এখানেই শেষ নয় পর্ব ৩
অপরাজিতা রহমান
আমি লজ্জায় অপমানে রুম থেকে বের হতেই বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে গেলাম। পেছনে ফিরতেই দেখি সামিরা।
আসসালামুয়ালাইকুম ম্যাম।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আচ্ছা ম্যাম আমি আপনাকে কি বলে সম্বোধন করব?
স্কুলে আপনি আমার টিচার।বাসায় আমার একমাত্র ভাইয়ার বউ।এখন তো আপনি আমার কিউট ভাবি হন, তাহলে ভাবি ডাকি?
না সামিরা। তুমি তো জানো আমাদের বিয়েটা অন্য পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক ভাবে হয় নি। আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কেউ জানে ও না। স্কুলে ব্যাপার টা জানাজানি হলে সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।তার থেকে তুমি বরং আমাকে আপু বলে ডেকো।
ঠিক আছে আপু। কিন্তু স্কুলের সবাই তো জানে তোমার ডাক্তারের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
আরও পর্ব গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
হুম। আসলে মামা আমাকে সবজায়গাতে তার মেয়ের পরিচয় দিত।বলত আমার দুই টা মেয়ে।মামা কিভাবে যেন জানতে পেরেছিল যে মামি আমাকে অ”ত্যা”চা”র করে,ঠিক মতো খেতে দেয় না। এরপর মামা আর আমকে বাসায় রাখে নি। আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয় এবং যাবতীয় খরচ মামাই বহন করত। হোস্টেলে থেকে আমি ইন্টার , অনার্স, মাস্টার্স শেষ করি। মাস্টার্স শেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে আবেদন করি।
আর ভাগ্যেক্তমে আমার চাকরিটা হয়ে যায়। চাকরির সুবাদে মামি অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়।কারন মাস শেষে মামার অগোচরে মামির হাতে আমার বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতাম। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন মামি এসে বলল, শুক্রবারে আমাকে দেখতে আসবে। যথারীতি দেখতে এলো , আমাকে তাদের পছন্দ হল।তারা বিয়ের পাকা কথা বলে গেল। কিন্তু তখন ও তারা জানতো না আমি মামার বাড়ির আশ্রীতা, আমার বাবা মা নেই।
বিয়ের দিন যখন জানতে পারল আমি মামার মেয়ে নয় বরং আমি তার বাড়ির আশ্রীতা তখন ছেলে কোন আশ্রীতাকে বিয়ে করবে না বলে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়। জানোই তো একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া কতটা লজ্জার ,কতটা অপমানের। অথচ ছেলেদের একটা কেন হাজার টা বিয়ে ভাঙ্গলে ও কোন সমস্যা নেই।কারন আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা কথা আছে “স্বর্ণের আংটি বাঁকা ও ভালো।”বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য মামি সবার সামনে আমাকে গালিগালাজ করতে লাগল, আমি অপয়া অলক্ষী বলে। সবার সামনে থাপ্পড় দিতে যাবে এমন সময় ম্যাম গিয়ে মামির হাত ধরে ফেলে।
পাগল হয়ে গেছেন আপনি?এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধাবোধ করছেন না।
ওমা এ দেখি মার থেকে মাসির দরদ বেশি।বলি এতো দিন দরদ কই ছিলো?ওর মতো অলক্ষী মেয়ের ঠাঁই নেই আমার বাসায়।এতোই যখন দরদ দেখাচ্ছেন তাহলে নিয়ে যান আপনার সাথে করে।
হ্যাঁ, নিয়ে যাবো আমার একমাত্র ছেলের বউ করে। কুয়াশার অপমান , অ”ত্যা”চা”রে”র কথা অনেক শুনেছি আজ স্বচোখে দেখলাম। কুয়াশার বিয়ে হবে এবংএক্ষুনি হবে।
মম মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি আমাকে বারবার অনুরোধ করেছিলে এই বিয়েতে উপস্থিত থাকার জন্য।তাই আমি এসেছি। আমি বিয়ে করতে এইখানে আসি নি। তাছাড়া তুমি তো জানো আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। তবুও তুমি কিভাবে এই মহিলা কে বিয়ে করতে বলছো যে কিনা আমার দুই বছরের সিনিয়র।
তুমি বিয়ে করবে কি না?
মম একটু বোঝার চেষ্টা কর।
করবে কি না? হ্যাঁ অথবা না?
তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তোমার কোন কথা ফেলতে পারি না।তার জন্যই এমন টা করলে। ঠিক আছে আমি বিয়ে করব তবে শুধু কাগজে কলমে।তাকে কখনো আমি স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারব না।
এরপরের সবই তো তোমার জানা আছে সামিরা।
আপু একটা কথা বলি।
বল।
শুনেছি মেয়েদের নাকি একবারই বিয়ে হয়। ভাইয়া যতই তোমার জুনিয়র হোক , এখন সে তোমার স্বামী। তুমি প্লিজ তোমাদের সম্পর্ক টা নষ্ট করে দিও না। তোমরা চাইলে তো অন্য পাঁচ জন স্বামী স্ত্রীর মত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।
বাহ্ সামিরা! তুমি তো দেখছি জ্ঞান দেওয়া ও শিখে গিয়েছ।মনে হচ্ছে তুমি আমার টিচার আর আমি তোমার ছাত্রী। তোমার তো কিছু দিন পরেই এসএসসি পরীক্ষা।সকাল সকাল না পড়তে বসে আঙ্কেলের রুমে আড়ি পেতেছিলে কেন?
আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম আপু। হঠাৎ বাবার রুম থেকে চিল্লাচিল্লি শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তুমি বাবার কথায় কিছু মনে করো না।বাবা তোমাদের বিয়ে টা মানতে পারে নি।বাবা চেয়েছিলেন তার বিজনেস পার্টনারের মেয়ে তাকিয়া আপুকে ভাইয়ার বউ করতে।[সামান্না পরিবর্তন করে তাকিয়া দেওয়া হল] কিন্তু আম্মু তাকিয়া আপুকে পছন্দ করে না। তাকিয়া আপু অনেক বেশি আধুনিক আর উশৃঙ্খল,যার আম্মুর পছন্দ নয়।
আম্মু সবসময় আফসোস করে বলত, ইশ্ কুয়াশার মতো এমন একটা মেয়ে কে যদি আমার শায়ানের বউ করতে পারতাম। আম্মু একবার চেয়েছিল তোমার মামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তোমার বয়সের কথা চিন্তা করে আবার পিছিয়ে গিয়েছিল। আমার কি মনে হয় জানো তাকিয়া আপু কখনো ভাইয়া কে ভালোবাসে নি। ভালোবেসে ভাইয়ার টাকা কে। ভাইয়া কে শুধুমাত্র তার স্বার্থে ব্যবহার করছে।যখনই স্বার্থ হাসিল হয়ে যাবে ভাইয়া কে তখন আর কোন প্রয়োজন পড়বে না।
তাকিয়া তোমার ভাইয়ার লেখিকা গার্লফ্রেন্ড তাই না?
হ্যাঁ। শুনেছি এবারের বইমেলায় নাকি তাকিয়া আপুর বই বের হবে।তবে আমার মনে হয় না তার লেখা বই কেউ কিনে পড়বে।
এতো বড় নামকরা একজন লেখিকার বই পড়বে না কেন?
আপুর যে কু”কু”রে”র মতো ব্যবহার,দু কলম লিখতে পেরে নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে।
তোমার ভাইয়া তো খুব এক্সাইটেড তার লেখিকা গার্লফ্রেন্ডের বই প্রকাশিত হওয়ার জন্য।
আমি ও খুব এক্সাইটেড তবে তাকিয়া আপুর জন্য নয়। আমার, আম্মুর এমনকি ভাইয়ার ও পছন্দের একজন লেখিকা সাইফাতুল মুনতাহা আপুর জন্য।মুনতাহা আপু অনলাইনে একজন ফেমাস রাইটার। শুধু তাই নয় আপু নাটক, ও শর্টফ্লিমের স্ক্রিপ রাইটার হিসেবে কাজ করে। ২০২৩ সালের বইমেলায় আপুর লেখা বই ও প্রকাশিত হবে। আমার কতো দিনের ইচ্ছা আপুকে ফেস টু ফেস দেখার তাকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার।
কিরে সামিরা তুই সকাল সকাল পড়তে না বসে এই বুড়ি মহিলার সাথে কিসের এতো গল্প করছিস?ও নিশ্চয় তোকে কূবুদ্ধি দিচ্ছে।এই বুড়ি মহিলার থেকে সাবধান থাকবি।
ভাইয়া কাকে বুড়ি বলছো তুমি? আমার মনে হয় তোমার চোখ ই বুড়ো হয়ে গেছে। তুমি জানো আপুর জন্য ভার্সিটির কতো ছেলেরা পা”গ”ল। একবার তো আমাদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একটা জুনিয়র ছেলে অপুকে পুরো স্কুল ক্যাম্পাসের সামনে প্রপোজ করেছিল।
হু যেই না চেহারা নাম রাখছে তার পেয়ারা। সিনিয়র বেবি তুমি আমার সাথে আমার রুমে চলো।
কেন?
বাসর পালন করব তাই। রাতে তো করতে পারি নি।তাই দিনে করব। তাড়াতাড়ি রুমে আসো।
আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।
এখানেই শেষ নয় পর্ব ২
কিভাবে বাধ্য করতে হয় আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।
আমি যখন বলেছি যাবো না .. আমার সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই শায়ান আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আমার দিকে আগাতে লাগল।
একি ! কোন ধরনের অ”স”ভ্য”তা”মি শুরু করেছেন?
শার্টের বোতাম খুলছেন কেন?