সুখের অনুভব পর্ব ৪
Jhorna Islam
তুলনা আজানের কথা শুনে এখনো একইভাবে বসে আছে। কি বলে গেলো লোকটা? গার্লফ্রেন্ড মানে? ম’গে’রমু’ল্লু’ক নাকি? এই কথাটা কেনো বলল। কই ওতো বলতে পারবেনা মজা করেও উনার সামনে।উনিতো মুখটা সিরিয়াস করেই বলেছে। তার মানে টা কি? সত্যিই কি উনার গার্লফ্রেন্ড আছে? আর কাল দেখা করতে গেছে। কিন্তু উনিতো এমন না হুহ মজাই করছে হয়তো। নানান কথা বসে বসে ভাবতে থাকে তুলনা।
আজান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে।
তুলনাকে একই ভাবে বিছানায় বসে থাকতে দেখে তুলনার মুখের উপর ভেজা টাওয়াল টা ছুঁড়ে মারে।
তুলনা মুখ থেকে টাওয়ালটা সরিয়ে আজানের দিকে তাকিয়ে রয়।
তোমার না কতো দায়িত্ব? এই তার নমুনা? এখনো এখানে বসে আছো।যাও ফ্রেশ হও।
তুলনা মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলল আমি ফ্রেশ হবো না। কোথাও যাবো না।
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
— তুমি ই না বললা তোমার কতো দায়িত্ব। বোন +ভাবি তুমি।
— আমার কোনো দায়িত্ব নেই। আমি কারো ভাবি না। আমি শুধু বোন হই ওদের।
— ওয়ে ড্রা’মে’বা’জ চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নাও। একসাথে নিচে যাবো।
— আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। এক পা ও নড়বো না।
— যান আপনি এখান থেকে।
— হ্যা আমিতো জানি আমি জা’ন। তোমার জা’ন।
— আমি এই জানের কথা বলিনি।যাইতে বলছি।
কি শুরু করেছো বলতো? কি হয়েছে এমন করতেছো কেনো?
আপনি জানেন না কি হয়েছে? আপনি আমায় তখন কি বলে গেলেন। ভুলে গেলেন?
আজান তুলনার দিকে তাকিয়ে বলে,,ওহ এই ব্যাপার।ম্যাডামের এজন্য এতো রা’গ। আমাকে সোজা আপনিতে নিয়ে গেছে। আজান গিয়ে সোজা তুলনার পাশে বসে পরে। তুলনাকে নিজের দিকে ঘুরায়।তুলনা সরে যেতে চাইলেও দেয়না। তুলনা জোরা’জোরি করায় শক্ত করে তুলনার হাত চেপে ধরে। তুলনা নড়া বন্ধ করে আজানের দিকে তাকিয়ে রয়।
“মন দিয়ে আমার কথা শুনো।”
তোমাকে বলেছিলাম না ঐদিন যে আমি একটা অভিনয় করবো? মিলার কথা তো তুমি সব ই জানো।বলেছিলাম মিলার সাথে প্রেমের অভিনয় করবো। তুমিতো বার বার সাবধান করে দিয়েছিলে ওর স্পর্শ ও যেনো না লাগে আমার শরীরে। আরো কতো কি বলে তারপর অভিনয় করতে দিতে রাজি হয়েছিলে।এরপর তো আর ঐ সম্পর্কে কিছুই জানতে চাওনি। আমার ও ব্যস্ততায় আর বলা হয়নি।
আসলে কাল,,,,,,,,,,,,,,,, তারপর আজান কালকের সব ঘটনা খুলে বলে তুলনাকে।মিলা আর তার বয়ফ্রেন্ড কে কিভাবে ধরেছিলো।তারপর পুলিশে দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু বলল।
সব আজানের মুখে শুনে কিছুসময় হা করে তাকিয়ে রয় তুলনা আজানের দিকে। আসলে তুলনা ও ভুলে গিয়েছিলো মিলার কথা। আর আজানের অভিনয় এর কথা। তারপর কিছু একটা মাথায় আসতেই আজানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। এইজন্যই তো বলি,, আমার জন্য কেনো কিছু আনোনি। আনবা কেনো? আমার কথা মনে থাকলে তো আনবা। তখনতো তুমি তোমার মিলা বেবিরে নিয়া বিজি ছিলা। আহা কতো বালোপাশা গোওওও উৎলায় উঠতাছে।
মিলা বেপির জন্য আবার ফুলও নেয়।আহা কতো পিরিত।এই পিরিত ই আমি দেখাইতে পারলাম না। পারবো কেমনে মানুষ তো আমার পিছনে ছ’ড়ি ঘুরিয়ে বেড়ায়। এই সত্যি করে বলো,,তুমি ওর উপর দূর্বল হয়ে পরেছিলে বুঝি? ফুল নেওয়ার কি দরকার ছিলো? আমার জন্য তো কোনো দিন একটা দূর্বা ঘাস ও আনোনি হু? এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে হাঁপাতে থাকে তুলনা।
আজান তুলনার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না। সব বুঝিয়ে বলার পরও সব বাদ দিয়ে সে যে ফুল নিয়ে গিয়েছিলো ঐটা নিয়ে পরেছে।এরই নাম মেয়ে মানুষ হাহ্।
আজান বলে,, তুমি কি কাল বা আজ আলমারি খুলেছো?
— সোহা মাথা নাড়িয়ে জানায় খুলেনি।
— তাহলে বললা কিভাবে তোমার জন্য আমি কিছুই আনিনি?
— তুলনা মুখ ভেংচি কাটে।
— আর যখনই যেইখানে যাই,,ড্রেস, কসমেটিকস, চকলেট,, কোনো কিছু না নিয়ে এসেছি?
— যতো যাই বলো না কেনো আমার রাগ কমবে না।
— তোমার জন্য আমি ফুল আনিনি কখনো?
— আনো তাতে কি? ঐই মিলা ডা/ইনী কে যেগুলো দিছো ঐগুলো তো আর আনোনি।
— এই চুপ যা তুই তুলনা। থাপড়িয়ে তোর গাল লাল করে দিবো।আমার কিন্তু মে’জা’জ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
তুলনা আজানের কথা শুনে দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায়। আজান তুলনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের রা’গ কে সামলায়।মেয়েটা তাকে পা/গল করে দিবে। ভাবতে ভাবতেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আজান নিজের রুম থেকে বের হয়ে সোজা আহানের রুমে চলে যায়। আহান নিজের বিছানায় বসে বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজান গিয়ে আহানের পাশে বসে।
আহান নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুমিয়ে তাকায়। আজান কে দেখে ঝাপটে ধরে। বলে ভাই তুমি আসছো? আমিতো ভাবলাম তুমি হয়তো আসতেই পারবানা। তোমার জন্য আমি কাল সারাদিন অপেক্ষা তে ছিলাম। বাট তুমি আসোনি।
— আমার কলিজার একটা শুভ দিন আজ।তার লাইফের বেস্ট দিন। আর আমি আসবো না? যতো দূরেই থাকি না কেনো,আর যতো কাজই করি সব ফেলে চলে আসবো।
ভাই কাল না তোমার বিকালে আসার কথা ছিলো?আসোনি তো কই ছিলা?
কাল একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো।সেইটাই সেরে এসেছি।আজান আর আহান কে মিলার সম্পর্কে কিছু বলে না।
ভাই আমার কেমন যেনো লাগছে। ভ’য় করছে।
আহানের কথা শুনে আজান শব্দ করে হেসে দেয়। ভ’য় পাচ্ছিস কেন রে আহু? তুই মেয়েদের মতো কথা বলছিস। আরে চিল,, এটা কোনো ব্যাপার না।
কি ভাই তোমার কাছে এটা পানি ভাত আমি জানি বাট আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার স্যাপার। কেমন কেমন যেনো ফিলিং হচ্ছে। তার মধ্যে কতো রি’চু’য়াল আমি টায়ার্ড হয়ে গেছি। তোমার সময় তো এতো কিছু ছিলো না।
ছিলো না বলছিস? নাকি আমার ভয়ে কেউ করার সাহস পায় নি কোনটা?
হু এবার আমার বেলায় ও তুমি একটু ওদের ভ’য় দেখিয়ে দাও ভাইয়া।তাহলে আর আমাকে ও করতে হবে না। একদম ভালো লাগছেনা এসব কিছু।
ঠিক আছে নো প্রবলেম, বলে দিবো। বাট তোর এই ভ’য় পাওয়ার কথা শুনলে আমাদের তুলু রানী কি করতো রে আহান? ভাবতে পারছিস। আমি কিন্ত মনে মনে দেখেও ফেলেছি কি করতো।
ভাই আমিও।তুমি ভুলেও এটা তুলুর কানে তুলবা না।তাহলে আমায় সারাদিন এটা নিয়ে পচাবে।কিছু পাইলেই হয় তার। বলো না প্লিজ ভাই।
ওকে বলবো না।তুই কিছু সময় রেস্ট নে। আমি খেয়ে আসি খুব খিদা লেগেছে।
ওকে ভাই।
দুপুর বারোটার দিকে সবাই প্রায় রেডি হয়ে গেছে। বিয়ের সব কাজ শেষ।যেহেতু আজান দের বাড়িতে বিয়ে টা হবে।সেহেতু কনেরা ও রওনা হয়েছে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্য।
তুলনা সকাল থেকে আজানের সাথে কথা বলছে না।কথা বলবে কি সে তো আজানের সামনেই যাচ্ছে না। সে আজান কে অভিযান করার পার্মিশন দিয়েছে ফুল দেওয়ার না।লোকটার কি করে সাহস হয় তুলনাকে রেখে ঐই মেয়েটার জন্য ফুল কিনে নিয়ে যাওয়ার?
তাই আজান রুমে ঢুকার আগেই তৈরি হয়ে সেজেগুজে রু থেকে এসে পরেছে। দেখুক কেমন লাগে।সহজে সে কথা বলবে না আজানের সাথে। মনে মনে বলে যাও যাও চান্দু আমার সাথে একদম কথা বলতে আসবানা।আরো গিয়ে ফুল দাও তোমার মিলা বেবি কে। পারলে এক ফি’ডার দুধ মুখে পুড়ে দিও।আর হাতে একটা ললিপপ হুহ।
হঠাৎ করে পিছন থেকে তুলনার মাথায় কেউ টোকা মারে। তুলনা রাগি লুক নিয়ে পিছনে তাকায়। পিছনে আহানা কে দেখতে পেয়ে মুখ স্বাভাবিক করে ফেলে।
আহানা তুলনার কাঁধে নিজের কাঁধ দিয়ে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলে,,, কিরে তুলু আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে? তুই সবার আগে রেডি হয়ে হা’জির। কেমনে সম্ভব ভাই? আর সবচাইতে বড় কথা “আমাদের গোলাপি বানু আজ নীল বানু হয়ে গেলো কেমনে? তুই না গোলাপি জামা সিলেক্ট করে রেখেছিস আজ পরবি বলে?
তুলনা মুখ টা কাঁদো কাঁদো করে বলে,,জানিস রে আহানা কি হয়েছে?
— কি হয়েছে?
— তোর আদরের খা’টাশ মার্কা ভাই আমার সখের গোলাপি জামা গুলো সব শরিফা কে দিয়ে দিয়েছে। আমার জন্য গোলাপি রং নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।তারপর সব কালকের ঘটনা খুলে বলে।
সব শুনে আহানার হাসি আটকে রাখতে পারছেনা।কিন্তু হাসা যাবে না। তাহলে সব রা’গ গিয়ে আহানার উপরে পরবে। আহারে বোন থাক মন খারাপ করিস না। কি করবি বল কাল তোর নাচা উচিৎ হয় নি।
হ্যা এখন তো বলবিই উচিৎ হয়নি।ঐ সময় বলতে পারলিনা? আমায় বাঁধা দিতে পারলি না? তাহলে আজ আমার এই দিন দেখতে হতো?
হ্যা এখন তো আমায় বলবাই।তুমি যে বাঁধা মানার মানুষ তাই না?
তুলনা আহানার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে আহানাকে ও মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।
এই দিকে আজান সেই কখন থেকে তুলনাকে খুঁজে চলেছে।মেয়েটার দেখাই নেই। কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে? ইচ্ছে করে যে সকাল থেকে আজানের সামনে আসছে না সেইটা আজান ভালো করেই জানে। আজান তার ড্রেস-আপ এর সাথে যেই ঘড়ি টা পরবে সেটাও খুঁজে পাচ্ছে না। হয়তো তুলনাই রেখেছে। সেই ম্যাডামের তো এখন পাত্তাই নেই।কয়েকবার শরিফা কে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে আসেনি মেয়েটা।
ঘড়ি না পেয়ে অন্য একটা পরেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আজান। তুলনাকে খুজতে হবে আগে।মেয়েটা সাথে বিশ্বাস নাই।নিশ্চই উরাধুরা সাজ দিয়েছে।এখন আবার ছেলেরা পিছু নিবে হয়তো।
প্রায় অনেক সময় ধরে খুঁজেও তুলনাকে পাচ্ছে না। তারপর অহনাকে দেখতে পায়।
আজান অহনাকে ডাক দেয়।
সুখের অনুভব পর্ব ৩
অহনা আজানের ডাকে আজানের কাছে আসে।ভাই কিছু বলবা?
হ্যা।,,,,,,,, “আমার তুলার বালিশ কে কোথাও দেখেছিস?”