সুখের অনুভব পর্ব ৫
Jhorna Islam
আজানের মুখে তুলার বালিশ কথাটা শুনে আহানা ফিক্ করে হেসে দেয়। ভাই তোমার তুলার বালিশ আলাদা করে দেখার কি আছে? আমাদের ও তো আছে। আর বালিশ তোমার রুমে হয়তে এখানে খুজতেছো কেনো?
আমাদের ও তুলার বালিশ ই লোহার না।
শাট-আপ।মজা করিস আমার সাথে? লাগাবো দুইটা কানের নিচে। দুটোতে এক সাথে থেকে বা’দর হয়ে গেছে। তোদের একটু টাইট দিতে হবে। ঐ মহারানী কই?
তোমার মহারানী মুখ ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভাই।কালকে সে নেচেছে আমি কেনো আটকাই নি তাই জন্য আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছে। তুমি বলো ভাই ও কি কারো কথা শুনে? এখন শুধু শুধু আমার উপর তোমার রাগ ঝাড়ছে। কখন থেকে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাকে সাথে তো নিচ্ছেই না।আমাকে দেখলেই মুখ ভেংচি কাটতেছে।
তুইও ওর মতো ভেংচি কেটে দিস।ফা/জিল দুটো সর এখান থেকে। ঐটারে ধরে নেই ঐটার খবর আছে। একা একা ঘুরে বেড়ানোর সাধ মিটিয়ে দিবো।বলেই আজান অন্য দিকে চলে যায় খুঁজতে।
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
অহনা একটা নিশ্বাস ছাড়ে।তার রাগী ভাই কি করে যে তুলনা কে সামলায় কে জানে। মেয়েটাও হয়েছে জানে ভাইয়ের রা’গ বেশি। তাহলে কেন যে ভাই যেটা পছন্দ করে না ঐটা করে করেই রাগিয়ে দেয়।
আজান তুলনাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলো না।তার কয়েকটা পরিচিত বিজনেস পার্টনারের সাথে দেখা হয়ে যায়।তাদের সাথে কথা বলতেই ব্যস্ত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে চোখ ঘুরিয়ে তুলনাকে খোঁজার চেষ্টা ও করে।
তুলনাকে আজান দেখবে কিভাবে? তুলনা তো আজান কে দেখলেই হয়তো পিলারের পিছনে নয়তো অন্য কোথাও গিয়ে লোকিয়ে পরে।
কনে পক্ষের লোক সবাই এসে গেছে বিয়ে পরিয়ে তারপর সবাই এক সাথে খেতে বসবে এটাই সবাই মিলে ঠিক করেছে। তুলনা গিয়ে রিয়ার পাশে বসে পরে। বেচারি অনেকসময় ধরে উসখুস করতেছে।হয়তো নার্ভাস হয়ে পরেছে।হওয়ারই কথা। তুলনা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে তাইতো গিয়ে রিয়ার পাশে বসে পরে। রিয়ার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখের ইশারায় ভরসা দেয়। রিয়া তুলনার ভরসা পেয়ে একটু সাহস পায়।মুচকি হেঁসে তুলনার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে।
আজান তুলনাকে দেখে মুচকি হাসে। তার বৌটা কি রকম রিয়াকে ভরসা দিচ্ছে। আজান ও গিয়ে আহানের পাশে বসে পরে।
ঝামেলা বিহীন ভাবেই ওদের বিয়ে টা সম্পন্ন হয়। রিয়ার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। আনন্দের পানি।নিজের ভালোবাসার মানুষ টা কে নিজের করে নিতে পারার আনন্দে।আড় চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে রয়। আজ থেকে এই মানুষ টা তার।মনে মনে ওয়াদা করে নিজের সবটুকু ভালোবাসা যত্ন দিয়ে আহান কে ভালো করে তুলবে।
খাবার টেবিলে বর কনের সাথে তাদের ভাই বোন সবাই এক সাথে খেতে বসে। আহানের পাশে রিয়া কে বসানো হয়েছে। আহানের অন্য পাশে আহানা বসেছে।
রিয়ার এক পাশে গিয়ে বসেছে তুলনা।তুলনার আরেক পাশে খালি ছিলো।সেখানে আজান এসে বসে পরে।
তুলনা আজানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে নিজের খাওয়ায় মন দেয়। সবাই গল্প করছে আর খাচ্ছে। আজান তার প্লেট থেকে খাবার মাঝে মাঝে তুলনার প্লেটে তুলে দিচ্ছে। তুলনা নিজের প্লেটে খাবার রেখে আজান যেইটা দিচ্ছে সেটাই খাচ্ছে। খাচ্ছে ঠিকই কিন্তু একটা কথা ও বলছে না।আজানের প্রতি খুব অভিমান হয়েছে ফুল নিয়ে।
এসব ভাবনার মাঝেই তুলনা বি’ষম খায়।আজান নিজের খাওয়া রেখে তারাতাড়ি পানি এগিয়ে দেয় তুলনাকে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
“জানের পাখি ধীরে ধীরে খাও।কি এতো ভাবতেছো খাওয়ার সময়?”
তুলনা নিজেকে সামলে আবার খেতে থাকে। আজানের কথাতে পাত্তাই দেয় নি।খাওয়ার মাঝে ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করে ম্যাডাম আপনার কিছু লাগবে?
— হুম লাগবে তো।
— জ্বি বলুন কি লাগবে আমি দিচ্ছি।
— ফুল লাগবে।
ওয়েটার তুলনার কথা শুনে ভ্যা’বা’চ্যা’কা খেয়ে যায়।তুলনার পাশে বসে থাকা আজানের দিকে তাকায়। আমতা আমতা করতে থাকে। ম্যাডাম কি বলছেন এসব?
কেনো আপনি কানে শুনেন না নাকি?
তুলনার ফুল লাগবে বলায় সবাই খাওয়া রেখে তুলনার দিকে তাকিয়ে আছে।
তুলনা সবার দিকে তাকিয়ে বলে,,, সবাই খাওয়া রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো আ’জব?
আর এই যে আপনি কি বলেছি কানে শুনেন না? পোলাও লাগবে পোলাও। এভাবে হা’ব’লার মতো দাড়িয়ে আছেন কেনো? আমাকে পোলাও দেন।
সবাই আবার খাওয়ায় মন দেয়। ওরা ও ভাবছে ওরা ভুল শুনেছে। ওরাতো আর জানে না তুলনা ফুল লাগবেই বলেছে।সবাই যে যার মতো খাচ্ছে ওয়েটার ও নিজের ভুল ই ভেবে নিয়েছে। কিন্তু তুলনার পাশে বসে থাকা আজান আর রিয়া ঠিকই শুনেছে তুলনা ফুলের কথা বলেছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই নানা ধরনের গল্প করছে।কথাবার্তা বলছে। তুলনা দেখতে পেলো কতো গুলো বাচ্চা এক সাথে খেলছে।সে দৌড়ে ঐখানে চলে গেলো।ওদের সাথে বাচ্চাদের মুখ খেলায় মেতে উঠলো।
আজান আর তার বাবা,চাচারা অতিথিদের সাথে গল্প করছে।এরই মাঝে কয়েকজন আজানের ওয়াইফের সাথে পরিচিত হতে চায়।তারা এখনো তুলনাকে দেখে নি।আজান ওদের মানা করতে নিবে তার আগেই আজানের বাবা বলে তুলনা কে নিয়ে আসতে।তাই আজান আর বাঁধা দেয় না।তুলনাকে আনতে যায়।
এদিক ঐদিকে তাকিয়ে দেখে তুলনা বাচ্চাদের সাথে খেলছে।তাই ঐখানে এগিয়ে যায়।। কাছে যেতেই আজান শুনতে পায়,,,, তুলনা তাদের
“আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই,,
ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই।”
কবিতা শুনাচেছ।আজান মনে মনে বিরবির করে আবার ফুল?
আজান তো আর জানেনা তুলনা তাকে দেখেই এই ফুলের কবিতা শুনাচেছ।
আহান আর রিয়া পাশাপাশি বসে আছে। আহান এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বারবার নড়াচড়া করছে।রিয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আহানকে জিজ্ঞেস করে,,,, তোমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে? কিছু লাগবে তোমার?
না মানে,,,,, খুব পানি পিপাসা পেয়েছে তাই ওয়েটার কে খুজছিলাম। আশে পাশে তো তেমন কাউকে দেখছি না।সবাই কথা বলতে বি’জি।
— আমায় তোমার সামনে রেখে ও দেখতে পাওনি?
— মানে?
— মানে আবার কি? এইযে আমি একজন মানুষ তোমার পাশে বসে আছি।আর তুমি অন্য কাউকে খুজতেছো।
— তোমাকে তো দেখতে পেয়েছি ই।
— তাহলে?
— আমিতো কাউকে পানি এনে দেওয়ার জন্য খুঁজছি।
— বু’দ্ধু সেইটার জন্যইতো বলছি।তোমার বউ পাশে বসে আছে। তাকে বলবে পানির কথা তা না করে তুমি অন্য কাউকে খুঁজছো?
— তুমি মানে কিভাবে? তুমি এতোসব ঝামেলা মানে শাড়ি গহনা পরে আছো।এসব নিয়ে তুমি পানি আনতে যাবে? তার উপর সবাই কি বলবে নতুন বউ এসব করলে?
— তোমার এসব না ভাবলেও চলবে।আজ থেকে তোমার যা যা প্রয়োজন আমাকে বলবা।বলেই রিয়া আহানের জন্য পানি আনতে চলে যায়।
আর আহান অবাক হয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।
সন্ধ্যা হতে হতে সব আত্নীয় স্বজন একে একে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে। রিয়ার বাড়ির লোক আর তার বাবা মা ও বিদায় নিয়ে চলে গেছে।
বাড়ির সকলেই তাদের আত্নীয় স্বজন কে হাসি মুখে বিদায় জানাচ্ছে। আজান ও তাদের সাথে সামিল হয়েছে। তুলনার বাবা,মা শেষ মুহূর্তে আসতে পারেনি বিয়ে তে।একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গেছে। দুপুরে যখন তুলনাকে বিষয় টা বলল তখন তুলনা তাদের সাথে অনেক রাগারাগি করে। বলে দিয়েছে সে আর তাদের সাথে কথাই বলবেনা। কেমনে না এসে পারলো তারা? একমাত্র মেয়ের একমাত্র দেবরের বিয়ে। আর তারা কিনা এলো না? আর কথাই বলবে না তাদের সাথে।
আজান দাঁড়িয়ে অতিথিদের বিদায় দিচ্ছিলো।এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে। তাই একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।
তুলনা আজানকে আলাদা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আজানের পাশে এগিয়ে যায় জ্বা’লা’নোর জন্য। পিছন থেকে বলে উঠে,,,,
” ফুল দিও কলি দিও,,কাটা দিও না।”
আস্তে করে চ,,, আর বলে না।চুপ হয়ে দৌড়ে এসে পরতে নেয়।কিন্তু তার আর হলো কই? আজান পিছন দিক দিয়েই তুলনার হাত আঁটকে ধরে। আই উইল কল ইউ লেটার বলেই কলটা কেটে তুলনার দিকে ফিরে।
সুখের অনুভব পর্ব ৪
তুলনা ভয়ে শুকনো ঢুক গিলে।
পরেরটুকু না বলে কোথায় পালাচ্ছো জানের পাখি?পরের টুকু বলো।
জাআআন ভাইইয়া হয়েছে কি,,,,,,,