অবেলায় এলে তুমি পর্ব ১৬
তামান্না ইসলাম কথা
চোখে মুখে পানির ছিটে পরতেই তীব্র মাথা যন্ত্রণা নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম। মাথা ব্যাথায় মনে হচ্ছে মরে যাব। চোখ দুটোও ভারি লাগছে। দু’চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখি শাশুড়ি আম্মা আর তার পাশে ঐশী নিরাত্রিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল সকাল ঐশীকে দেখে চমকে উঠলাম। এই মেয়ে আবার কখন এলো? আর সবাই আমাদের রুমে এসে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?
” আম্মা আপনারা সকাল সকাল এই রুমে? কোনো সমস্যা হয়েছে কী?”
দুই হাত মাথায় চেপে ধরে শাশুড়ি আম্মাকে কথাটা বললাম।
” তোমার কি শরীর খারাপ তরী? এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে আছো! এখন তো বেলা প্রায় এগারোটা বেজে চলেছে।”
আম্মা আমার পাশে বসে কপালে হাত দিয়ে কথা গুলো বললেন। কিন্তু আমার সেই দিকে মন নেই। গতরাতের কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মেয়েটা কে আর আমাদের রুমে এলো কীভাবে সব কিছু মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।
” আম্মা আমার শরীর ঠিক আছে। আসলে গতরাতে একটা মেয়ে এসেছিল। আর আমি যখন চিৎকার করতে যাবো তখন আমার মাথায় আঘাত করে।”
আরও গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
হড়বর করে কথা গুলো বলে শাশুড়ি আম্মার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
” শান্ত হও তরী। এতো রাতে কে আসবে? আর গেইটের সামনে দারোয়ান ছিল। তোমার কোথাও ভুল হয়েছে। কেউ আসেনি এখানে।”
” আম্মা আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না কেনো? আমি সত্যি বলছি কেউ এসেছিল। আর! আর হ্যাঁ আপনি টেবিলে দেখুন কিছু একটা লিখেছে সে।”
আম্মাকে কথা গুলো বলে আমি নিজেই বিছানা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গেলাম। কিন্তু সেখানে সব কিছু ঠিক আছে কোনো কিছু অস্বাভাবিক নেই। কিন্তু গতরাতে তো সব কিছু এলোমেলো ছিল। আর এখন সব কিছু স্বাভাবিক।
“রাতে হয়তো স্বপ্ন দেখেছিলে তরী। অনেক সময় হয়ে গিয়েছে যাও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করো। নিহান হয়তো এসে পরবে।”
কথা গুলো বলেই শাশুড়ি আম্মা আর ঐশী রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে গতরাতে এখানে কেউ ছিলো।
“” সব সম্পর্ক যেমন সত্যি হয় না তেমনি চোখের দেখাও সবসময় সঠিক হয় না। কিছু সম্পর্ক আড়ালে বেড়ে উঠে আবার কেউ কেউ জন্ম না দিয়েও মা হয়ে উঠে। নিজের সন্তানের খুনিকে নিজের বলে দিতেও পারে। রক্ত কখনো এক হয় না তেমনি বাবার নাম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। মাঝে মাঝে চোখের ভুল, মিথ্যা সম্পর্ক এবং মিথ্যার চাদরে সম্পর্ক গড়ে উঠে সত্যিকে লুকাতে। তোমার নিজেরও সময় ফুরিয়ে আসবে কিন্তু তুমি পাবে না সত্যের হুদিস। অচিরেই শেষ হয়ে যাবে সব সম্পর্ক এবং ভালোবাসা।,”
বিছানায় বসে বসে গতরাতের কথা ভাবতেই বালিশের পাশে কাগজে দেখলে সেটা খুলতেই এমন অগোছালো লেখা দেখে আরো অবাক হয়ে গেলাম। তারমানে আমি কোনো স্বপ্ন দেখিনি। সত্যি কেউ ছিলো আমাদের রুমে। আর এমন অগোছালো চিরকুট সে-ই লিখে গিয়েছে। কিন্তু এমন এলোমেলো কথার কিছু বুঝতে পারছি না। তবে এই বাড়ির মানুষ গুলোর মাঝে রহস্য আছে বুঝতে বাকি নেই। নিহান এবং আম্মা মাঝে মাঝে অদ্ভুত ব্যবহার করে। তার উপর আবার এমন এলোমেলো চিরকুট। সব কিছু কেমন জানি লাগছে। কিন্তু মেয়েটা কে ছিলো? আর কেনই বা এতো রাতে এসেছিল? কিছুই বুঝতে পারছি না। সব কিছুর রহস্য খুঁজে বের করতে হবে। কাগজটা ভাঁজ করে ড্রয়ারে রেখে দিলাম।
” হোয়াটসঅ্যাপ তরী! কেমন আছো?”
ডায়নিং টেবিলে বসে বসে নিরাত্রিকে খাওয়াচ্ছিলাম এমন সময় কারো কন্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। হাতে চকলেট, মিষ্টি, সন্দেশ আর মুখ ভর্তি হাসি। হঠাৎ এতো খুশির কারণ বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম।
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? এই চকলেট গুলো তোমার জন্য। আর এই মিষ্টি আর সন্দেশ সবার জন্য।”
টেবিলের উপর জিনিস গুলো রাখতে রাখতে কথা গুলো বলে আমার সামনের চেয়ারে বসলো।
“ভাইয়া এইসব কি খুশিতে? লটারি পেয়েছেন মনে হচ্ছে। আপনার ঠোঁট থেকে তো হাসির যাচ্ছেই না। এতো খুশির কারণ কি ভাইয়া? বিয়ে করছেন না কি?”
প্রথম কথা গুলো অবাক হয়ে বললেও আয়ানের মুখের হাসি দেখে আমিও মজার ছলে কথাটা বললাম।
” আজকে আমি অনেকটাই খুশি। বলতে পারো লটারি পাওয়ার মতো। তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে খুশি ভাগ করে নেয়। তাই চলে এলাম মিষ্টি নিয়ে।”
খুশিতে আত্মহারা হয়ে কথা গুলো বললো আয়ান। আমি শুধু আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম খুশি।
” হেই তরী! এভাবে তাকিয়ে থেকো না আই নো আমি হ্যান্ডসাম।”
চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে কথা গুলো বলতেই নিজের হুঁশ ফিরে আসে। কি করছিলাম ভাবতেই লজ্জা লাগছে। একজন পরপুরুষের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম।
” নিহান কোথায়? দেখছি না যে। আর আন্টিকেও দেখছি না।”
চারিদিক তাকিয়ে কথা গুলো বললো আয়ান।
” ফুপি ফোন করেছিল তাই কিছুক্ষণ আগে আম্মা ফুপির বাড়ি গিয়েছে। আর উনিও বাহিরে গিয়েছে, চলে আসবে একটু পর।”
নিরাত্রির খাওয়া শেষ হতেই মুখ মুছে দিতে দিতে কথা গুলো বললাম।
” আমার নাম নিয়েছো আর আমি চলে এসেছি।”
কথাটা বলতে বলতেই সদর দরজা দিয়ে নিহান বেশ ভাবসাব নিয়ে প্রবেশ করলো। এমন ভাবসাব নিয়ে আসছে মনে হচ্ছে, কোথাকার কোন সালমান শাহ।
” এই নে তোর প্রিয় সন্দেশ। খা! খা!”
নিহান আয়ানের পাশে এসে দাঁড়াতে কথাটা বলেই নিহানের মুখে সন্দেশ পুড়ে দিলো।
” ভাই তুই তো এই সন্দেশ সব সময় নিয়ে আসিস না। যখন তোর জীবনের বিশেষ কিছু ঘটে তখন এই সন্দেশ নিয়ে আসিস। তাহলে এখন কি খুশিতে?”
আয়ানকেও একটা গোটা সন্দেশ মুখ দিয়ে কথা গুলো বললো নিহান। এদের বন্ধুত্ব এতো সুন্দর যে দেখতে ইচ্ছে করে। জীবনের ছোট বড় সব খুশি ভাগ করে নিতে ভুলে না।
“দু’জন পরে আড্ডা দিবেন। আপনি এখন বাহিরে থেকে ফিরেছেন একেবারে গোসল করে নিচে আসুন। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”
নিরাত্রিকে ঐশীর কোলে দিয়ে টেবিল থেকে এঁটো বাসন নিতে নিতে নিহানকে কথা গুলো বললাম।
“আমার বউ কত কেয়ার করে দেখলি আয়ান। এই জন্য বলি বিয়েটা করে নে। বিয়ে না করলে বিয়ের মজা পাবি না আর বউয়ের কেয়ারও পাবি না। এইবার তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নে।”
কথা গুলো বলে আয়ানের সামনে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন কারো উত্তরের আশা না করেই। এইদিকে আয়ানের সামনে এমন করাই সেখানে আর এক মুহূর্তও না থেকে প্লেট গুলো নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলাম। দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।
তরী সেখান থেকে যেতেই সামনে থাকা গ্লাস শক্ত করে চেপে ধরতেই সেটা খন্ড খন্ড হয়ে গেলো। মূহুর্তের মাঝেই আয়ানের হাত থেকে গলগল করে রক্ত বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে ভরে গেলো। রাক্ত পরার দিকে আয়ানের ভ্রুরুক্ষেপ করে ফিরে তাকালো না। সে তরীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
আয়ান আর নিহান বসে আছে একে অপরের সামনে। সামনাসামনি বসে থাকার কারণ হচ্ছে, নিহান একটা ট্যুর দিতে চাচ্ছে শুধু তরীর সাথে। আর আয়ান বরাবর সুন্দর সুন্দর প্লেস সাজেস্ট করে। যার জন্য নিহান এবং আয়ান সামনাসামনি বসে আছে।
“এভাবে বসে আছিস কেনো? কিছু সাজেশন দে ভাই। এইটাই প্রথম তরীকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে রে ভাই।”
অবেলায় এলে তুমি পর্ব ১৫
” তোর পিঠে দুঘা দিলেই ন্যাকামি সব বের হয়ে যাবে। শা*লা সারাজীবন তো ঠিকই ঘুরে বেড়ালি তখন অস্থির লাগেনি? আর এখন বউ নিয়ে ঘুরতে যাবি আর অস্থির লাগছে।”
“তরীকে নিয়ে তো কোথাও বের হইনি তাই লাগছে। বলতে পারিস মধুচন্দ্রিমায় নিয়ে যাবো। মেয়েটা সারাদিন বাড়িতে বসে থেকে বোর হয়ে যাচ্ছে তাই প্লান করে ফেললাম। এখন বল কোথায় যাওয়া যায়।”
“ভেবে বলছি।”
কথা বলে আয়ান ভাবতে লাগলো কিছু একটা।