অবেলায় এলে তুমি পর্ব ১২
তামান্না ইসলাম কথা
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রান্নার কাজে লেগে পড়েছি। আজ সব কিছু নিহানের পছন্দের খাবার রান্না করেছি। এখন শুধু পায়েশ করা বাকি। পাশেই শাশুড়ি আম্মা এবং কাজের মেয়ে আছে হেল্প করতে। আর নিরাত্রি গতকাল আমাদের সাথে আসা ঐশী নিয়ে খেলা করছে। মেয়েটার কাছে নিরাত্রি সুন্দর খেলা করে, যদিও নিরাত্রি সবার কাছেই থাকে। এক এক করে সব খাবার টেবিলের উপর রেখে আসছে আম্মা। আর ভদ্রলোক রুমে বসে বসে শরীর চর্চা করছে। একটু পরেই ডাক পড়বে চায়ের জন্য।
“এই চা নিয়ে উপরে দিয়ে আসো। আমি তাড়াতাড়ি করে পায়েশ রান্না শেষ করছি।”
চায়ের কাপ কাজের মেয়েকে এগিয়ে দিয়ে আবারো পায়েশ নাড়াচাড়া করতে লাগলাম।
“আপনি গিয়ে দিয়ে আসবেন ভাবী? সকালে আমাকে যেই ধমক দিয়েছে তারপর আমি আর আজকে ভাই সাহেবের সামনে যাবো না। গেলে নির্ঘাত আমাকে আবার ধমক দিবে। তার থেকে ভালো আমি পায়েশ দেখি আপনি বরং চা দিয়ে আসেন।”
আরও গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েটার কথা শুনে কোমড়ে হাত দিয়ে তার দিকে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে মেয়েটা বোকা হাসি হাসলো। এই ভদ্রলোক সবসময় এদের ধমকের উপর রাখতে চাই। একটু কিছু হলেই ধমক দিবে। মেয়েটা যে যাবে না বুঝতে পেরে নিজেই চা নিয়ে উপরে উঠে গেলাম।
কিন্তু রুমে এসে কাউকে দেখতে পেলাম না। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে হয়তো শাওয়ার নিচ্ছে এই সুযোগে টি টেবিলে চায়ের কাপ রেখে আলমারি থেকে ভদ্রলোকের জামাকাপড় বের পিছন ফিরতেই উম্মুক্ত বুকের সাথে আমার বোচা নাকের ধাক্কা লাগলো। নাক ঢলে ভদ্রলোকের দিকে তাকাতেই শুকনো ঢুক গিলে নিলাম। ভেজা চুল বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে, আর সেই পানি নিহানের লোমহীন বুকে এসে বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে। বিন্দু বিন্দু জল কণা গুলো মুক্তর মতো ঠেকছে। পরনে শুধু একটা টাওয়াল।
” ছিঃ তুমি আমার ইজ্জত এভাবে লুটে নিচ্ছো? এই মুখ আমি কি ভাবে দেখাবো? এই মেয়ে তুমি আমার এতো বড় সর্বনাশ করতে পারলে? আমার স্ত্রী সন্তানের এখন কি হবে? কি ভাবে আমি তাদের কাছে গিয়ে আমার এই সর্বনাশের কথা বলব? হে আল্লাহ, তুমি বলে দাও আমি এখন কি করব?”
কথা গুলো বলেই নাটক করতে শুরু করলো। আর আমি বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম। লোকটা কি পরিমানে বদ হলে এমন নাটক করতে পারে আমি শুধু সেইটা দেখে যাচ্ছি।
” কি দিন কাল এলো রে বাবাহ তাই না বলুন! আগে মেয়েদের ইজ্জতের দিকে হাত বাড়ানো হতো এখন ছেলেদের ইজ্জতের ফালুদা করে দেওয়া হচ্ছে। যাই হোক আমি বরং আরেকটু আপনার ইজ্জত লুটে নেয়।”
কথাটা বলেই নিহানকে চোখ মেরে কাছে এগিয়ে গেলাম।
“হেই বয় ইউ নো! ইউ আর লুকিং সো হট। তোমার এই লোমহীন বুক, সিক্স প্যাক, তোমার ম্যাসেল, তোমার লিপস্ ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। ইউ নো বয় আই জাস্ট লাভ ইউর এ্যাবস্, এন্ড লিপস্। ওহে বেবি ইউ নিক আহ্! কাম বেবি আই এম ডাইং টু কিস্ ইউ। বেবি প্লিস কাম।”
কথা গুলো বলে বিছানায় ফেলে দিয়ে ঠোঁট, ম্যামেল ছুঁয়ে দিতে দিতে কথা গুলো বলছিলাম। এবার নিহান নিজেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
” বাহ্! আমার বউ যে এমন ফ্লাটিং করতে পারে আমার জানা ছিলো না।”
কোমড় চেপে ধরে কথা গুলো বললো নিহান। লোকটা চালাকি করতে বরাবর উস্তাদ। ভালো মানুষি করে কাছে নিবে তারপর আসল রূপ দেখাবে।
” যেখানে আমার হ্যান্ডসাম বর ফ্লাটিং স্কিল করে বসে আছে সাথে নাটক করতে পারে সেখানে আমি তাঁর সহধর্মিণী হয়ে যদি একটু না পারি তাহলে কি চলে বলুন?”
” তাইতো যেখানে আমি এতো রোমান্টিক সেখানে আমার বউ আনরোমান্টিক হলে এইটা কতটা খারাপ দেখায়।”
কথাটা বলে নিহান টুপ করে ঠোঁটে চুমু দিয়ে দিলো।। হঠাৎ করেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। নিহান তখনও আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। নিহানের বুকে থেকে হাত সরিয়ে সাড়া শরীর সুরসুরি দিতে লাগলাম। নিহান নিজেও দিতে লাগল।
” মিস্টার নিহান ভুলে যাবেন না আমি আপনারই সহধর্মিণী। আপনি যদি বনু ওল হন তাহলে আমিও ভাগা তেঁতুল।”
কথাটা বলেই নিহানের কোমড় থেকে টাওয়াল খুলে সোজা দৌড়ে দিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। পিছন ফিরে আর তাকালাম না। এইদিকে নিহান কি থেকে কি হলো কিছুই যেনো বোধগম্য হলো না। সব কিছু বুঝে উঠার আগেই যেনো সব কিছু হয়ে গেলো।
দুপুর তিনটে বেজে কুড়ি মিনিট। নিরাত্রিকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় বসে বসে কিছু এসাইনমেন্ট করছিলাম। ঐশী মেয়েটা একটু পর পর রুমের কাছে এসে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে যেটা আমার চোখের আড়ালে হলো না। তবুও আমি মেয়েটিকে কিছু না বলে নিজের কাজে মন দিলাম। কিন্তু নাহ্ আর সম্ভব হলো না ঐশীর জন্য। যতবার আমি পড়তে চাচ্ছি মেয়েটা ততবার উঁকি দিচ্ছে। এবার বিরক্ত হয়ে গেলাম।
“তুমি কি কিছু বলবে ঐশী? যদি কিছু বলতে চাও তাহলে রুমে এসে বলো নয়তো এভাবে উঁকি দিও না। আমি পড়াতে মন দিতে পারছি না।”
এক প্রকার বিরক্ত হয়ে ঐশীকে কথা গুলো বললাম। আমার কথা শুনে দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে গুটি গুটি পায়ে মাথা নিচু করে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো। আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কোনো কিছু না বলে এখানে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপামনি আমার একটু বাহিরে যাওয়ার ছিল। চাচীআম্মা ঘুমিয়ে আছেন বলে আপনার কাছে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি পড়ালেখা করছিলেন তাই রুমে আসার সাহস পাচ্ছিলুম না।”
আম্মা এই সময়ে ঘুমিয়ে আছেন শুনে কিছুটা অবাক হলাম। আম্মা এই সময়ে কখনো ঘুম আসেন না। হয়তো বই পড়ে নয়তো কাঁথা সেলাই করেন। নিজের অবসর সময় কাটাতেই মূলত বই এবং কাঁথা সেলাই করেন কিন্তু আজকে হঠাৎ ঘুম আসায় কিছুটা অবাক হলাম। কিন্তু সেই দিকে আর না মন দিলাম না। মানুষের কখন কি করতে ইচ্ছে হয় বুঝা দায়। প্রতিদিন তো সবার একই কাজ করতে ভালো লাগে না। কাজে ভিন্নতা মানুষ পছন্দ করে। হয়তো আম্মার নিজেরও এমন ইচ্ছে জেগেছে।
“তুমি এই সময়ে বাহিরে যেতে চাচ্ছো কেনো?”
আমার কথা শুনতেই ঐশীর চোখে মুখে নার্ভাসনেস দেখা দিলো। নজর এদিকে ওদিকে করতে লাগলো।
” আসলে আপামনি আমার এক খালা হাসপাতালে। আমি ছাড়া তো আমার খালার আর কেউ নাই। একটু খালারে দেখতে যামু আপামনি।”
কথাটা বলেই ঐশী কান্না করে দিলো। মেয়েটার যে খালা আছে সে-ই কথা আমার জানা ছিলো না। তার উপর আবার অসুস্থ।
“ঠিক আছে চলো আমিও তোমার সাথে যাচ্ছি। আমিও দেখে আসবোনি। আমাকে আগে বলো নি কেনো তোমার খালা অসুস্থ?”
“না! না আপামনি আপনার যেতে হবে না।”
মেয়েটির কথা শুনে আমার কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো। হঠাৎ করে এমন তাড়াহুড়ো করে না করলো কেনো? সন্দেহীন দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
“আসলে আপামনি চাচীআম্মা ঘুমিয়ে আছে আবার নিরাত্রিও ঘুমিয়ে আছে। বাবু যদি ঘুম থেকে উঠে কান্না করে। তার জন্য আপনাকে না করলাম।”
মেয়েটা কথা গুলো বলে কাঁচুমাচু মুখে করে দাঁড়িয়ে রইলো। সত্যি তো আম্মা ঘুমিয়ে আছে এর মাঝে যদি নিরাত্রি উঠে কান্না করে তখন? সব কিছু ভেবে আমি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর ঐশীর হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে দিলাম কিছু ফল কিনে নিয়ে যেতে।
বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে ঐশী। গায়ে দামি পোশাক। বাড়ি থেকে যেই পোশাক পড়ে বের হয়ে এসেছিল সেই পোশাক পরিবর্তন করে অন্য পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে সে। বাড়ি থেকে পড়ে আসা সুতি কাপড়ের জামা পরিবর্তন করে গায়ে জড়িয়েছে ওয়েস্টান পোশাক। এই ঐশীকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজের লোক হয়ে কাজ করে। তার পোশাকে বলে দিচ্ছে সে সাধারণ উঠে আসা পরিবারের সন্তান না।
বাস স্ট্যান্ডে বাস এসে থামলেও সেই বাসে না উঠে বারংবার হাতে থাকা দামী ঘড়িতে সময় দেখছে বারবার। যেনো কারো জন্য অপেক্ষা করছে সে। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হতেই কিছু বিড়বিড় করে আউড়াতে লাগলো ঐশী। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি এসে পৌঁছতেই তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বসলো ঐশী। ঐশী গাড়িতে উঠতেই গাড়িটি নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে গেলো। অপর দিকে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঐশীকে কেউ একজন পর্যবেক্ষণ করলো সে-ই কথা অজানাই থেকে গেলো।
“তোমাকে ঐ বাড়িতে কেউ সন্দেহ করেনি তো কোনো কিছু নিয়ে?”
গাড়ি চালাতে চালাতে কথা গুলো বললো ঐশীর পাশে বসে থাকা লোকটি। তার দৃষ্টি সামনের রাস্তার দিকে।
” না স্যার কেউ সন্দেহ করেনি তবে আজকে বের হয়ে আসার সময় তরী ম্যাডাম আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি কৌশলে এড়িয়ে এসেছি। স্যার নিহান কোনো সাধারণ মানুষ না স্যার। সে একজন বিজনেসম্যান হলেও রাতের আঁধারে সে মানুষ থেকে হিংস্র হয়ে ওঠে। নিহানের গেস্ট হাউসে একজনকে আটকে রাখা হয়েছে। কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিল তারা। লোকটা সে-ই কথা অস্বীকার করতেই তার পায়ে আঘাত করে সেখানে ফেলে রাখে। আর স্যার নিহান লোকটার সামনে একটা ফাইল দিয়েছিল। সে-ই ফাইল দেখে লোকটার চোখে মুখে আতংক বিরাজ করেছিলো।”
কথা গুলো বলে ঐশী চুপ করে গেলো। এবার অপেক্ষা পাশে থাকা ব্যক্তির পরের অর্ডার শোনার।
” গুড! তুমি নিহানের প্রতিটি পদক্ষেপ ফলো করবে। কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে না করছে আমাকে এ টু জেড সব ইনফরমেশন দিবে। আর এইটা আমি দেখে নিচ্ছি। তুমি এখন যেতে পারো। আর তোমাকে কি কি করতে হবে সব কিছু মনে আছে তো?”
অবেলায় এলে তুমি পর্ব ১১
লোকটির কথা শুনে ঐশী চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো যে তার সব কিছু মনে আছে।
” এইটা নিয়ে যাও। তরীর খাবারের সাথে প্রতিদিন মিশিয়ে দিবে। আর হ্যাঁ প্রতিদিন রাতে একটা করে মিশিয়ে দিবে এর বেশি না। এবার তুমি যেতে পারো।”
লোকটার কথা শেষ হতেই লোকটার হাতে থাকা জিনিস নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে নেমে আসে ঐশী।