অবেলায় এলে তুমি - bhuapurnews24

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২২

অবেলায় এলে তুমি

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২২
তামান্না ইসলাম কথা

রাত তিনটা বেজে তেইশ মিনিট। তীব্র তৃষ্ণায় চৌচির হয়ে আছে সালমা বেগমের গলা। বেড সাইড টেবিলে রাখা জগে পানির ছিটে ফোঁটাও পাওয়া গেলো না। এই দিকে ঘুমের জন্য ঠিক ভাবে বসে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না তো তৃষ্ণায় জীবন যায় যায় অবস্থা। ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই জগ হাতে নিয়ে বের হয়ে আসেন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হঠাৎ করে কারো ছায়া সরে যেতে দেখেই চোখে থাকা ঘুম টাটা! বায়! বায়! করে পালিয়ে যায়। হঠাৎ করে কারো ছায়া দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এতো রাতে ড্রয়িংরুম থেকে কিচেনের দিকে কারো ছায়া যেতে পারে ভেবেই দিশেহারা হয়ে গেলেন। এতো বছর ধরে এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছে কোনো ভূতপ্রেত নেই বলেই জানেন তিনি। তাই মনে মনে ভেবে নিলেন হয়তো বাড়িতে চোর এসেছে। কিন্তু উনার বোধগম্য হচ্ছে না চোর বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো কি ভাবে?

বুকে সাহস সঞ্চয় করে টিপ টিপ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে কিচেনের দরজার পাশে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।
বউয়ের উপর রাগ ঝারতে গিয়ে বাড়ি থেকে কিছু না খেয়েই বের হয়ে আসে নিহান। রাস্তায় রিহার সাথে কথা বলার আবারো অফিসে যেতে হয় নিহানকে। সেখানে জরুরি মিটিং থাকায় তরীকে ফোন করার সময় পাইনি তাই ভেবেছিল একেবারে বাড়ি ফিরে কথা বলবে।

আরও গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  

কিন্তু অফিস থেকে ফেরার পর তরীকে দেখতে না পেয়ে আবারো এখানে চলে আসে যার ফলস্বরূপ আর কিছু বলার সময় পাইনি। অন্যদিকে আসার পর থেকেই দুজনে ঝগড়াঝাঁটি শুরু করে দিয়েছিলো। তরী নিজের রুমে চলে গিয়ে লক করে দিয়েছে ভিতর থেকে এতো রাতে কাউকে ডাকাডাকি করে ঘুম নষ্ট করতে চাই না বলে অজ্ঞাত ড্রয়িংরুমে শুতে হয়েছে। কিন্তু পেটে খিদে থাকার ফলে ঘুম ঠিক মতো হচ্ছিল না। যার জন্য কিচেনের দিকে যায় কিছু খাওয়ার জন্য। তার উপর মশা তো পারে না উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতে। এক দিকে খিদে তো অন্য দিকে মশা। বিরক্ত হয়ে গুনগুন করে কাউকে কিছু বলে চলেছে।

” এতো বড় সাহস আমার বাড়িতে চুরি করতে আসছে। আর কোন বেয়াক্কেল মানুষ সদর দরজা এভাবে খুলে রেখেছে সেটাও আমি পরে দেখছি। আগে এই চোরের ব্যবস্থা করি। আজকে নিজের হাতে চোর ধরে পুরো মহল্লায় নাম করে দিবো। আজকে চোরের একদিন কি আমার যতদিন লাগে।”
মনে মনে কথা গুলো বলে কিচেনের দরজার পাশে থাকা ছোট একটা বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সালমা বেগম। বালতিটা মূলত রাখা হয়েছে কিচেনের ময়লা( সবজির খোসা) গুলো ফেলে দেওয়ার জন্য। সেই বালতি হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল দরজার পাশে চোরের অপেক্ষায়।

” ধ্যাত! কোনো জায়গায় কোন কিছু দেখছি না। শুধু শুধু বউকে ঝাড়তে গিয়ে এখন নিজেই না খেয়ে আমশত্ত হয়ে আছি।”
কথা গুলো বলেই ফ্রিজ থেকে একটা আপেল বের করে খেতে খেতে বের হয়ে আসে নিহান। কিন্তু দ্বিতীয় কামড় দিতে গিয়েও দিতে পারলো না সে। তার আগেই সব কিছু একেবারেই অন্ধকার হয়ে গেল সাথে কিছু কথা কানে ভেসে আসতে লাগলো।

” চোর! চোর! চোর! চোর এসেছে গো। বাড়িতে চোর এসেছে। কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি করে আসো। আমি চোর ধরেছি। চোর! চোর। আমার বাড়িতে চোর এসেছে। কই গো তোমরা তাড়াতাড়ি করে আসো। আমার বাড়িতে চুরি করতে আসা তাই না! চোর আজকে তোর হাড়গোড় আমি ভেঙে দিবো। এই সালমার বাড়িতে চুরি করতে আসা তাই না। আজ পর্যন্ত আমার হাত থেকে কেউ সহজে পালাতে পারেনি আজকে তুইও পারবি না।”
অন্ধকারেই বালতি ধরেই ঘুরাতে ঘুরাতে চিৎকার করে কথা গুলো বলতে লাগলো সালমা বেগম।”

পর দিকে সালমা বেগমের চিৎকার শুনে সবাই নিচে চলে আসে। মাত্র কিছু সময় আগেই ঘুমিয়েছি আর এরই মাঝে মামীর এমন বাজখাঁই গলা শুনে ঘুম যেনো কোথায় পালিয়ে গেলো। এতো জোরে চিৎকার করছে যেনো বাড়িতে ডা”কাত এসেছে। শোয়া থেকে উঠে বসে একবার মেয়ে দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়ে আমার ঘুমিয়েই আছে।
“কি রে তাড়াতাড়ি আয়! চোর তো পালিয়ে যাবে। এতো বড় ধামড়া চোরকে আমি কি আটকে রাখতে পারি? আমার বাড়িতে চুরি করতে এসেছে। এই সালমার সাথে কেউ কোনদিন পারেনি আর ছিঁচকে চোর কি-না আমার বাড়িতে চুরি করতে আসে। আবার আমার ফ্রিজ থেকে খাবার নিতে যায়।”

নাহ্ এবার না বাহিরে না গেলেই না। মামী যেই ভাবে চিৎকার শুরু করেছে তাতে করে একটু পর দেখা যাবে পাশের বাড়ির মানুষজনও চলে আসবে।
” চোর? চোর? কোথায় চোর? আমি আমার বেত নিয়ে এসেছি। আজকে চোরের পিঠের ছাল আমি তুলে দিবো।”
ড্রয়িংরুমের লাইট অন না করেই অন্ধকার হাতড়ে কথা গুলো বললো মামা। এতে মামী বড্ড বেশি বিরক্ত হয়ে গেলেন।

“তুমি অন্ধকারে কি করবে? আগে লাইট অন করে আসো যাও। ততক্ষণে আমি এই চোরকে ধরে রাখছি।”
মামা লাইট অন করার আগেই আমি নিজেই লাইট অন করে দিলাম। কিন্তু লাইট অন করে চোরকে দেখতে গিয়ে উপস্থিত সবাই ড্যাবড্যাব করে চোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মামাও নিজের পুরানো স্কুল বেত নিচে ফেলে দিলো। কিন্তু আমি সেকেন্ড খানিক নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলেও আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। উচ্চ শব্দে হেসে দিলাম।

” মামী চোর কিন্তু সত্যি একটা ধামড়া আর হ্যাঁ উচ্চ শিক্ষিতও।”
কথাটা বলেই আবারো হাসতে লাগলাম। এইদিকে নিহান রেগে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু সে-ই দিকে তোয়াক্কা না করে নিজের হাসি অব্যাহতি রাখলাম। মামী মামা ও কিছু সময় মিটমিট করে হাসলেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মামী শাশুড়ির হাসাহাসি করা দৃষ্টিকটু।

” চুপ ফাজিল মেয়ে। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! কি লজ্জা। আমি বুঝতে পারিনি জামাই। এতো রাতে অন্ধকারে হাঁটাহাঁটি করতে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো চোর এসেছে। তাই এমন ভুল হয়েছে। আর তুমিই বা কখন এলে সেটাও তো আমি জানিনা। তুমি কিছু মনে করো না জামাই।”
আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে নিহানকে বাকি কথা গুলো বললেন মামী। কিন্তু আমি যেনো নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। নিহানের মাথায় কিছু সবজির খোসা আর অল্প ময়লা পানি দিয়ে চিপচিপ হয়ে আছে। সামনের চুল থেকেও টপটপ করে হালকা পানিও পড়ছে।

” না মামী ঠিক আছে। শশুড় বাড়িতে মাঝ রাতে এসে এইটুকু জামাই আদর আমার কাম্য। আমি কিছু মনে করিনি মামী। কিন্তু এই যে বালতি! এই বালতিটা একটু কাজের খালাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবেন।”
শেষ কথাটা যে খোঁচা দিয়ে বললো এইটা বুঝতে মামীর সময় লাগলো না। নিহানের এমন কথায় মামী বেশ লজ্জাবোধ করলেন।

” একি তুমি এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছো কেনো? পায়ে কি হয়েছে?”
মামীকে কথা গুলো বলে নিহান হালকা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে রুমের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু নিহানের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে চলা মামী লক্ষ্য করতেই নিহানকে প্রশ্ন করলেন।
” মামী আপনাদের বাড়িতে লম্বা চুল ওয়ালী, সুন্দর দেখতে ডাইনি আছে এইটা আমাকে আগে কেন বলেননি? আগে যদি বলতেন তাহলে আমি সাবধানে থাকতাম।”
” আমি ঠিক বুঝলাম না বাবা।”

মামা মামী কেউই নিহানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারেনি। কিন্তু কথা গুলো যে আমার উদ্দেশ্যে ছিল সেটা বুঝতে আর বাকি নেই। পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় একটু মায়া হচ্ছিল কিন্তু নিহান আমাকে সবার সামনে ডাইনি বলায় আমার মায়া জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলো।
” মামা আপনাদের বাড়িতে আসার পর এক লম্বা চুল ওয়ালী, সুন্দরী, অল্প বয়সী ডাইনি ল্যাং মেরে ফেলে দিয়ে আমার এই করুণ অবস্থা করেছে। কিন্তু ডাইনির একটুও মায়া হলো না আমার উপর। নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো আর আমাকে এখানে ফেলে রেখে গেলো।”

কথা গুলো বলে এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় না করে রুমের দিকে চলে যায় নিহান। অন্যদিকে মামী এখনো কিছু বুঝতে না পেরে নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
” এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে একটু তেল গরম করে রুমে গিয়ে নিহানের পায়ে মালিশ করে দে। আর কিছু নিয়ে যাস খাওয়ার জন্য। আর তুমি পরের বার থেকে চোখে দেখে চোর! চোর! করবে। এখন এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলো। মানসম্মান সব শেষ করে দিলে তুমি।”
প্রথম কথা গুলো আমাকে বলে শেষ কথা গুলো মামীকে বলে মামা মামী নিজেদের রুমের দিকে চলে যায়। আর আমি নিহানের জন্য তেল আর খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য কিচেনের দিকে চলে গেলাম।

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২১

” নিহানক কিছুর বিনিময় রাখে না বেবি। নিহানকে দিলে নিহান সেটার বিনিময়ে তীব্র ভালোবাসা, জ্বালা গিফট করে।”
নিজের নরম ঠোঁট এবং কোমরে তীব্র ভাবে জ্বালা অনুভব হতেই চোখ দিয়ে আপনাআপনি টপটপ করে বর্ষন হতে শুরু করলো। কিন্তু সামনের মানুষের সে-ই দিকে তোয়াক্কা না করে নিজের কাজ হাসিল করতে লেগে গেল আবারো।

অবেলায় এলে তুমি পর্ব ২৩