অবেলায় এলে তুমি - bhuapurnews24

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৬

অবেলায় এলে তুমি

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৬
তামান্না ইসলাম কথা

মন খারাপের কোনো দিক হয় না। আর না তো হয় কোনো কারণ। কিন্তু মাঝে মাঝে দুঃখের অনেক কারণ হয়। কখনো, কখনো আমাদের ছোট ছোট জিনিস গুলো অনেক কষ্ট দেয়, অনেক পোড়ায় আবার কখনো কখনো মনে করিয়ে দেয় এই কষ্টের থেকে হয়তো মরণও অনেক সহজ। আবার তো কখনো কখনো দেখা যায় অনেক বড়ো বড়ো আঘাতেও কষ্ট পায় না।

হেসে খেলে সে-ই কষ্ট, দুঃখ অতিক্রম করে। কিন্তু প্রিয় মানুষ বা আপন জনদের থেকে পাওয়া কষ্ট, দুঃখ গুলো যেনো হাজার কষ্ট দুঃখ ফিকে পড়ে যায়। তেমনি নিহান এখন যেই কথা গুলোর সম্মুখীন হয়েছে তা হয়তো তরী সব কিছু না জেনেই বলেছে কিন্তু যখন বললো শারীরিক চাহিদা মেটাতে কাছে আসে সেই কথাটা কেনো যেনো বারবার নিহানকে ভিতরে ভিতরে কুড়াচ্ছে।‌

আরও গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

” আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি সত্যি মিথ্যে কিছু না জেনেই আপনাকে বাজে কথা বলেছি। প্লিজ আমার এই ভুল ক্ষমা করে দিন। আমি আমি আর কখনো সত্যি মিথ্যে না জেনে এমন করবো না।”
আকাশের দিকে এক মনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো নিহান। চাঁদের আলো কেমন পানিতে পড়ায় সুন্দর লাগছে। কিন্তু সেদিকে না তাকিয়ে অন্ধকারে কিছু হাতড়ে চলেছে নিহান। এরই মাঝে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললাম।

” উহু! একদম নড়াচড়া করবেন না। এই হাত আমি ছাড়ছি না। এই যে ধরেছি আর কখনো ছাড়বো না। যদি মৃত্যুও আসে তবুও এই হাত আমি ছাড়বো না।”
বুকে থেকে হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে স্থান ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল নিহান। কিন্তু বুক থেকে আমার হাত সরিয়ে দিতে পাশে গিয়ে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাত তলিয়ে দিয়ে কথা গুলো বললাম।
” ঘৃণা কাকে করে জানো তরী?”

কথাটা বলেই আমার দিকে তাকালো নিহান। কিন্তু সে-ই দৃষ্টি বেশি সময় স্থানীয় করলো না। দৃষ্টি সরিয়ে আবারো অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো। এই দিকে আমি এখনো নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি উত্তরের অপেক্ষায়।
” তরী আমার উপর তোমার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। আমি চাই আগে তোমার বিশ্বাস অর্জন করি, ভালোবাসি তার পর না হয় তোমার নরম হাতের ভাঁজে আমার হাত থাকবে? আমি যত দিন না তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারছি ততদিন আমাদের কাছে না আসায় ভালো তরী।

যে কোনো সম্পর্ককে এক সুতোয় বেঁধে থাকে শুধু মাত্র বিশ্বাস আর ভালোবাসা দিয়ে তরী। যেই সম্পর্কে বিশ্বাস আর ভালোবাসা নেই সে-ই সম্পর্ক খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়। সম্পর্কে যত বেশি বিশ্বাস, ভালোবাসা থাকবে তত বেশি সেই সম্পর্ক মজবুত থাকবে। আর! আর একটা কথা জানো তরী? আজ তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখতে পেরেছি তরী। আমরা ঘৃণা তাকেই করি যে আমাদের সাথে খারাপ কিছু করেছে বা ঘৃণিত কাজ করেছে। আর আমি তো তোমার সাথে ঘৃণিত কাজ করেছিই। আর একটা কথা বলি, আমি আমার জীবন থেকে কোনো কিছু হারাতে চাই না। তাই আমি আগে তোমার বিশ্বাস আগের মতো অর্জন করি, আমার ভালোবাসা তোমাকে উপলব্ধি করায়, তুমি আমাকে আবারো আগের মতো ভালোবাসো, বিশ্বাস করে এই হাতের ভাঁজে হাত রাখো। এর আগে আমি আর কিছু চাইছি না।”

কথা গুলো বলে হাতের ভাঁজ থেকে হাত বের করে রুমের দিকে চলে গেলো। ঘৃণা! তাও আবার সে-ই মানুষকে যাকে আমি ভালোবাসি? যেই মানুষটিকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম মনের মাঝে এক অজানা ঝড় সৃষ্টি হয়েছিল সেই মানুষকে ঘৃণা? আমার অষ্টাদশী বয়সে প্রথম ভালোবাসার ফুল সৃষ্টি করা ব্যক্তিকে আমি কি ভাবে ঘৃণা করি?
“আপনি আমাকে ভুল বুঝলেন নিহান। আমি আপনাকে যে অসম্ভব ভাবে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষকে কি ভাবে ঘৃণা করে নিহান? আপনি আমার সে-ই অনাকাঙ্খিত পাওয়া যাকে আমি প্রতিদিন, প্রতিবার নানান ভাবে নিজের স্বপ্নে সাজিয়ে এসেছি।

একটু একটু করে হৃদয়মাঝারে গড়া তোলা আমার প্রতিটি অনুভূতি গুলোকে আমি কি করে ঘৃণা করি? নিজের ভাগ্যের উপর আমি বরাবরই হেরে গিয়েছি নিহান। আপনাকে তো আমি কখনো পাবো এইটা আশা করিনি নিহান। আপনাকে ভুলে গিয়ে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চলেছিলাম কিন্তু দেখুন আল্লাহ হয়তো আমার ভাগ্যে আপনাকে রেখেছিল। এতো কিছুর পরেও আপনাকে আমি পেয়ে গেছি। কিন্তু আমি যে আপনাকে ঘৃণা করি না আমি আপনাকে ভালোবাসি নিহান। ভালোবাসি! আমি কি করে বোঝাই আপনাকে যে, ঐ মূহুর্তে আমার ভিতরে কি ঝড় বয়ে চলেছিল। আপনার আর মেয়েটির হেসে হেসে কথা বলা, একে অপরের উপর ঢলে পড়া, আর আপনি যে মেয়েটির চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়েছেন সেই ছবি গুলো আমাকে কি পরিমাণে অশান্ত করে তুলেছিল নিহান। আমি আপনাকে ঘৃণা করতে পারি না নিহান। পারি না আমি ঘৃণা করতে।”

কান্না করতে করতে সেখানে বসে গিয়ে কথা গুলো বললাম। কিন্তু আমার কথা গুলো যে এই দাম্ভিক মানুষটার কান পর্যন্ত পৌঁছল না। কখনো কি আমার না বলা কথা গুলো নিহান বুঝতে পারবে না? ভালোবাসা না কি চোখে ভেসে উঠে। কোথায় নিহান তো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারলো না। তাহলে কি কথাটা ভুল? না কি নিহান আমাকে দেখিনি? আচ্ছা নিহান কি আমাকে একটু পড়তে পারে না? আমি চাই নিহান আপনি আমার না বলা প্রতিটি কথা শুনোন। আমার ভালোবাসা গুলো বুঝোন।

একটা রুমে ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছে আয়ান। তার সামনেই অরিত্রি একের পর এক গ্লাস শেষ করেছে। কিন্তু আয়ান নিজের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে বসে অরিত্রির খাওয়া দেখে যাচ্ছে। পাঁচ/ ছয় ঘণ্টা আগে রিসোর্টে এসেছে তারা। আয়ান শুধু অরিত্রির বদলে যাওয়া গুলো পরোক্ষ করছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এইটা অরিত্রি আবার কখনো কখনো মনে হয় এইটা অরিত্রি না। অরিত্রির মতো দেখতে অন্য কেউ। যদিও বলা আছে, পৃথিবীতে এখ রকম দেখতে চার জন মানুষ আছে। হয়তো তাদের মাঝে অরিত্রিও একজন। কিন্তু আয়ান শিউর না হয়ে কোনো স্টেপ নিতে পারছে না। আবার এইদিকে আয়ান শুধু নিজের একার জন্য রুম বুক করেছিল কিন্তু এখন অরিত্রিও এসে হাজির হয়েছে। যদিও আয়ান বলেছিল রুম নিতে অরিত্রি নিষেধ করেছে।

” তুমি আর ড্রিংকস নিও না অরি। তুমি তো নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছো। আর খেও না।”
অরিত্রির হাতে থাকা ড্রিংকসের গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে দিতে দিতে কথা গুলো বললো আয়ান। কিন্তু আয়ানের কথা শুনে শুধু হাসলো অরিত্রি, কিছু বললো না।
” ইউ নো হোয়াট আয়ান! এই নিহানের জন্য আমি সব কিছু হারিয়েছি। জীবিত থেকেও আমাকে মরতে হয়েছে। নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে এক মিথ্যে পরিচয় নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। আর তোমাকে দেখো! আমাকে দেখে তুমি কেমন ভুত দেখার মত শুধু তাকিয়ে থাকো।”

কথা গুলো বলে হাসতে লাগলো অরিত্রি।অরিত্রি যে এখন সম্পূর্ণ নেশায় আসক্ত হয়ে আছে যেটা অরিত্রির টালমাটাল হয়ে পড়ে যাওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই দিকে আয়ান এইটা ভেবে স্থির নিঃশ্বাস ফেললো যে, অরিত্রি সব কিছুর জন্য নিহানকে দোষী ভাবে।
“অরি আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেও তো।”
” কি বলো!”

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৫

আয়ানকে কথাটা বলে গ্লাসে আরেকটু ড্রিংকস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অরিত্রিকে উঠে দাঁড়াতে দেখে আয়ান নিজেও উঠে দাঁড়িয়ে অরিত্রির পিছনে দাঁড়াল।
” তুমি বেঁচে ফিরলে কী ভাবে? আর তুমি যদি বেঁচে ছিলেন তাহলে সিজার রুমে কে ছিলো? আর তুমি ভেবে কাকেই বা দাফন করা হয়েছে?”

অরিত্রিকে প্রশ্ন গুলো করেই উত্তরের আশায় অরিত্রির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল আয়ান। আয়ান প্রশ্ন করতে করতে অরিত্রি বিছানায় গিয়ে বসে পড়েছে।
” এইটা তো সিক্রেট আয়ান। সিক্রেট! ডঃ সেন! সেন…….

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৭