলেন অন্য কাউরে দিয়া ফেলাইতে নয়তো পুইড়া ফেলাইতে।কতো সুন্দর সুন্দর জামা গুলান আমার দেইখাই পছন্দ হইয়া গেছে। আর আফামনির পছন্দ আছে।কতো সুন্দর সুন্দর জামা গুলান আহা দেখলেই পরাণডা জুড়ায় যায়।এবার শরিফা একটি লজ্জা পাওয়ার ভা’ন করে বলে আফামনি ভাইজান কইলেন না আমারে কেমন লাগতাছে?
তুলনা এতোক্ষনে শরিফার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। তুলনা এতোদিন মিলে বিয়েতে যেই ড্রেস টা পরবে বলে ঠিক করেছিলো। সবার সাথে গিয়ে নিজে পছন্দ করে এনেছিলো সেই ড্রেসটাই পরেছে শরিফা।
এই দৃশ্য চোখে দেখে কি ঠিক থাকা যায়? একদম না।তুলনা ও নেই।ভিতরে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। একবার শরিফার দিকে তো একবার আজানের দিকে তাকাচ্ছে।
আজান মনে মনে বলে,,, এই মেয়েটাকে ড্রেস গুলো দেওয়াই ভুল হয়েছে ধুর আবার গ’ন্ড’গো’ল করে দিলো।দিয়েছি পরবি ঠিক আছে। তোকে আজই কেনো পরতে হবে? পরেছিস তাও ঠিক আছে এখানে কেন এলি? এমনিতেই ফুলের বিষয় টা নিয়ে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
আজানের এসব ভাবনার মাঝেই তুলনা জোরে জোরে শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে ডাকতে থাকে। ডাকতে ডাকতে এখান থেকে চলে যায়।
শরিফা তুলনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,, ভাইজান আফামনি আমারে কেমন লাগতাছে না বইলা চইলা গেলো কেন?
তোর মাথা ফাটানোর ব্যবস্থা করতে গেছে। সাথে আমারটাও। যা এখন এইখান থেকে।বলে আজানই চলে যায়।
বাড়ির সকলে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে যাবে।অতিথিরা সকলে মাত্রই বিদায় নিয়ে গেছে।এমন সময় তুলনা এসে হা’জির।
গিয়ে আজানের বাবা মায়ের কাছে দাড়িয়ে বলে,,আব্বু আম্মু আমি বাড়ি যাবো।
আজানের আব্বু বলে হ্যা ঠিক আছে যেও।কিছুদিন পর গিয়ে থেকে এসো।
আমি কিছুদিন পরের কথা বলছিনা।আমি এখনই বাড়ি যাবো।
তুলনা মা বাবা মায়ের উপর রা’গ করেছিস আসতে পারেনি বলে? রাগ করিস না।আমার ও তো বোন,,সবার আদরের একমাত্র বোন।সে আসতে পারেনি আমাদের ভালো লাগছে? কিন্তু কি করার বল কাজে আটকে গেলে।
আব্বু এজন্য রা’গ করিনি।আমি এখন বাড়ি যেতে চাই ব্যস।
এবার আজানের আম্মু এসে তুলনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কি হয়েছে আম্মুটার? খুব মন খারাপ লাগছে বাড়ির জন্য? কিছুদিন পর যেও আম্মু। বাড়ির ঝামেলা গুলো মিটুক।আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো। এখন তো কতো ঝামেলা দেখো না? আবার রিসেপশন আছে।তুমি বাড়ির বড় বউ তুমি যদি না থাকো তাহলে চলবে?
আজান এতো সময় পাশে দাড়িয়ে এদের সব কথাই শুনছে নিরব দর্শক হয়ে। তুলনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কেউ যখন দিতে রাজি হলো না। তখন তুলনা বলে ধূর তোমাদের কারো সাথেই আমি আর কথা বলবো না।যাবোও না কোথাও। কেউ আমায় ভালোবাসে না।তোমরা সবাই আমার পর।আমি তোমাদের কাউকেই চিনি না।বলেই হনহন করতে করতে রুমে চলে গেলো।
আজানের মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,এই পা/গলির আবার বাড়িতে যাওয়ার ভূত কেনো মাথায় চাপলো কে জানে?
তারপর ধীরে ধীরে সবাই যে যার রুমে চলে যেতে থাকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
রাত যখন নয়টা বাজে তখন সবাই ড্রয়িংরুমে বসে নানান আলাপ আলোচনা ও আড্ডাতে ব্যস্ত।আজান ও তাদের সাথে সামিল হয়েছে। তবে সে সবার কথার মাঝে মনোযোগী না।সে তো তার ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে সবার কথা শুনে হুু-হ্যা উত্তর দিচ্ছে।
তুলনা নিজের রুমে ঘা’পটি মেরে বসে আছে। কেউ ডেকে বা জোর করেও নিচে নামাতে পারেনি।
যে ই গেছে ডাকতে সেই এক কথা,,,,,,, তোমরা আমার কেউ না।তোমাদের কাছে আমি যাবো না।আমি একাই ভালো কেউ আমায় ভালোবাসে না।
তুলনার কথায় সবাই হা’ল ছেড়ে চলে যায়।
তুলনা নিজের রুমে বসে বসে মন খারাপ করে ফোন ঘা’টছে।সব কিছু বিরক্ত লাগছে তার।এমন সময় কেউ ঠাস করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। তুলনা ভেবেছে আজান এসেছে। এবার আর ভ’য় পাবে না।যদি কিছু বলতে আসে তাহলে লোকটা কে আচ্ছা মতো কথা শুনিয়ে দিবে আজ।ভেবেই মাথা তুলে দরজার দিকে তাকায়।
দরজার দিকে তাকিয়ে তুলনার মেজাজ টা আরো খারাপ হয়ে যায়। শরিফা হাটুতে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁপাচ্ছে।
অইই আফা মনি গো আমনে এইহানে বইয়া রইছেন? নিচে কি কান্ড হইছে দেইখা যান।
শরিফা তুই এখন যা।আমার রা’গ বাড়াবিনা।
আরে আফামনি পরে রাগ৷ কইরেন।নিচে কি ঘটছে দেখলে আমনের আর রা’গ থাকবো না গো।হা কইরা তাকায় থাকবেন খালি।
মানে? কি হয়েছে?
আহেন আফামনি আমনে আমার লগে আহেন।নিজের চোখে দেহেন।বলেই তুলনার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেলো।
তুলনা নিচে নামতেই একটা লোক এগিয়ে এসে বলে,,ম্যাডাম আপনার জন্য পার্সেল এসেছে একটু এখানে সাইন করে পার্সেল টা নিন।তুলনা তার জন্য কি পার্সেল এসেছে ভাবতে ভাবতেই সাইন করে।তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে মুখ হা হয়ে যায়। এ কি দেখছে সে?
পুরো ফুলের রাজ্য তুলে নিয়ে এসেছে লোক গুলো।কতো শতো ফুল। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন সব ধরনের ফুলই প্রায় এখানে রয়েছে।লোকগুলো ফুলের তোরা গুলো রেখে চলে যায়। তুলনা মুখ হা করে ফুলের দিকে এগিয়ে যায়।
বাড়ির সবাই মিটমিটিয়ে হাসে। তাদের বুঝতে বাকি নেই এই কান্ড কে ঘটিয়েছে। অথচ দেখো লেপটপে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।যে নো সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
তুলনা সব গুলো ফুল মুগ্ধ হয়ে দেখছে আর ছুঁয়ে দিচ্ছে। উফফ কি যে ভালো লাগছে। কতো রকম,কতো কালারের ফুল। দেখলে যে কারো মনই খারাপ ই ভালো হয়ে যাবে।
এতো এতো ফুল দেখো আহানা ও তুলনার পাশে গিয়ে ছুঁয়ে দিতে নেয় ফুল।
খবরদার আহানা একটাও ধরবিনা।সব আমার।কতো কিছু করে এই ফুল পেয়েছি জানিস তুই? আবার ধরতে আসিস যা ভাগ।
আহানা মন খারাপ করে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
তুলনা খুশি মনে লাফালাফি করছে আর ফুল গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। আজানের দিকে এবার হাসি মুখে তাকায়।তার আর রা’গ অভিমান কিছুই নেই আজানের প্রতি। ফুল পেয়ে সব হাওয়া।
আজান লেপটপ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তুলনার পাশ দিয়ে যেতে যেতে তুলনার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে ,,,,, সে এই ফুলের জন্য মন খারাপ করবে তাকি মেনে নেওয়া যায়?
সুখের অনুভব পর্ব ৫
“সে চাইলে তো আজানের জা’ন ও কো’র’বা’ন।”
তার রা’গ অভিমান গুলো’ও আমার কাছে ভালোবাসা মনে হয়!’