সুখের অনুভব - bhuapurnews24

সুখের অনুভব পর্ব ২

সুখের অনুভব

সুখের অনুভব পর্ব ২
Jhorna Islam

“না সামাঝ তু কো’কা’কলা,,
মে তো হু’ই’স’কি ভি বোতল।
মেরা এক সিপ হি হে কা’ফি,,
হোয়াট এভার ব্লা ব্লা,,,,,,,
কো’কা’কলা তুওওও,

গানটা গাইতে গাইতে তুলনার মুখ ছেড়ে আরাম করে খাটের উপর বসে পরে আজান।চোখ এখনো তুলনাতেই নিবদ্ধ।
তুলনা আজানের গান গাওয়া শুনে আঁতকে উঠে। কিছুক্ষন আগে এই গানেইতো সে নেচেছে।তার মানে আজানের আর বুঝতেও বা জানতে কিছুই বাকি নেই। তুলনা আজানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, জান ভাইয়া হইছে কি ইয়ে মানে,,,,
অপরাধ নাম্বার থ্রি। বলেই আজান তার ফোন বের করে।

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

হ্যালো তারাতাড়ি আমার রুমে আয় ফাস্ট। বলেই আজান তার ফোনটা আবার পকেটে ঢুকায়।
তুলনা পরেছে মহা ফ্যা’সা’দে। আবার কাকে ডাকছে কে জানে? বেচারি কে পাত্তাই দিচ্ছে না।
এরই মধ্যে দরজায় কেউ নক করে।
ভাইজান রুমে আসুম নি?
হ্যা আয়।ভিতরে এসে দাড়া।

তুলনা কথা শুনে বুঝতে পারলো তার হেল্পিং হ্যান্ড শরীফা এটা।মনে মনে ভাবতে লাগলো ওকে কেনো আবার ডেকে পাঠালো আজান। উফফ কি জ্বালা কেন যে নাচতে গেলো।তুলনার এসব ভাবনার মাঝেই শরীফা আজানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,, ভাইজান কি কইবেন কয়ে ফেলান।মুই আছি।
আজান বসা থেকে উঠে কাবার্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। কাবার্ড খুলে ভিতর থেকে তুলনার ড্রেস বের করতে থাকে বেছে বেছে গোলাপী গুলো।

তুলনা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আজানের কান্ড দেখছে। কিছুই বলতেও পারবেনা।রা’গের বসে নয়তো ধরে আছাড় দিবে।
আজান কাবার্ড থেকে সব গুলো পিংক কালার ড্রেস বের করে। শরীফার হাতে সব গুলো ড্রেস ধরিয়ে দিয়ে বলে এগুলা চাইলে তুই পরিস।নয়তো অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারিস।কাউকে না দিতে পারলে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিবি। তারপর ছাই গুলো খুব সুন্দর করে বাগানে গিয়ে গাছের গোড়ায় দিয়ে দিবি।উপকার হবে।
ভাইজান এইগুলাতো আফামনির পছন্দের সব জামা। আর কালারটাও পছন্দের। আমনে দেহি সব গুলা গোলাপী জামাই দিয়া দিতাছেন।এগুলাতো নষ্ট ও না।

তোর এতো কিছু ভাবতে হবে না শরীফা যা বলছি তাই কর।আর “আজ থেকে তর আফামনির জন্য গোলাপী জামা নিষিদ্ধ। ” শুধু গোলাপী জামা কেনো কোনো কিছুই পরতে পারবে না।আই মিন কোনো কিছুই না।
শরীফা আজানের কথা শুনে ভাবনায় পরে যায়।তার ছোট্ট মাথায় এতো পেচ গোছ ধরতে পারে না।সে সহজ সরল মানুষ। সে ঘুরে তুলনার দিকে তাকায়,, সে তো ভালো করেই জানে তার আফামনি গোলাপী রং খুব পছন্দ করে। তাই যা কিনে সব কিছু বেশির ভাগই গোলাপী।তুলনার দিকে তাকিয়ে শরীফার খুব মায়া হলো।আহারে তার আফামনিটা।পছন্দের রংটাই আর পরতে পারবোনা।

তুলনা ভিতরে ভিতরে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করছে।সামনা সামনি কিছু বলতে পারছেনা।শুধু শরীফার হাতে রাখা ড্রেস গুলোর দিকে তাকাচ্ছে।তার কতো সাধের ড্রেস গুলো।কতো শখ করে কিনেছিলো।সবার দেওয়া গিফট ও আছে।বাইরের দেশ থেকে ও আনানো আছে।
এরই মাঝে আজান শরীফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,,, এবার তুই যা শরীফা।
শরীফা মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। সেতো কিছু বলতেও পারবোনা।একবার অসহায়ের মতো তুলনার দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায়।
তুলনা শরীফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।

“হেইই পিংকি লে’ডি কাম।”
এইবার তুলনার আর বুঝতে বাকি নেই যে কেনো আজান তার সব গোলাপী জামা কাপড় দিয়ে দিয়েছে।তার জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

তখনকার ছেলে টা তুলনাকে পিংকি লে’ডি বলায় আজান এই কান্ড করেছে। এখন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে বসে আফসোস করতে ইচ্ছে করতেছে তুলনার।কেন সে আজ গায়ে হলুদেও পিংক ড্রেস পরতে গেলো? কেনো সে নাচতে গেলো। এই লোকটার কথা খুশির ঠেলায় কিভাবে ভুলে যেতে পারলো।এখন তার কি হবে? আহারে বাড়ির সবাই কেন যে তাকে মনে করিয়ে দিলো না এই লোকটার কথা। এখন যে তাকে ভিজিয়ে পানি দিয়ে গিলবে। আর যা হইছে হইছে বাঁচা যেতো।ঐই লু’ই’চচা ছেলে কেন যে আবার ওকে কমপ্লিমেন্ট দিতে গেলো।এখন আর কেউ নেই তুলনাকে বাঁচানোর। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।

তোমায় আমি ডেকেছি তোমার কানে যায় না? ফা/জিল।
আজানের কথায় শুকনো ঢুক গিলে কাঁপা কাঁপা পায়ে আজানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তুলনা।
নাচার খুব শখ না তোমার? খুব শখ। এই শখ হওয়ার আগে আমার কথাটা একবার মাথায় আসলো না? দিস নট ফে’য়ার। এক্সাইটেড এর ঠেলায় নিশ্চই ম্যাডাম ভুলে গেছিলো আমি নামক কেউ একজন আছে। বলেই মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করতে থাকে।

তুলনা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,, জান ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না। ঐ ছেলেটা এসব বলবে ভাবতে পারি নি।আর তোমাকে না জানিয়ে নাচা ও একদম ঠিল হয়নি আমার।আ’ম সো স’রি। আর হবে না জা’ন এটাই লাস্ট।
সেটা আপনাকে বলতে হবে না। আমিও জানি আর হবে না।আমি হতে দিবো ও না। এসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
আপনার শখ আর আমি পুরণ না করে পারি? কখনো না। আপনি নাচবেন।খুব ভালো করে নাচবেন।

নাচা শুরু করো।আমি না বলা পর্যন্ত কোনো থামাথামি নেই।একাধারে চলতে থাকবে। একটুও থামাবে না।থামালেই অন্য শাস্তি। চুপচাপ নাচতে থাকবে।নাও শুরু করো। ওহহ ওয়েট মিউজিক লাগবে তো বলেই আজান উঠে গিয়ে সাউন্ড বক্সে লো ভলিউমে সেই গানটাই চালু করে দেয়।
তুলনা আজানের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এবারের মতো মাফ করে দাও।আর কখনো এমন করবো না। আমি নাচতে পারবো না। ছেড়ে দাও প্লিজ।

কি বললি তুই? আমার কথা অমান্য করবি তুই? একেইতো আমাকে না জানিয়ে এতো এতো লোক ক্যামেরার সামনে নেচেছিস।আবার ঐই ছেলেটার কাছ থেকে কমপ্লিমেন্ট ও পেয়েছিস।আবার আমাকে ভাই ডেকেছিস।তোর অপরাধ এর তো অভাব নেই।
ভুলে ভ’য় পেয়ে ডেকে ফেলেছি গো আর হবে না। ছেড়ে দাও না এবারের মতো কাঁদো কাঁদো মুখে বলে তুলনা।
এতো কথা বাড়াচ্ছ কেনো? হোয়াই? যেটা বলছি সেটা করো চুপচাপ কোনো ছাড়াছাড়ি নাই বেবি।
“লে’টস নাচো।”

তুলনা বুঝে গেছে কোনোভাবে আজ শাস্তি থেকে রে’হাই পাবে না।সিংহ আজ খেপেছে। আজানের দিকে একবার তাকিয়ে নাচা শুরু করে।
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে একাধারে নেচে চলেছে তুলনা।যে সে নাচ নয় এক প্রকার হাত পা ছোড়াছুড়ি যাকে বলে। প্রথম পাঁচ মিনিট আজান তুলনার নাচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন তো নেই।কি যেনো করছে মোবাইলে। আজান তুলনার দিকে তাকিয়ে নেই বিধায় তুলনা তার নাচের মানে হাত পা ছোড়াছুড়ির গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে নেয়।কমাতে কমাতে আস্তে আস্তে একেবারেই কমিয়ে ফেলে।

শাস্তি টা মনে হয় কম পড়ে গেছে তাইনা? আমি কি বলেছি মাথায় ঢুকেনি? আমি না বলা পর্যন্ত থামা যাবে না।একেই তো হাত পা ছোড়াছুড়ি করে নাচের দফারফা করে দিচ্ছো। কি সাং’ঘা’তিক ব্যাপার এগুলা নাচ? এমন নাচ না দেখে অন্ধ মানুষ ও হাসবে। নাচ কে তুমি রীতিমতো অপমান করছো।তারপর আবার থেমে যাচ্ছো কোন সাহসে? অন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে? অন্য শাস্তি তোমার জন্য মোটেও সুখ কর হবে না।সো চুপচাপ নাচ কন্টিনিউ করো।কথা গুলো আজান মোবাইলের দিকে চোখ রেখেই বলে।

হ্যা এখন যেনো কত সুখকর শাস্তি দিচ্ছে আমায়।ঢং করে।মাথার মাঝেও চোখ লাগিয়ে বসে আছে যেনো।মোবাইলের ভিতর চোখ রেখেও ঠিকই দেখে নিয়েছে আমি হাত পা ছোড়াছুড়ি করছি।আবার নাচের গতি যে কমিয়ে ও দিয়েছি।
— বলছি যে,,, আজকের মতো ছেড়ে দাও না।সবাই হয়তো আমায় খুজতেছে। আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
— হু আছেতো।তাইতো নেচে মানুষের মনো’র’ঞ্জ’ন করতেছিলেন আপনি তাই না?
ধুর কেন যে আমি নাচতে গিয়েছিলাম।জীবনে আর মনে থাকলে নাচ কি,,নাচের ন ও উচ্চারণ করবে না।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নেয় তুলনা।

হঠাৎই আজানের ফোনটা বেজে উঠে। তুলনা নাচতে নাচতেই আজানের দিকে তাকিয়ে রয়। আজান কল রিসিভ করে কথা বলতে থাকে,,,,,,,
— হ্যা বল। ধরেছিস?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
— ওকে দেন আমার স্পেশাল জায়গায় নিয়ে গিয়ে কিছু খাতির ধারি করতে থাক।আমি আসছি।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
— বায়।

তুলনা এতোক্ষন কান খাড়া করে আজানের কথা শুনতে চেষ্টা করতেছিলো নাচতে নাচতেই। আজানের কথা কিছুই বুঝল না। কি কথা বলছে? কিসের খাতির ধারি ভাবতে থাকে।
আজান কথা বলে ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তুলনার দিকে এগোতে থাকে।
তুলনা নাচা থামিয়ে আজানের দিকে তাকায়। আবার কিছু করবে কি না কে জানে। একদম বিশ্বাস নেই লোকটাকে।
আজান রিমোট দিয়ে মিউজিক প্লেয়ার টা অফ করে দেয় তুলনার দিকে এগোতে এগোতে।

— আমি একটু বের হচ্ছি। আপাতত তোমার শাস্তি শেষ। তবে রুম থেকে এক পা ও নড়বানা।চুপচাপ ঘুমিয়ে যাও অনেক রাত হয়েছে।
— কিন্তু মাত্রই তো এসেছো।এখনই আবার কই যাও?
— আজান তুলনার গালে হাত দিয়ে শান্ত স্বরে বলে,, আমার কাজে ব্যাপারে বাধা বা কৈফিয়ত কোনোটাই আমি পছন্দ করি না। ইউ নো না? যেটা বলছি সেটা করো।
তুলনা আর কথা বাড়ায় না। মাথা নাড়িয়ে আজানের কথা তে সম্মতি জানায়।
আজান রুম থেকে বের হয়ে গেলে তুলনা ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

অন্ধকার রুমে একজনকে হাত পা বেঁধে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
কখন থেকে লোকটা চেচিয়ে জানতে চাইছে,কেন তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে? সে কি করেছে? আর কেই বা বেঁধে রাখতে বলেছে।কিন্তু তার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলো বলছেই না।শুধু বলছে বস আসলেই দেখতে পারবি।এখন মুখ বন্ধ করে বসে থাক।

এরই মাঝে কেউ একজন ভিতরে প্রবেশ করে। লোক গুলো বস এসেছে বলেই চেয়ার এগিয়ে দেয় বসার জন্য। আরেকজন গিয়ে পুরো রুমটায় আলো জ্বালিয়ে দেয়। বেঁধে রাখা লোকটার সামনে গিয়ে তাদের বস পায়ের উপর পা তুলে বসে।
লোকটা অস্ফুট স্বরে বলে,,,,,, মোহতাসিন মির্জা আজান?
ইয়াপ বলেই আজান হাত উপরে উঠিয়ে আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গিমা করে।
লোকটি এবার আজান কে প্রশ্ন করে,, আমাকে এখানে নিয়ে এসে এমনভাবে বেঁধে রাখার মানে কি? কি করেছি আমি? আমার অপরাধ?

তুই এখনো বুঝতে পারিসনি তোর অপরাধ কী?
তোর সবকিছুই প্রচুর পরিমাণ হ’ট হয়ে আছে শুনলাম।তাই এখানে কুল করতে এনেছি।আমি আবার সচেতন নাগরিক বুঝলি?
মা-মানে?
এখনও মানে বুঝিস নি? আমার বাড়িতে গিয়ে আমার কাছের লোকদের দিকে বা’জে নজর দিবি,,বা’জে কমপ্লিমেন্ট দিবি বাহ্ ভাই বাহ্ তোর সাহস দেখে আমি ফি’দা।

যেখানে এই মোহতাসিন আজান মির্জা নিজের কোনো জিনিসেই কারো নজর সহ্য করে না।সেখানে তার মানুষের উপর ন’জর কিভাবে সহ্য করবে? বলেই চিৎকার করে উঠে।
লোকটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, আ-আমি জানতামনা মেয়েটা আপনার কিছু হয়। আমি ভেবেছিলাম বিয়ে বাড়িতে কনে পক্ষের লোক হবে হয়তো।এবারের মতো ছেড়ে দেন।

সুখের অনুভব পর্ব ১

আজান তার লোকদের ইশারা করে বলে,, একে একটু আপ্যায়ন করে ছেড়ে দে। কাল একটা পবিত্র অনুষ্ঠান আছে তাই চাই না কোনো ঝামেলা বা বাঁধা আসুক। বলেই আজান বের হয়ে যায়।

সুখের অনুভব পর্ব ৩

1 thought on “সুখের অনুভব পর্ব ২

  1. I was studying some of your articles on this website and I believe this website is rattling
    instructive! Continue posting.Raise your business

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *