সুখের অনুভব গল্পের লিংক || Jhorna Islam

সুখের অনুভব পর্ব ১
Jhorna Islam

নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য একটা ছেলের কাঁধে মাথা রেখে হাসাহাসি করতে দেখে তাও আবার নিজেরই গিফট করা ফ্লাটে থমকে দাঁড়ায় মোহতাসিন । নিজের চোখ গুলো ক্রো’ধের অন’লে জ্ব’লে উঠে। । হাত থেকে সদ্য কিনে আনা গোলাপ ফুল গুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে যায়। পরোক্ষনেই কিছু একটা ভেবে চোখের কার্ণিশে নোনা জল জমা হয়েছে।গড়িয়ে পরার আগেই তা বৃদ্ধাঙগুল দিয়ে ছিটিয়ে ফেলল।

নিজেই নিজেকে বলল,, মোহতাসিন মির্জা রিলেক্স।তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? কাম ডাউন। এমন ভাব ধরছিস যেনো সে তোর আসল ভালোবাসার মানুষ হাহা। তোর ডিকশনারিতে ধোকা কোনো স্থান নেই। আর এই মেয়েটা তোর কলিজা কে ধোকা দিয়েছে। বলেই কাউকে কল লাগালো,,,,,অপর পাশ থেকে কল রিসিভ হতেই মোহতাসিন বলে উঠে,,, “কাউন ডাউন শুরু হয়ে গেছে। ”

আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

অপর পাশ থেকে লোকটা কে কিছু না বলতে দিয়েই কল টা কেটে দেয় মোহতাসিন। ঠোঁটে ঝুলছে তার সেই রহস্যময় বাঁকা হাসি।
নিজেকে আবার ফিট ফা’ট করে চুল গুলোর ভিতরে হাত চালিয়ে সেট করে নিলো। এতোসময় জানালার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো মোহতাসিন। দেখতে চেয়েছিলো মিলা কি করে।আজ মিলা কে না জানিয়ে এসেছে মোহতাসিন।অবশ্য যে উদ্দেশ্যে না জানিয়ে এসেছে সেই উদ্দেশ্য প্রায় সফলের দিকে। মিলা তার ফাঁদে অলরেডি পা দিয়ে দিয়েছে।

জানালার গ্লাসে নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলো মোহতাসিন।তারপর সরে এসে মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে কলিং বেলএ চা’প দিলো।

মিলা আর তার বয়ফ্রেন্ড ( আশিক)এতোসময় বসে গল্প করতে করতে হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছিল।হঠাৎ করে কলিং বেল বাজায় দু’জনই হকচকিয়ে যায়। এই সময় আবার কে এলো এই ভেবে।আশিক উঠে দাঁড়ায় দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। হয়তো খাবার এসেছে অর্ডার করেছিলো। মিলা আশিক কে বাঁধা দেয়।এতো তারাতাড়ি তো খাবার আসার কথা না।যার কথা ভাবছে সে নয়তো? কিন্তু সে তো জরুরি কাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলো।এতো দ্রুত চলে এলো। এসব ভাবতে ভাবতেই মিলা দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

কি মনে করে জানালার পাশে গিয়ে উঁকি দিলো।সাথে সাথে আঁতকে উঠলো যা ভেবেছিলো ঠিক তাই।
“দা গ্রেট মোহতাসিন মির্জা দরজার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখেই মিলার অ’ন্ত’রআ’ত্না কেঁপে উঠলো।
তারাতাড়ি জানালার কাছ থেকে সরে আসলো মিলা কি করবে কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছ না। মোহতাসিন সম্পর্কে ভালোই ধারণা আছে মিলার।একবার রে’গে গেলে খু/ন করতেও দ্বিতীয় বার ভাববে না।

সবার আগে মিলার করণীয় হলো আশিক কে লোকানো।তারাহুরোর মাথায় না ভেবে চিন্তেই পর্দার আড়ালে আশিক কে লোকায় রাখে।পরে সুযোগ বুঝে আশিক কে বের করতে হবে।এখন তারাতাড়ি দরজা খুলতে হবে।মিলা কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজার পাশে দাঁড়ায়। মুখে জোর পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে দরজার নব ঘুরায়।
মোহতাসিনকে দেখে মিলা জড়িয়ে ধরতে গিয়ে ও হাত গুটিয়ে নেয়।কারণ এই একটা ছেলে যার হাতটা ও এখনো ভালো করে ধরতে পারেনি মিলা।

মিলাকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে সোফায় গিয়ে আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে আয়েশি ভংগিতে বসে মোহতাসিন।তারপর পূর্ণ দৃষ্টিতে মিলার দিকে তাকিয়ে রয়।
মিলা মোহতাসিনের তাকানো দেখে মাথা নিচু করে ফেলল।এমন তাকানো তে অ’স্বস্তি’তে ফেলছে তাকে।
তুমি কি আমার এই সময়ে আসাতে খুশি হওনি মিলা?চারদিকে ন’জর ঘুরাতে ঘুরাতে জানতে চায় মোহতাসিন।
মিলা মোহতাসিনের হঠাৎ করা প্রশ্নে হকচকার।আমতা আমতা করতে বলে,,তেমন কিছুইনা বে’বি।

ওহ কাম’অন ডা’র্লিং আই ওয়াস জাস্ট কিডিং! যাও কফি নিয়ে আসো।বলেই সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
উফফ মিলা কি বাঁচাটাই না বাঁচলি কিছুই স’ন্দে’হ করেনি এই বে’টা। এখন ভালোয় ভালোয় আশিক কে বাড়ি থেকে বের করতে পারলেই বাঁচি। আপন মনে কথাগুলো ভেবে আড় চোখে আশিক কে একবার দেখে রান্না ঘরের দিকে চলে যায় মিলা।

মোহতাসিন চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকায়। আশিক যে পর্দার আড়ালে আছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই।কারণ পর্দার আড়ালে আশিক থাকলেও তার পা জোরা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। অনেক কাঠ খোর পুড়িয়েছি তোদের এক সাথে ধরার জন্য। ফাইনালি পেরেছি।এখন বুঝবি এই মোহতাসিন কি জিনিস। কোনো কাজে এতো সময় ব্যয় করিনি যা তোদের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে। আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।তোদের হাতই আমি রাখবোনা।

বলেই চুলে হাত বোলাতে লাগলো।এখন যে কেউ মোহতাসিন কে দেখলে ভ’য় পেয়ে যাবে।কপালের র’গ ফুলে উঠেছে।চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।
মিলা ততক্ষণে কফি করে মোহতাসিনের সামনে রাখে।মোহতাসিন কফির দিকে একবার তাকায়। তারপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে মিলার দিকে তাকায়। মিলা মোহতাসিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
মোহতাসিন বলে,,,বেবি এখন আমার স্পেশাল গেস্টরা আসবে তোমাকে আপ্যায়ন করতে।আই মিন আমাদের আপ্যায়ন করতে হবে আরকি যাও দরজাটা খুলে দাও।

মিলা মোহতাসিনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কে আসবে।
মোহতাসিন চোখের ইশারায় বলে দরজা খুলে দিতে।ঠিক সেই সময় ই কলিং বেল বেজে উঠে। মিলা অবাক হয়ে যায়। এতো সঠিক টাইমিং দেখে।মোহতাসিনের হাতে তো এখন ফোন ও নেই যে সে বুঝতে পারবে৷ লোকটা এসে গেছে।
মোহতাসিন বিরবির করে বলে,,, “বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।এবার তোমার বাঁধিব পরাণ।”

মোহতাসিনের দিকে তাকাতে তাকাতে গিয়েই সে দরজা খুলে। অপর পাশের লোকটা কে দেখে মিলা আঁতকে উঠে আবারো। আশ্চর্য আজ কি তার ভ’য় আর অবাক হওয়ার দিন নাকি?
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাও মিলা কে পাত্তাই দিলো না।মিলাকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে মোহতাসিনের বরাবর সোফায় বসে পরলো। কিরে বেটা তোর বেবির হাতের কফি তুই একাই খাবি? আমাদের ও সুযোগ দে বলেই চোখ টিপ মারে।

তুই পুলিশ হয়েও এমন ছ্যা’চড়া কবে থেকে হলিরে ফাহাদ? বউয়ের হাতের কফি খেয়ে সখ মিটে না?
হাহাহা এসব বাদ দে।একশনে চলে যাবো নাকি ডিরেক্ট?
হুু যা করার তারাতাড়ি কর।আ’ম সো টায়ার্ড ইয়ার।এয়ারপোর্ট থেকে ডিরেক্ট এখানে এসেছি। এইসব তারাতাড়ি ফিনিশ কর।আমার কলিজার নতুন জীবনে আর কোনো বাঁধা চাই না।

তারপর মিলার দিকে তাকিয়ে এইই তোর পার্টনার কে বের কর পর্দার আড়াল থেকে অনেক নাটক সহ্য করেছি আর না।কথাটা এতো জোরেই ছিলো যে উপস্থিত সকলের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগার।
মিলা কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে মা-নে কি বলছো।

এএএ এভাবে মানবেনা ইয়ার তোর ফোর্স ঢুকা ভিতরে।আর ঐযে ঐখান থেকে ঐটারে ঘাড় ধরে নিয়ে আয়।
ফাহাদ উঠে গিয়ে আশিককে পর্দার আড়াল থেকে বের করে নিয়ে আসে।মিলা যা বোঝার বোঝে গেছে।তার সব ফাঁস হয়ে গেছে। আর র’ক্ষে নেই। তারাতাড়ি গিয়ে মোহতাসিনের পায়ে ধরে বসে পরে।।
আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ। আর এমন করবো না।

মোহতাসিন এক ঝটকায় মিলার থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নেয়। তোকে মাফ করবো কোনো প্রশ্নই আসে না।টাকার লোভে তুই আর তোর এই আশিক অনেক মানুষের মন নিয়ে খেলেছিস।আর না।আমার ছোট ভাইটাকেও রে’হাই দেসনি তুই।ও তো তোকে সত্যি ভালোবেসে ছিলো।তুই কি করলি ওর টাকা পয়সা খেয়ে বিয়ের কথা বলায় ওরেই মানা করে দিলি? মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলি।তোর জন্য আমার ভাই মরতে বসেছিলো।এখন চলার শক্তি হাড়িয়ে হুইলচেয়ারে বসে তাকে চলতে হয়।
তো-মা-র ভাই মানে? কে তোমার ভাই?

আহান মনে আছে? আহান মির্জা।
আহারে বাবুটা আমার ভাইয়ের পুরো নামটা না জেনে পরিচয় না জেনেই টাকা দেখে অভিনয়ে নেমে পরেছিলো।এখন পুলিশের কাছে গেলে সব জেনে যাবা বেবি।
কিন্তু তুমিতো আমায় ভালোবাসো তাই না?

ভালোবাসা তাও আবার তোকে? এসব তো তোকে আর তোর আশিক কে ধরার ফাঁদ ছিলো মাত্র। আর কি ভেবেছিস এই ফ্লাট টা তোকে আমি সত্যি লিখে দিয়েছি? সব ভু’য়া। যা এখন জেলে গিয়ে প্রেমিক প্রেমিকা আয়েশ কর।হেভ এ ফান বেবি।
ফাহাদ তার ফোর্সকে আনিয়ে মিলা আর তার বয়ফ্রেন্ড আশিক কে নিয়ে যেতে বলে।
তুইতো তোর কাকা কে দিয়েই এই কাজটা করাতে পারতি? উনিইতো একজন পুলিশ।
আমি চাইনি ছোটো কাকা এসবে জরাক।এমনিতেই আহান কে নিয়ে অনেক কিছু সহ্য করেছে।পেশায় পুলিশ হলেও উনার মনটা খুবই নরম।

তোর যা ভালো মনে হয়েছে।
হুম।এই দুইটার যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবি। আমি নিজেই শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। বাট এখন আপাতত টাইম নেই।হাতে অনেক কাজ। অনেক নাটক করেছে এই দুইজন বড় ঘরের ছেলে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারপর ছেড়ে দেয়। এমন ব্যবস্থা কর যেনো জে’ল থেকে কয়েক বছর না বের হতে পারে।
এখন আমায় যেতে হবে বাড়িতে আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে হয়তো।আর হ্যা কাল ঠিক টাইমে তোর ওয়াইফকে নিয়ে এসে পরবি।
আচ্ছা।

আজ পুরো বাড়ি আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে আছে। রঙিন আলোতে চারদিক ঝলমল করছে। বাড়ির চারপাশ সব কিছু নিপুণ কৌশলে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে সব ভি,আই,পি গেস্ট। সাংবাদিক, ক্যামেরার ছড়াছড়ি।আয়োজনের কোনো কিছু তেই কোনো কমতি নেই। থাকবেই বা কি করে যে সে বাড়ির অনুষ্ঠান তো আর হচ্ছে না। খাবারের মেনু করা হয়েছে কতো কতো যা সাধারণ মানুষ দেখলে অবাক হয়ে যেতো। বাড়ির সাজ সজ্জা দেখেই চোখ আঁটকে যেতো।বাড়ির চারপাশে কড়া সিকিউরিটি। কার্ড বা পার্মিশন ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবেনা।

আজ এই বাড়ির ছোট ছেলের গায়ে হলুদ।সবাই হই হোল্লড় আনন্দে মেতো উঠেছে। কনে পক্ষের লোক এসেছে ছেলেকে হলুদ ছোয়াতে।অবশ্য বিয়েটা এই বাড়িতেই পড়ানো হবে।
স্টেজের উপর উঠে গানের তালে তালে নেচে চলেছে তুলনা। সবাইকে তার নাচ দেখিয়ে তা’ক লাগিয়ে দিচ্ছে। কেউ অবাক দৃষ্টিতে, কেউ বা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।আর তার পরিবারের কয়েকজন ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে আল্লাহ কে ডেকে চলেছে। তুলনা নিজের নাচ শেষ করে স্টেজের উপর থেকে নেমে আসে।

হাসি মুখে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে পানি খেতে যেতে নেয়।গলাটা শুকিয়ে গেছে নেচে। এমন সময় পিছন থেকে কারো কথা শুনে পিছনে তাকায়।
“হেই পিংকি লেডি ইউ আর লোকিং সো,,,হ,,,আই মিন বিউটিফুল। আর নাচ তার কি বলবো উফফ অসাধারণ। পরিবেশটা কেমন হ’ট লাগতেছেনা?” বলেই ছেলেটা তুলনার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করার ভংগিমা করে।

তুলনা ছেলে টাকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই,,, আহানা মানে তার খালাতো বোন আঁটকায়। পা’গল হয়ে গেছিস তুলু? তুই ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলতে যাইচ্ছিলি কেন? একেইতো নেচেছিস।তার উপর এই ছেলেটা তোকে কি বলল। আজ তোকে কে বাঁচাবে? তৈরি থাক বোইন তোর কপালে,,,ঝড় -তুফান,, সু’নামী সব এক সাথে আসতে চলেছে। আহানার ডাক পরায় আহানা চলে যায় তুলনাকে কথা গুলো বলেই।

এইরে এখন কি হবে? আনন্দের ঠেলায় তো সব ভুলে বসেছিলাম।তুলনার ভাবনার মাঝেই বাড়ির লাইট অফ হয়ে যায়। কেউ একজন তুলনাকে কোমড় পেচিয়ে উপরে উঠিয়ে হাটতে থাকে।
কয়েক মিনিট পর একটা রুমে এনে দরজা বন্ধ করে তুলনাকে দাড় করায়।
“”” জাআআআন ভাইয়া আর বলতে পারে না। সামনে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টা তুলনার মুখ চেপে ধরে। ”

সুখের অনুভব পর্ব ২

Leave a Comment