অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৭
তামান্না ইসলাম কথা
নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে আছে অরিত্রি। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে কিন্তু তা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না আয়ান। বিরক্ত হয়ে অরিত্রির পাশ থেকে সরে আসে। একেই তো অরিত্রি এখনো জীবিত তার উপর নিহান নিজেও এখানে উপস্থিত আছে। অরিত্রির জন্য না নিজের প্ল্যান নষ্ট হয়ে যায়।
” নিহানের আগে এই মেয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি আমার পথের কাঁটা হয়ে কাউকে দাঁড়াতে দিবো না। কিন্তু এই অরিত্রিকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আয়ান তাড়াতাড়ি বুদ্ধি বের কর নয়তো তোর কিছু করার আগেই তুই নিজেই শেষ হয়ে যাবি।”
আরও গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
নিজে নিজে কথা গুলো বলে সামনে থাকা ম*দের বোতল থেকে মদ নিয়ে শেষ করতে থাকলো। শেষ বোতলের অবশিষ্ট মদটুকু গ্লাসে ঢেলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু নেশায় মত্ত হয়ে থাকায় নিজেকে ব্যালেন্স করে রাখতে পারছে না। কোনো রকম টেনে হেঁচড়ে অরিত্রির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
“আমি তোমাকে এতো ভালোবাসার পরেও তুমি আমার সাথে এতো বড় অন্যায় করলে। তুমি আমাকে ছেড়ে নিহানকে বিয়ে করে নিলে কেনো?”
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে একটা সিক্রেট বলি? আমার আর নিহানের বিয়েই হয়নি। আর নিহানের কাছে যেই বাচ্চা আছে সেও নিহানের না।”
আয়ানের কথা শেষ হতেই অরিত্রিও কথা গুলো বলে মিট মিট করে হাসতে লাগলো। কিন্তু আয়ান নেশায় ডুবে থাকার জন্য অরিত্রির কথা গুলো সম্পূর্ণ বুঝতে পারলো না। অপরদিকে আয়ানের চোখে অরিত্রির প্রতিচ্ছবির পরিবর্তে তরীর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে বারবার। অপরদিকে অরিত্রিও কিছু একটা মনে করে আবারো মিটি মিটি করে হেসে চলেছে।
” তুমি হাসছো কেনো? তুমি জানো আমি তোমাকে কত্ত ভালোবাসি। তোমাকে একটু চুমু খাই? প্লিজ!”
কথাটা বলেই অরিত্রির দিকে ঝুঁকে পরে আয়ান। অপরদিকে অরিত্রি মিটি মিটি করে হেসে চলেছে।
আয়ান ধীরে ধীরে অরিত্রির পাশে এসে অরিত্রির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে চুমুর পরিমাণ বেড়ে যেতে লাগল। অরিত্রি নিজেও নিজের নরম ঠোঁটের মাঝে ছোঁয়া পেয়ে দিশেহারা। এতোটা সময় পরে কোনো পুরুষের স্পর্শে এসে অরিত্রি নিজেকে সামলে উঠতে সক্ষম হলো না। আয়ান অরিত্রির ঠোঁট ছেড়ে ধীরে ধীরে সমস্ত মুখে চুমু এঁটে দিতে লাগলো। চিবুকে ঠোঁটের ছোঁয়া পড়তেই সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো অরিত্রি। সেকেন্ড খানিক আয়ানের চুল আঁকড়ে ধরে চিবুকে ধরে রাখলো। আয়ান একটা সময় উত্তেজিত হয়ে নিজের পরিধানের বস্ত্র ছুঁড়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো। দুই প্রাপ্ত বয়স্ক নরনারী একে অপরের সঙস্পর্শে এসে এক আদিম খেলায় মত্ত হয়ে উঠলো। নেশায় ডুবে থাকা নরনারী বুঝতে পারলো না তাদের অজান্তেই এতোটা কাছাকাছি চলে এসেছে।
রাত বারোটা। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলো চারিদিক আলোকিত করে তুললেও মুখ অন্ধকার করে শুয়ে আছি। স্টামলাইটের সুইচ অন অফ করে একবার রুম আলোকিত করে দিচ্ছি তো একবার অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে তুলেছি। পাশে চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে নিহান। শেষ বারের মতো লাইট অন অফ করে দিয়ে নিহানের বুকে মাথা রাখলাম। কিছুটা নিহানের কাছ ঘেঁষে বাম হাত বুকের উপর দিয়ে দিলাম। কিন্তু আমার এহন কাজে নিহান বিরক্ত বোধ করে হাত সরিয়ে দিলো। আমি এবার নিহানকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপাতে শুরু করে দিলাম।
“সমস্যা কি তোমার তরী? আমার ঘুমের সমস্যা করছো কেন বারবার? একবার লাইট অফ অন করছো তো আবার চোখের জল দিয়ে টিশার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছো। তুমি এমন করছো কেনো?”
বিছানা থেকে নেমে মৃধু চিৎকার করে কথাটা বললো নিহান। এতে হালকা কেঁপে উঠলেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করার ফলে আমার কেঁপে উঠা বুঝে উঠতে পারলো না সে।
” আমার সত্যি অনেক বড়ো ভুল হয়েছে। আমি সত্যি মিথ্যে না জেনেই আপনাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি আপনাকে নিজের থেকে বেশি যেমন বিশ্বাস করি, তেমনি ভালোবাসি। আমি কখনো আপনাকে অবিশ্বাস করিনি। আপনাকে যেমন আমি বিশ্বাস করি ঠিক তেমনি আমার ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আছে। আমার সত্যি অনেক বড়ো ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি যে আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। আপনি আমার অর্ধাঙ্গ, আপনি আমার সুখের থাকার মন্ত্র। যেখানে আমি ছবি গুলো দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি নিহান। নিহান আমার ছোট ছোট খুশির কারণ কারণ যে একমাত্র আপনি। আপনার থেকে এই দূরত্ব আমার সহ্য হচ্ছে না নিহান। প্লিজ এই দূরত্ব, ভুল আমাদের মাঝে আনবেন না। আমি যে আপনাকে ভালোবাসি নিহান।”
নিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে কথা গুলো বললাম। নিহান নিরুত্তর হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। এইদিকে কান্নার ফলে নিহানের টিশার্ট ভিজে অবস্থা খারাপ। অতি কান্নার ফলে একসময় হেঁচকি উঠে গেলো।
” আর কান্না করতে হবে না। অনেক হয়েছে এবার চুপ যাও। কিন্তু তরী এভাবে অবিশ্বাস আর করো না। বিশ্বাস ছাড়া সম্পর্ক টিকে না।”
এক হাত দিয়ে হালকা জড়িয়ে ধরে অপর হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু নিহানের এরূপ কাজে কান্নার গতি কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়ে গেলো। চোখের পানি নাকের পানি দিয়ে একাকার অবস্থা।
কিছু মানুষ হয় না যে, কাছের মানুষ বা প্রিয় মানুষের কাছে থেকে একটু ভালো ব্যবহার পেলেই এরা আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠে। একটু ভরসার আশ্রয় পেলেই, একটু খারাপ লাগলেই কান্নাকাটি করে চোখের জলে নাকের জলে একাকী অবস্থা করে তুলে। আমারও এখন একই অবস্থা। নিহানের সাথে দূরত্ব আমাকে ভিতরে ভিতরে ক্ষত বিক্ষত করে তুলেছিল। এখন নিহানের বুকে এসে সেই সব কিছু চোখের পানি ধারা জলাঞ্জলি দিয়ে দিচ্ছি।
” ইশ্ কি মেয়েরে বাব্বাহ! চোখের জলে নাকের জলে আমার টিশার্ট একদম নষ্ট করে দিলো। এতো বড়ো মেয়ে হয়ে এমন করতে পারে কেউ? এই মেয়ে ছাড়া আমাকে! ছিঃ আমি এখন কি ভাবে বউয়ের সামনে যাবো? দশটা না পাঁচটা না আমার একটা মাত্রই বউ। কি গন্ধ করেছে তুলেছে আমার টিশার্টটা।”
“আপনাকে এই টিশার্ট পড়াএ থাকতে হবে এবং আমার চোখের জল নাকের জল নিয়ে থাকতে হবে। আর আমার গন্ধ আপনার নাকের ডগায় থাকবে।”
নিহান কথাটা বলার পর পরই আমি নিজের নাক নিহানের টিশার্টে মুছে নিয়ে কথা গুলো বললাম। এতে নিহান কিছুটা হেসে উঠলো কিন্তু সেটা শরীর কাঁপিয়ে শব্দ হলো না।
” আমাকে ক্ষমা করেছেন?”
” উহু! ক্ষভা করতে পারি তবে একটা শর্তে।”
“কি শর্ত? আমি সব কিছু শুনতে প্রস্তুত।”
এতো সময় কথা গুলো নিহানকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললেও শেষ কথা গুলো নিহানের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললাম। তবে দুই হাত দিয়ে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে রেখেই নিহানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
” সত্যি সব কিছু শুনবে?”
নিহানের কথা শেষ হতেই উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। যে আমি সব কিছু শুনবো।
” এই যে নিরাত্রি বড় হয়ে যাচ্ছে সে তো একা হয়ে যাচ্ছে। কারো সাথে খেলা করতে পারবে না।”
” একা হয়ে যাচ্ছে কোথায়? আপনি আছেন, আমি আছি, আম্মা আছেন তাহলে একা কোথায়? আর নিরাত্রির সাথে আমরা আছি তো। একসাথে সবাই মিলে আনন্দ করবো, খেলা করবো।”
বোকা বোকা মুখাবয়ব করে কথাটা বললাম। কিন্তু আমার কথা নিহানের মনে ধরেনি সেটা নিহানের কপালে পড়া ভাঁজ গুলো বলে দিচ্ছে।
“আমি আমাদের কথা বলিনি। আমি বলেছি, আমাদের এবার নিরাত্রির একজন খেলার সঙ্গী নিয়ে আসা দরকার। নিরাত্রি ভাই বলে ডাকবে, তোমাকে মাম্মা, আমাকে বাবাই বলে ডাকবে। যারা ছোট ছোট পা আমাদের সম্পূর্ণ বাড়ি জুড়ে বিচরণ করবে। আমি সেই খেলার সঙ্গীর কথা বলেছি।”
অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৬
নিহানের সম্পূর্ণ কথা বুঝে উঠতেই আমার সম্পূর্ণ মুখে লজ্জার এসে হানা দিলো। এতো লজ্জা আমার কোথায় ছিলো? আগে তো এতো লজ্জা পাইনি। নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে আবারো আমার ভদ্রলোকের বুকে মুখ লুকাতে হলো।
” ইউ ইডিয়ট! তুমি আমার সাথে এইটা কি করলে?”