এখানেই শেষ নয় পর্ব ৬
অপরাজিতা রহমান
কোলে বসেছি বেশ করেছি। আপনি আমার বিয়ে করা বর। শুধু কোলে নয় আপনার ঘাড়ে বসার ও অধিকার রাখি আমি।আর আজ থেকে আমি এই রুমে এই বিছানায় থাকব।
ইম্পসিবল।ভুলেও আমার ধারেকাছে আসবে না। যেইখানে আছো সেখানেই থাকো।
ও মা বিয়ে করেছি কি বর ছেড়ে দূরে থাকার জন্য?তার উপর বর যদি জুনিয়র হ্যান্ডসাম হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই।
সিনিয়র বেবি তুমি নামো তো আমার কোল থেকে।যেই মুটকির মুটকি তুমি আমার হাড্ডি গুড্ডি ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল।
সিরিয়াসলি আমি মুটকি!
কোন সন্দেহ আছে?
উম্মাহ
এইটা কি করলে তুমি সিনিয়র বেবি?
সরি সরি। আমি আসলে অতি খুশি হয়ে দিয়ে দিয়েছি।
আশ্চর্য! মুটকি বলায় খুশি হওয়ার কি আছে?
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
আমার কতো দিনের ইচ্ছা কেউ আমাকে মুটকি বলবে।আর আমি মুটকি কথাটা শুনে আমার কান দুটো সার্থক করব।আজ আপনি আমার সেই চাওয়া টা পূরণ করেছেন। আমার স্বাস্থ্যের জন্য সবাই আমাকে শুঁটকি বলে ক্ষেপাতো। এমনকি রাস্তার কু”কু”র টা ও আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ভাবতো এইটা কি মানুষ নাকি হাড্ডির বস্তা?যান আজকের এই খুশিতে আপনাকে একদিন ট্রিট দিয়ে দিব।
তোমার হাতে কি সিনিয়র বেবি? নিশ্চয় ড্যাড ডেকে নিয়ে ক্যালানি দিয়েছে? ড্যাড একদম উচিত কাজ করেছে।
জ্বি না। আঙ্কেল পুরষ্কার স্বরুপ আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে। টাকার কথা বলতেই শায়ান ছো মেরে আমার হাতের থেকে টাকা নিয়ে গেল।
আপনি আমার টাকা নিলেন কেন?এই টাকাটা আঙ্কেলের থেকে আমার প্রথম পাওয়া। আমার কাছে এই পাঁচ হাজার টাকার মূল্য পাঁচ কোটি টাকার সমান।
আপনি আমার টাকা ফেরত দিন বলছি।
আমার এখন টাকার প্রয়োজন তাই নিয়েছি। তোমাকে পরে শোধ করে দিব।
আমি ও শায়ানের হাত থেকে টাকাটা নিয়ে নিলাম। মিস্টার শায়ান, আপনি যদি বাগানের কচু হয়ে থাকেন, আমি ও গাছের বাতাবি লেবু। আমার সাথে টক্কর দেওয়া এতো সহজ নয় মিস্টার শ্রেয়াস আবরার শায়ান। আপনার টাকার প্রয়োজন বলতে শুধু তাকিয়ার পেছনে ফালতু টাকা ব্যয় করা এইটা আমি খুব ভালো করে জানি।
আমার টাকা আমি যেভাবে ইচ্ছা যার পেছনে ইচ্ছা ব্যয় করব।এই ব্যাপারে তুমি বলার কে?
আমি আপনার বিয়ে করা বউ। আপনার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার। এখন থেকে আপনার একাউন্টে কোন টাকা থাকবে না।সব টাকা আমার একাউন্টে ট্রান্সফার হবে।মাস শেষে আমি আপনাকে হাত খরচার টাকা দিব।অখাতে অনেক টাকা ব্যয় করেছেন আর নয়।
তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করে যাচ্ছ সিনিয়র বেবি। আমি তোমার কোন কথা শুনতে বাধ্য নই।
আপনি ভুলে যান কেন আমি একজন শিক্ষিকা। শিক্ষিকারা অবাধ্যকে কিভাবে বাধ্য করতে হয় সেই টা খুব ভালো করে জানে।লুক এট দ্যা ফোন?
কিসের ভিডিও এইটা?
আপনি নিজে চোখেই দেখুন।
ছিঃ ছিঃ এমন একটা নোংরা ভিডিও করতে তোমার একটু ও বিবেকে বাধল না। এক্ষুনি ডিলিট করো বলছি।
নো ওয়ে ডেয়ার। আপনি যদি আমার কথা অনুযায়ী না চলেন ,এই ভিডিও মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যাবে।তো মিস্টার জুনিয়র এক বার ভেবে দেখুন তো আপনার এই লজ্জাজনক ভিডিও একবার যদি ভাইরাল হয়ে যায়, আপনার নাম,যশ , খ্যাতি, ক্যারিয়ার এমনকি আপনার লেখিকা গার্লফ্রেন্ড ও হাতছাড়া হয়ে যাবে।নাও ইউর চয়েস। আমার কথা অনুযায়ী চলবেন নাকি ভিডিও ভাইরাল করব?
গতকাল রাতে আমার ট্রাউজার খুঁজে পেয়েছিলাম না তাই লুঙ্গি পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। লুঙ্গিতে আমার দূর্বলতা রয়েছে।আর তুমি আমার সেই দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছ। তুমি মোটেও ঠিক কর নি সিনিয়র বেবি।
রাতে আমার লাগেজ নিতে এসে দেখি যে আপনার লুঙ্গি আকাশে উঠে গেছে। আমি ও ভাবলাম আপনার মতো ঘাড়ত্যারা কে সোজা করতে এর থেকে ভালো কোন অস্ত্র আর নেই।ব্যাস ভিডিও করে নিলাম। কিন্তু আপনি তো আমার কথা অনুযায়ী চলবেন না ।তার চেয়ে বরং ভিডিও টা আমি ভাইরাল করে দেই। অনেক লাইক কমেন্ট শেয়ার হবে। আপনার ভিডিও ভাইরাল করে আমিও ভাইরাল হয়ে যাব।
এক পৌষে কিন্তু শীত যায় না। আমার ও সময় আসবে। তখন আমি তোমাকে ঠিক দেখে নিব।
উপস জুনিয়র বিশ্বাস কর আমি ও চাই তুমি আমাকে দেখ। আমি তো তোমাকে বারন করি না দেখতে।দেখ না ক”লি”জা ভরে দেখ।
খুব মজা লাগছে তোমার তাই না?
অবশ্যই।কি করব বল? সোজা আঙ্গুলে যখন ঘি না ওঠে তখন আঙ্গুল তো বাঁকা করতেই হয়।
শায়ানের সাথে এভাবে মজা আর খু”ন”শু”টি তে কে”টে
যায় এক সপ্তাহ। বিয়ে উপলক্ষে স্কুল থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলাম।আজ থেকে আবার স্কুলে জয়েন করতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি ওঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম।শায়ান কে অনেক বার ডাকলাম কিন্তু উঠল না। আমি জানি শায়ান জেগে জেগে ঘুমানোর ভান করছে যাতে নামাজ পড়তে না হয়।
শায়ান খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু? সিনেমা তে দেখতাম গাড়ি নিয়ে গাছের সাথে এক্সিডেন্ট করে নায়ক নায়িকার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে যেত। কিন্তু তোমার কি অতিরিক্ত ঘুমের কারণে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেল নাকি? তুমি কি ডিলের কথা ভুলে গিয়েছ?এখন থেকে ঠিক পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ,এর মধ্যে যেন দেখি তুমি মসজিদে চলে গিয়েছ। আমার কথার অবাধ্য হলে জানো তো কি করব? বেশি কিছু করব না বেবি , শুধু ভিডিও টা ভাইরাল হয়ে যাবে।
যাচ্ছি তো সিনিয়র বেবি।এতো প্যারা দাও কেন?সোজা করে বললেই তো পারো।
আমি রুম টা গুছিয়ে কিচেনে চলে গেলাম। কিচেনে গিয়ে দেখি আম্মু নাস্তা রেডি করছে। আমি আম্মুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম ,গুড মর্নিং আম্মু।
গুড মর্নিং টু বেবি।
তুমি কিচেনে কেন আম্মু? আমি রান্না করতাম।
তুই তো এই এক সপ্তাহ রান্না করেছিস মা। আজকে থেকে তোর আবার স্কুলে জয়েন করতে হবে। এখন রান্না করে আবার দিন ভরে বকবক করতে হবে। অনেক কষ্ট হয়ে যাবে তোর। আমার তো তেমন ক্লাস নিতে হয় না। কিন্তু তোর তো অনেক গুলো ক্লাস নিতে হয়।তাই ভাবলাম আমিই রান্না করি। তুই বরং ছুটির দিনে রান্না করিস।
ঠিক আছে আম্মু।
আমি নাস্তা সেরে রেডি হয়ে স্কুলে চলে আসলাম। স্কুলে এসেই মিনহাজ স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল।
আরে কুয়াশা! কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন স্যার?
আমার আর ভালো থাকা হলো কই?বাদ দাও আমার কথা। তোমার সংসার জীবন কেমন চলছে?
আপনাকে তো বলা হয়েছিল আসলেন না কেন বিয়েতে?
চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্যের হতে দেখার সাহস আমার ছিল না কুয়াশা।
মানে কি স্যার?কে আপনার ভালোবাসার মানুষ?
মিনহাজ স্যার আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
কুয়াশা চল আমরা ক্যান্টিনে গিয়ে বসি। যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে। ক্লাস শুরু হওয়ার এখনো তো দেরি আছে।
ঠিক আছে স্যার চলুন।
আমরা ক্যান্টিনে গিয়ে বসলাম। বেশ বড় ক্যান্টিন এইটা। অনেক মানুষের আনাগোনা হয় এইখানে।
কুয়াশা কি খাবে বল?খালি মুখে তো আর গল্প জমবে না।
আমি মাত্রই নাস্তা সেরে এসেছি। এখন কিছুই খাব না।
এখানেই শেষ নয় পর্ব ৫
খাবো না বললে তো হবে না। কিছু একটা খাও।
ঠিক আছে কফি খাওয়াই যায়।
আমরা দুইজনে কফি খাচ্ছি আর গল্প করছি হঠাৎ টেবিলের অপর সাইডে পরিচিত একটা মুখ দেখে থমকে গেলাম। আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না ও এইখানে তাও আবার এই অবস্থায়।